আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ: জায়েদ খান
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের পর থেকেই অনেক দিন ধরেই আলোচনা–সমালোচনায় ছিল সংগঠনটি। বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নিপুণ আক্তার। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার নির্বাচন ইস্যু নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে। এর মধ্যে এবার নতুন করে আলোচনায় এলেন জায়েদ খান। তিনি এরই মধ্যে মিডিয়ার সমক্ষে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেন, অন্যায়ভাবে তাকে সদস্যপদ স্থগিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা অযৌক্তিক। হয়রানি করতে দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় তাঁকে মিথ্যা অভিযোগে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে জায়েদ খান জানান, ‘আমি গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ থেকে মুম্বাইতে ছিলাম। আমার বাসায় চিঠি যায় ২৪ তারিখে। দারোয়ানের কাছে ফেলে রেখে গেছে। আমি দেশে এসেছি গত ৬ মার্চ। তখন এসে জানলাম চিঠি এসেছিল। এর মধ্যে আবার চিঠির উত্তর দেওয়ার সময় চলে গেছে। আমার বাসায় কেউ ছিল না। ঘটনার কিছুই জানি না। এখন শুনি, আগামী রোববার মিটিং। শুনছি, সেদিন জায়েদ খানের সদস্যপদ বাতিলের আয়োজন করেছে। এটা কত বড় নোংরামি হতে পারে, ভাবা যায়! আমার প্রিয় সংগঠনকে কলুষিত করতে তাঁরা উঠেপড়ে লেগেছে। এগুলো শিল্পী হয়ে শিল্পীদের ছোট করা।’
গত ২২ ফেব্রুয়ারি নিপুণের স্বাক্ষরিত একটি কারণ দর্শানোর চিঠিতে বলা হয়, ‘বিগত কয়েক দিন যাবৎ আপনি (জায়েদ খান) বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল ও গণমাধ্যমে সমিতির একজন সদস্য ও সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তারের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেছেন, যা সমিতির সাধারণ সদস্য চলচ্চিত্রের মানুষ তথা সারা দেশের দর্শকদের নিকট শিল্পীদের এবং শিল্পী সমিতির ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করেছেন। যা সমিতিতে রক্ষিত আছে। এমন বক্তব্য সমিতির সদস্য হিসেবে কাম্য নয়।’ এই চিঠির উত্তর দিতে পারেননি জায়েদ। শিল্পী সমিতির একটি সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী চিঠির উত্তর দিতে হয়। কিন্তু জায়েদ উত্তর দেননি। আগামী বোববার তাঁর সদস্যপদ স্থগিত করা নিয়ে আলোচনা হবে।
জায়েদ মনে করেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁর সদস্যপদ বাতিল করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। কারণ, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতাদের শিল্পীদের নিয়ে চোখে পড়ার মতো কোনো কাজ নেই। জায়েদ খান বলেন, ‘শিল্পী সমিতির এখন একমাত্র কাজ জায়েদ খান আটকানো।
জায়েদ খান যেন সামনে নির্বাচন করতে না পারে, সে পথ বন্ধ করার মিশনে লেগেছে। জায়েদ খান তাদের একমাত্র ভয়। আমি কী করছি, কোথায় যাচ্ছি—সেই খবর তাদের কাছে আছে। কিন্তু সাংগঠনিক কোনো কাজে তাদের দেখবেন না। প্রয়াত শিল্পীদের সেভাবে স্মরণ করছে না তারা। এখন শুটিং কম হচ্ছে। অনেকে শিল্পীদের কাজ নেই। যেসব শিল্পীর পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন, সেগুলোতে নেই তারা। তারা যা কথা দিয়েছিল, তার কিছুই করতে দেখছি না। আসল কাজ বাদ দিয়ে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে লেগেছে। এখন নতুন করে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লেগেছে ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ। আমাকে সরানোই তাদের প্রধান কাজ। ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইকে আমি সম্মান করি। তাঁর সঙ্গে এগুলো যায় না। নিপুণ নির্বাচিত না। সে কারণে সে যা ইচ্ছা তা–ই করতে পারে। সে সমিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে জেনেশুনে। তাকেই অপকর্মে মানায়। এটা অন্য সবাইকে বুঝতে হবে।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জটিলতা ছিল। প্রথম দিকে নির্বাচনের ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হয়। পরে স্থগিত হয় সাধারণ সম্পাদকের পদ। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে যেতে হয় সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীদের।
অবশেষে গত নভেম্বরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। সেই সময় আপিল বিভাগের আদেশে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চিত্রনায়িকা নিপুণ দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর অন্যতম আইনজীবী।
জায়েদ খান জানিয়েছিলেন, ‘হাইকোর্টের আগের যে অর্ডার ছিল, সেটা স্টে (স্থগিত) করেছেন। তাদের (নিপুণের) আইনজীবী যে আপিল করেছিলেন, সেটা হাইকোর্ট গ্রহণ করেছেন। এখন আবার আপিলের শুনানি হবে। চূড়ান্ত রায় হয়ে গেছে, মামলা ডিসমিস, বিষয়টা এমন নয়। এখনো সুযোগ আছে। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় হয়নি। এখন লিভ টু আপিলের সুযোগ রয়েছে।’