ইতালিতে বৈধতা পেতে ১৫ হাজার বাংলাদেশির আবেদন
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
করোনায় বিপর্যস্ত ইতালিতে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের চলমান বৈধকরণের প্রক্রিয়ায় নিয়মিত বা বৈধতা পেতে ১৫ হাজার বাংলাদেশি আবেদন করেছেন। ১লা জুন থেকে দেশটির সরকার অভিবাসীদের বৈধতা দিতে কৃষি এবং গৃহস্থালি খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করছে। ১৫ই আগস্ট শনিবার সন্ধ্যা ৭টা অবধি আবেদন গ্রহণের সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে।
তবে ইতালির বাংলাদেশ মিশন বলছে, শনিবার ইতালিতে ছুটি থাকায় কার্যত শুক্রবারই আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়ার শেষদিন। ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যান শেয়ার করে রোম ও মিলানের বাংলাদেশ মিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা শুক্রবার বলেন, গত ৩১শে জুলাই পর্যন্ত দু’টি ক্যাটাগরিতে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার আবেদন পড়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকের আবেদন প্রায় ১৪ হাজার ৫০০। গড়ে তা ১০ শতাংশের মতো। তবে ১৫ই আগস্ট অবধি আরো কিছু আবেদন পড়বে।
সব মিলে তা দেড় লাখের চেয়ে একটু বেশি হতে পারে। শেষ সময় পর্যন্ত বাংলাদেশি আবেদনকারীর সংখ্যা গড়ে ১০ শতাংশ অর্থাৎ ১৫ হাজারের একটু বেশ হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন ইতালিতে থাকা বাংলাদেশি কূটনীতিকরা।
যারা আবেদন করেছেন: কৃষি ও গৃহকাজে নিযুক্তরা বৈধতার আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন। এর আগে যারা ইতালির ‘স্টে পারমিট’ বা ‘পেরমেচ্ছো দ্য সোজর্ন’ নবায়ন করতে পারেননি বা যারা রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন, তারাও এই আইনের আওতায় নতুনভাবে সাধারণ স্টে পারমিটের জন্য আবেদনের সুযোগ নিতে পারছেন। গৃহস্থালি কাজেই বেশি বাংলাদেশি অর্থাৎ ৩১শে জুলাই পর্যন্ত ১২ হাজার ৭৪৬ জন আবেদন করেছেন। আর কৃষিখাতে ওইদিন পর্যন্ত বাংলাদেশি নাগরিকের আবেদন পড়েছে ১ হাজার ৫৬৯টি। ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডাটা মতে, গৃহস্থালি কাজে সর্বোচ্চ আবেদনকারী হচ্ছেন ইউক্রেনের নাগরিকরা। জুলাই পর্যন্ত ১৪ হাজার ৩১১ জন ইউক্রেনিয়ান আবেদন করেছেন। এ খাতে শীর্ষ ১০ আবেদনকারীর তালিকায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে। তৃতীয় মরক্কো, দেশটির ১০ হাজার ৯৫৪ জন নাগরিক ইতালিতে গৃহস্থালি কাজকর্ম করার বিনিময়ে বৈধতা পেতে আবেদন করেছেন। কৃষিখাতে ১০ শীর্ষ আবেদনকারীর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এ খাতে আলবেনিয়ার ৩ হাজার ৮৩৭ জন নাগরিক আবেদন করেছেন। তারা প্রথম অবস্থানে। দ্বিতীয় ভারত, দেশটির ৩ হাজার ৩৫৮ জন বৈধতার আবেদন করেছেন। তৃতীয় মরক্কো, দেশটির ৩ হাজার ৩৪৮ জন নাগরিক আবেদন করেছেন। ইতালি সরকার প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়েছে, কৃষি ও গৃহ- এই দুই ধরনের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
কৃষিকাজের আওতায় পড়বে, খেত-খামার বা বাগান পরিচর্যা, গবাদিপশু পালন বা এই সংশ্লিষ্ট কাজ, মাছ ধরা বা প্রক্রিয়াজাত করা, কৃষি সরঞ্জাম ও কীটনাশক তৈরি বা সরবরাহের কাজ এবং সবজি, ফল, ফসল প্রক্রিয়াজাত করা।
গৃহস্থালি কাজের আওতায় পড়বে শিশু লালন-পালন, বয়স্কদের সেবা, প্রতিবন্ধীদের দেখভালসহ অন্যান্য গৃহকর্ম। কৃষি ও গৃহকাজের বাইরে যেসব অভিবাসীরা অতীতে বৈধ ছিলেন, অর্থাৎ যাদের স্বল্পমেয়াদি স্টে পারমিট ছিল, কিন্তু নবায়ন করতে পারেননি, তারাও নতুন করে স্টে পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া, যারা রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন বা আবেদন করেছেন, যাদের শিক্ষার জন্য স্টে পারমিট, মানবিক কারণে স্টে পারমিট বা মৌসুমি কাজের জন্য স্বল্পমেয়াদি স্টে পারমিট আছে, তারাও সাধারণ স্টে পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
শর্ত এবং অন্যান্য: কৃষি ও গৃহশ্রমিক হিসেবে বৈধতার জন্য আবেদন করতে হলে অবশ্যই একজন মালিকের অধীনে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে ওই মালিক সরকারি তহবিলে পাঁচশ’ ইউরো জমা দিয়ে তার অধীনে কাজ করা শ্রমিকের বৈধতার জন্য আবেদন করবেন।
যাদের অতীতে স্বল্পমেয়াদি স্টে পারমিট ছিল, তারা সরকারের তহবিলে ১৩০ ইউরো জমা দিয়ে নতুন করে আবেদন করবেন। ২০১৯ সালের ৩১শে অক্টোবরের আগে যাদের স্টে পারমিট বাতিল হয়েছে, তাদের প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের জন্য স্টে পারমিট দেয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে তারা যেকোনো একটি চাকরি খুঁজে নিতে পারলে আবার তাদের স্টে পারমিট নবায়ন করা হবে এবং দুই বছর মেয়াদি সাধারণ স্টে পারমিট দেয়া হবে। ইতালীয় নাগরিক, ইতালিতে বসবাসকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের নাগরিক এবং কমপক্ষে পাঁচ বছর মেয়াদি স্টে পারমিট বা স্থায়ী স্টে পারমিটধারী অভিবাসীরা কাজের মালিক হতে পারবেন। তবে, এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও নিয়মিত ট্যাক্স প্রদানের কাগজপত্র থাকতে হবে। যারা গৃহকাজের জন্য শ্রমিক রাখবে, তাদের বার্ষিক আয় কমপক্ষে ১৮ থেকে ২০ হাজার ইউরো হতে হবে। অর্থাৎ গৃহকর্মী রাখার মতো আর্থিক সঙ্গতি থাকতে হবে।
যারা বাদের খাতায়: ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কোনো মালিকের আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিশেষ করে যারা অবৈধ অভিবাসী ব্যবসা, যৌন ব্যবসা ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং নিম্ন আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত, তারা কাজের মালিক হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবেন না।
স্মরণ করা যায়, দীর্ঘ আট বছর পর ২০২০ সালে করোনা সংকটের মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণের সুযোগ দিয়েছে ইতালি সরকার। আগে সর্বশেষ ২০১২ সালে প্রায় অভিন্ন শর্তে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেয়া হয়েছিল।