চলিতেছে সার্কাসঃ কার্টেসি নান্নু এন্ড কোং
এ যেন অদ্ভুদ এক উটের পিঠে চড়ে এগুচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দল নির্বাচন রীতিমত হাসির খুরাক হয়ে ওঠেছে। কেবলমাত্র সমালোচনা এড়াতে গিয়ে নির্বাচকরা জনমতের উপর ভিত্তি করে অনেক সময় ক্রিকেটারদের দলে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশ নির্বাচকরা দল নির্বাচনে যে প্রতিনিয়ত ভুল করছেন তা বুঝতে বড় ধরণের ক্রিকেট বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন নেই। যেকেউ কমন সেন্স খাটালেই অসংগতিগুলো সহজেই বুঝতে পাড়বে।
একজন ক্রিকেটারকে দলে নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিলেক্টরদের একটা নির্দিষ্ট চিন্তাধারা থাকে। সাধারণত নির্বাচকরা জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করার আগে ক্রিকেটারদের আগের পারফরম্যান্স খুব সূক্ষভাবে মূল্যায়ন করেন। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ক্রিকেটারের অভিজ্ঞতা, পজিশন, স্কিল ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়। যদি একজন ব্যাটসম্যান ঘরোয়া ক্রিকেটে মিডিল অর্ডারে ব্যাট করে তাহলে তাকে যদি জাতীয় দলে ওপেনিং করতে বলা হয় তাহলে এটা তার প্রতি অন্যায় হবে। কিন্তু এটাই বাংলাদেশ জাতীয় দলের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা যেখানে ক্রিকাটারদের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করা হয়। যার ফলে ক্রিকেটাররা নিজেদের প্রতি আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেন।
নির্বাচকদের হজবড়ল দল নির্বাচন
পাকিস্তান সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে প্রথমে পারভেজ হোসেন ইমন,তৌহিদ হৃদয়,মাহামুদুল হাসান জয়দের প্রস্তুত করিয়েছে বিসিবি। কিন্তু মূল সিরিজে ঠিকই সাইফ হাসানকে হঠাৎ করে উড়িয়ে আনা হলো। সাইফ হাসান যে লংগার ভার্সন ক্রিকেট ভালো খেলেন এটা কোন অজানা কথা না। কিন্তু ঠিক কিসের ভিত্তিতে তাকে টি-টোয়েন্টিতে বিবেচনা করা হল এর সঠিক উত্তর নির্বাচকরা দিতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে সাইফ হাসান খারাপ করায় হুট করে শেষ ম্যাচের আগে পারভেজ হুসেন ইমনকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হল। যা নিশ্চিতভাবে সাইফ ও পারভেজ ইমন দুজনকেই তাদের সামর্থ্য সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছে। পারভেজ হোসেন ইমন বাংলাদেশ ক্রিকেটের আগামী দিনের সম্ভবনাময় ক্রিকেটার, তাই তাকে চলমান সার্কাসের অংশ না বানিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করাটাই ছিল বুদ্ধিমানের কাজ। জাতীয় দলে আসার পরেই যে একটা ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মানিয়ে নিবে এর কোন নিশ্চয়তা নেই। বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি না থাকার কারনে বাতিলের খাতায় যাওয়ার সম্ববনাই বেশি। এর আগে আমরা এই রকম অনেকবার ঘটতে দেখেছি।
অভিজ্ঞদের দল নির্বাচনের বিবেচনা থেকে বাইরে রাখা
পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে মাহামুদুল হাসান জয়কে দলে নেয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে জয় সম্ভবনাময় তরুন ক্রিকেটার। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে খেলোয়াড় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যেখানে অন্যদলগুলো যেখানে অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেয় সেখানে বাংলাদেশের সিলেক্টররা অভিজ্ঞতা মানদন্ড হিসেবে দেখেন না। ক্রিকেটের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ফরম্যাট হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট সুতরাং খুব স্বাভাবিকভাবেই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্রিকেটারদেরই ভালো করার সম্ভবনা বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে ঠিক উল্টো চিত্র ৩০ উপর যাদের বয়স তাদেরকে বিবেচনা করা হয়না। তরুনদের দলে সুযোগ দেয়া ভালো কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তরুনদের সুযোগ দেওয়ার জন্য সঠিক মঞ্চ হতে পারে।
একটা ক্রিকেটার একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে ভালো করছে সেটার উপর ভিত্তি করে তাকে অন্য ফরম্যাটে দলে বিবেচনা করা হচ্ছে। উদাহরণসরুপ পাকিস্তানের সাথে প্রথম টেস্ট ৮ উইকেটে হারার পর নির্বাচকরা ঢাকা টেস্টের দলে নাইম শেখকে অর্ন্তভুক্ত করেছেন, কিন্তু নাইম শেখকে মূলত টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট হিসিবে বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া তার ফার্স্টক্লাস ক্যারিয়ারও সাদামাটা। এখন পর্যন্ত ১৮টি ম্যাচ খেলে তার গড় ১৬ এর মত এবং তিনি তার সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে। এতে বুঝা যায় দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে সন্মানিত সিলেক্টরা কোন নির্দিষ্ট স্ট্যানার্ড মানেন না। নাইম শেখ যিনি নিজেকে তৈরি করছেন একজন টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট ওপেনার হিসিবে তাকে টেস্টের দলে অর্ন্তভুক্ত করা ঠিক কতটা যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত এই প্রশ্নটা থেকেই যায়। এটা বিছিন্ন ঘটনা হলে কথা ছিল প্রায় প্রত্যেক সিরিজে নির্বাচকরা হুটহাট করে ক্রিকেটারদের অর্ন্তভুক্ত করেন। তাছাড়া তারা তাদের দল নিয়ে যথেষ্ট আত্নবিশ্বাসী না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে দলের সাথে বাড়তি ক্রিকেটারদের যোগ করেন। কিন্তু প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তাদেরকে ব্যবহার করা হয়না। যার ফলে ক্রিকেটারদের মাইন্ডসেটে অনেক বড় ধাক্কা লাগে। তাদের ক্রিকেটীয় পরিকল্পনায় বড় আকারের ব্যাঘাত ঘটে।
তরুণদের নিয়ে ছেলেখেলা
এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যখনই তরুন ক্রিকেটাররা খারাপ করবে তখন নিজেদের পিঠ বাচাতে সিলেক্টররা তাদেরকেই বলির পাঠা বানাতে এক সেকেন্ড সময় নেননা নির্বাচকরা। কিন্তু জাতীয় দলে ঢুকার আগে তারা যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জ সর্ম্পকে পুরপুরি প্রস্তুত থাকতা তাহলে তাদের কাজটা অনেক সহজ হত। তাছাড়া আকবর আলীকে নির্বাচকরা পাকিস্তান সিরিজের জন্য দলে অন্তর্ভুক্ত করেন শুধুমাত্র ব্যাকআপ উইকেট কিপারের দোয়াই দিয়ে। অথচ তাকে যখন দলে যুক্ত করা হয় তিনি তখন লংগার ভার্সন ক্রিকেট খেলছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করছেন ইরফান শুকুর, টি-টোয়েন্টিতে বেশ কয়েকটি ভালো মানের ইংনিস খেলেছেন। কিন্তু তাদের চোখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য অপ্রস্তুত আকবর আলীকেই পড়ল।
এ থেকে বুঝা যায় নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা ছাড়াই সিলেকটররা ক্রিকেটারদের দলে নিচ্ছেন । যখনই তারা খারাপ করছে তখনই তাদেরকে দলের বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। ইয়াসির আলী রাব্বিকে কয়েকবার দলের সাথে রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে লিমিটেড ওভার ক্রিকেটে বাজিয়ে দেখার সাহস করতে পারেননি টিম ম্যানেজমেন্ট। তাকে যখন খেলানোই হবেনা তখন দলের সাথে ঠিক কোন যুক্তিতে রাখা হয়। বার-বার না খেলানোর ফলে তার আত্নবিশ্বাসে বড় ধাক্কা লাগবে এটাই খুব স্বাভাবিক।
শেষ কথা
যেকোনো বিভাগে উন্নতি করতে হলে পরিবর্তন অনাবশ্যক। বর্তমান প্রধান নির্বাচকসহ হাবিবুল বাশার ২০১৫ সাল থেকে দল নির্বাচন করছেন। কিন্তু এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বার্থে তাদের সময় এসেছে সরে দাড়ানোর। ক্রিকেটাররা যখন ব্যার্থ হচ্ছেন তখন তাদেরকে দল থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে। তাহলে সিলেকটারদের ক্ষেত্রে নিয়ম আলাদা হবে। তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনেক করেছেন কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বাচানোর জন্য এখন সময় এসেছে নুতুন চিন্তাধারার।