প্রয়াত সফল সংগঠক সুব্রত চক্রবর্তী সুজিত ও কিছু স্মৃতিচারণা

 

অরুণাভ পাল চৌধুরী মোহন
বিয়ানীবাজারের নয়াগ্রাম নিবাসী সফল সংগঠক সুব্রত চক্রবর্তী সুজিত। তাঁর সাথে আমার পিতা স্বর্গীয় মিহির কুমার পাল চৌধুরীর খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। প্রায়ই আসতেন বাড়ীতে। বাবা তাঁকে খুবই স্নেহ করতেন।

বাবার মৃত্যুর পর ২০১১ খ্রি. থেকে তাঁর সাথে আমার সাংগঠনিক ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। পঞ্চখণ্ড রামকৃষ্ণ সেবাসমিতির সাধারণ সম্পাদক হন তিনি এবং আমি হই সহ সম্পাদক। তখন সেবাশ্রমের মিটিং বা পূজানুষ্ঠান, সবকিছুই আমার সাথে পরামর্শ করে করতেন।

২০১৪ সালে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখায় তাঁকে সভাপতি এবং আমাকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করা হয়। এরপর ২০১৮ সালে আবারও আমরা একই পদে মনোনীত হই। এরই মধ্যে ২০১৯ সালে পঞ্চখণ্ড রামকৃষ্ণ সেবাসমিতির সভাপতি পদে তাঁকে এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আমাকে মনোনীত করা হয়। পূজা উদযাপন পরিষদ, বিয়ানীবাজার উপজেলা এবং পঞ্চখণ্ড রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের বিভিন্ন ধরণের কাজ তাঁর মাধ্যমে সম্পাদন করি। সময়ের পথ পরিক্রমায় কত স্মৃতি, কত ছবি, কত আমন্ত্রণ পত্র তৈরি হয়েছে আমাদের দুজনের নামে!

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখাকে বর্তমান গতিশীল অবস্থায় আনার পিছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। আর, পঞ্চখণ্ড রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের কথা নাই বা বললাম। সেবাশ্রমের প্রতিটি ধূলিকণা তাঁর কথা বলবে। রামকৃষ্ণ মিশন বলতেই অন্ধ ছিলেন। নিবেদিতভাবে কাজ করে গেছেন সেবাশ্রমের উন্নয়নে।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন সৎ, পরোপকারী ও সরল প্রকৃতির ব্যক্তি। আমার জানা মতে, কেউ তাঁর কাছে এসেছে আর তিনি তাঁকে না বলেছেন, এমনটা কখনো ঘটে নি। যথাসম্ভব সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।

আমাকে প্রচণ্ড বিশ্বাস ও স্নেহ করতেন। যেকোন বিষয়ে বললে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে চলে আসতেন। মহামারী করোনার সময় পূজা উদযাপন পরিষদ এবং পঞ্চখণ্ড রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের নামে সাড়ে তিনশত মানুষকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এই বিতরণ কার্যক্রমের মূল কারিগর ছিলেন প্রিয় সুজিত দা।

বর্তমান পঞ্চখণ্ড রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের এতো উন্নয়নে তাঁর ভূমিকাই বেশি। শ্রীশ্রী বাসুদেব মন্দিরের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সময় মামলার আসামীও হয়েছিলেন।

পঞ্চখণ্ড রামকৃষ্ণ সেবাসমিতির দায়িত্ব নেওয়ার পর আশ্রম সংশ্লিষ্ট কেউ মারা গেলে তাঁর স্মরণে কিছু করার উদ্যোগ নেই। তখন সুজিত দা প্রায়ই আমাকে বলতেন, “মোহন এটা ভালো কাজ। কিন্তু আমার জীবনে একটাই দুঃখ থেকে গেলো। অনেক চেষ্টা করেও স্যারের ( প্রয়াত মিহির কুমার পাল চৌধুরী) জন্য সেই সময় সেবাশ্রম থেকে কিছুই করতে পারলাম না।”

সুজিত দা, আপনি সকলের আপদে বিপদে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বটবৃক্ষের মতো। আমার হার্ট অ্যাটাক ও পা ভাঙ্গার সময় যে আন্তরিকতা দেখেছি, তা ভুলার নয়। কিন্তু, আপনার জন্য কোন কিছুই করতে পারলাম না।

২০০৬ সালে শ্রীশ্রী বাসুদেব’র গীতাজয়ন্তীর সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে যেভাবে বাবার পাশে থেকে উৎসবকে সাফল্যমণ্ডিত করেছিলেন। ঠিক একই ভাবে ২০১৬ তে অনুষ্ঠিত হীরক জয়ন্তী উৎসবেও আমাকে পাশে থেকে সহযোগিতা ও সাহস দিয়ে উৎসবকে সফল করেছিলেন।

খুব অসুস্থ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য যেদিন ভারত যান। সেদিন যাওয়ার পূর্বে পঞ্চখণ্ড রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম প্রাঙ্গণে এসে বললেন, আরো ২টি সোফার চেয়ার, ২ টি হাতওয়ালা চেয়ার এবং সেক্রেটারি টেবিল তৈরির জন্য। ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসার পূর্বেই এগুলো তৈরি করা হয়। দেশে আসার পর এগুলো দেখে খুব খুশি হন।

রাত এখন প্রায় দুটো বাজে। এতোক্ষণ স্মৃতিচারণায় ডুবে ছিলাম সদ্যপ্রয়াত সফল সংগঠক সুজিত দা কে নিয়ে। জানি, পাতার পর পাতা লিখলেও তাঁকে নিয়ে লেখা শেষ হবে না।

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। রাতের শেষ দিকে যখন খবর পেলাম, সুজিত দা আর নেই। তখন যেন থমকে দাঁড়িয়েছিলো আমার পৃথিবী! কিছুতেই এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, দাদা কে আর কোনকিছুতেই পাবো না!

ভালো থেকো দাদা, ওপারে। অশ্রুসিক্ত নয়নে আমাদের হৃদয় উৎসারিত শ্রদ্ধা নিও।

লেখক পরিচিতি :
সভাপতি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখা।
সাধারণ সম্পাদক, পঞ্চখণ্ড রামকৃষ্ণ সেবাসমিতি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *