‘দাবি মোদের একটাই, দিরাই-শাল্লা রাস্তা চাই’
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
স্বাধীনতার ৫০ বছর চলছে। অথচ অবাক হলেও সত্যি, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা এখনো জেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন। দীর্ঘ পাঁচ দশকেও নির্মিত হয়নি উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী প্রধান সড়ক। এতে ভাটির এ জনপদের মানুষ অনেক ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
আজ শুক্রবার বিকেল সোয়া চারটায় সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। সিলেটে বসবাসরত দিরাই ও শাল্লা উপজেলাবাসীর উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক শ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁরা প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক দ্রুত নির্মাণের দাবি জানান। একই দাবিতে আজ বিকেলে সুনামগঞ্জ পৌর শহরে মানববন্ধন হয়েছে।
সিলেটে মানবববন্ধন চলাকালে এক সমাবেশ হয়। সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদের সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মৃন্ময় দাস। বক্তব্য দেন শাল্লার শাহীদ আলী পাবলিক পাইলট দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাশ রায়, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চৌধুরী, আইনজীবী সুব্রত দাশ, সহকারী অধ্যাপক জ্যোতিষ মজুমদার, পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক জৈন্তাপুর শাখার ব্যবস্থাপক সুমন কুমার দাস, খায়রুল বাশার, সুব্রত রায়, অসীম কুমার রায় প্রমুখ।
কর্মসূচিতে ভাটি বাংলা সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ, শাল্লা সোচ্চার নাগরিক ফোরাম, খালিয়াজুরি ফোরাম, দিরাই ছাত্রকল্যাণ পরিষদ, যাত্রী অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা একাত্মতা প্রকাশ করে অংশ নেন। এ সময় অনেকের হাতে ‘দাবি মোদের একটাই, দিরাই-শাল্লা রাস্তা চাই’, ‘আমাদের দুঃখের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার’, ‘পদ্মা সেতুর মতো নয়, বাঁচার জন্য রাস্তা চাই’ স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল।
সুনামগঞ্জে দিরাই উপজেলা থেকে শাল্লা উপজেলা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের দাবিতে শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জ শহরের আলফাত স্কয়ারে সুনামগঞ্জের শাল্লা সমিতি এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
এর আগে একই দাবিতে গত ২৫ মে শাল্লা উপজেলায় মানববন্ধন হয়। ১ জুন উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
সুনামগঞ্জে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দিরাই-শাল্লা সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি, এটি দুঃখজনক। হাওর–অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের শাল্লা যোগাযোগের ক্ষেত্রে এখন একটি অনুন্নত ও দুর্গম উপজেলা। সুনামগঞ্জ থেকে দিরাই উপজেলা পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ থাকলেও দিরাই থেকে শাল্লার সঙ্গে এখনো সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এলাকার প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের চেষ্টায় ২০১১ সালে দিরাই-শাল্লা ১৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ প্রকল্পের কিছু কাজ হলেও পরে সেই কাজও টেকেনি। অনেক সেতু ও কালভার্টের সংযোগ সড়ক নেই। কোথাও কোথাও হাওরের ঢেউয়ে সড়কের মাটি ভেসে গেছে। ফলে সড়ক যোগাযোগ আর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি।
মানববন্ধনে জানানো হয়, বর্ষায় নৌকা আর হেমন্তে দিরাই উপজেলা থেকে পায়ে হেঁটে বা ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে শাল্লায় যাতায়াত করতে হয় লোকজনকে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। এলাকার বর্তমান সাংসদ জয়া সেনগুপ্ত এ সড়ক নির্মাণের বিষয়ে একাধিকভার জাতীয় সংসদে কথা বলেছেন। সম্প্রতি এ সড়ক নির্মাণের জন্য আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হলেও তা অনুমোদিতই হয়নি। এ প্রকল্প দ্রুত অনুমোদন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দিরাই-শাল্লা সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মাসুক আলম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সোয়েব চৌধুরী, আইনজীবী আরুনাভ দাশ, খোরশেদ আহমদ, নূর আলম, চাকরিজীবী তাপস দাশ প্রমুখ। এ কর্মসূচিতে সুনামগঞ্জ শহরে বসবাসরত শাল্লা ও দিরাই উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ অংশ নেন।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেছেন, দিরাই-শাল্লা সড়ক নির্মাণের একটি নতুন প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে দেওয়া আছে। গত ১৭ মে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল এ প্রকল্প এলাকা পরির্দশন করে গেছেন। তাঁদের প্রতিবেদন দেওয়ার পরই এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।