‘দেশে ১৩ কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন’
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক অসচেতনতা দেখা যাচ্ছে। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। মাস্ক পকেটে নিয়ে ঘুরছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভ্যাকসিন আসার আগেই দেশের ৮০ ভাগ বা প্রায় ১৩ কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
গেল মঙ্গলবার (২২ জুন) দেশের একটি শীর্ষ স্থানীয় দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্য এসব কথা বলেছেন। শুক্রবার তাঁর সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মানুষ যেভাবে চলাফেরা করছে, তাতে ভ্যাকসিন আসার আগেই হয়তো ৮০ ভাগ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবে। এখন তো দৈনিক নমুনা পরীক্ষায় ২২-২৩ শতাংশ মানুষের করোনা পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। এর অর্থ হলো পরীক্ষা না হওয়া অনেক সংক্রমিত মানুষ সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিজের অজান্তেই রোগ ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া এখন তো অনেক আক্রান্তেরই উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছে না।
স্বাস্থ্যবিধি মানায় মানুষের অসচেতনতা বিষয়টি উল্লেখ করে ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের যত টেস্ট হওয়ার দরকার, সেটা হচ্ছে না। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে পারছি না। দুই মাস আগেও যত মানুষ মাস্ক পরে বের হতেন, এখন সেটাও দেখছি না। অনেকে মাস্ক নিয়ে ঘুরলেও তা থুঁতনিতে লাগিয়ে রাখছেন। এ নিয়ে বলতে গেলে উল্টো প্রশ্ন করছেন।
স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি আউনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সচেতনতামূলক প্রচারণার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। কিছু এলাকায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে, বেশিরভাগ এলাকাতেই নেই। লকডাউনের উদ্দেশ্য মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা, মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা।
এদিকে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের যে তথ্য জানানো হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, দেশে ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৯৪৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ২৬ হাজার ৬০৬ জনে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩৯ জন। এর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৬২১ জনে।
এর আগে বুধবার জানানো হয়েছিল, ২৪ ঘণ্টায় মারা যায় ৩৭ জন ও শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৪৬২ জন। বৃহস্পতিবার মৃত্যু বেড়েছে ২ জন ও শনাক্ত বেড়েছে ৫৫৪ জন।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) দুপুরে করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
বাংলাদেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড আছে ৫৩ জনের। সে তথ্য জানানো হয় ১৬ জুনের বুলেটিনে। আর সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড আছে ৪ হাজার ৮ জনের। এ তথ্য জানানো হয় ১৭ জুনের বুলেটিনে।
বুলেটিনে বরাবরের মতো করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান ডা. নাসিমা।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়িয়ে এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়। ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।