ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানিয়ে নায়ক সিলেটি হামজা
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
২০১৫-১৬ মৌসুমে সবাইকে অবাক করে দিয়ে লেস্টার সিটি যখন লিগ শিরোপা জিতে নিল, ড্রেসিংরুমে সতীর্থদের সঙ্গে সে আনন্দ ভাগ করে নেন হামজা চৌধুরী। তবে লেস্টারের সেই শিরোপা জয়ে সরাসরি কোনো অবদান ছিল না বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারের। এরপর লেস্টারের অর্জনের ডালিটা শূন্যই ছিল। পরে হামজা দলের অন্যতম অংশ হলেও লেস্টারের হয়ে সরাসরি কোনো শিরোপা না জেতার সে অপূর্ণতা তাঁর ছিলই। সে অপূর্ণতাই গত রাতে ঘুচিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণ। ওয়েম্বলিতে গড়েছেন ইতিহাস।
চেলসিকে ১-০ গোলে হারিয়ে এফএ কাপের শিরোপা জিতে নিয়েছে লেস্টার সিটি। গোল করেছেন দলের বেলজিয়ান মিডফিল্ডার ইউরি তিয়েলেমানস। মূল একাদশে না থাকলেও ম্যাচের শেষদিকে ৮২ মিনিটে স্প্যানিশ আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার আয়োজে পেরেজের জায়গায় মাঠে নামেন হামজা। ইংল্যান্ডের তো বটেই, এফএ কাপকে গোটা বিশ্বেরই প্রাচীনতম ফুটবলীয় প্রতিযোগিতা মানা হয়। সে টুর্নামেন্ট বাংলাদেশি কিংবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কেউ জিতবেন, এত দিন অবিশ্বাস্য বলে মনে হতো। হামজার কল্যাণে এখন বাংলাদেশিদের সে স্বপ্নও বাস্তব। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এফএ কাপের স্বাদ পেলেন হামজা। তবে মিনিট দশেক মাঠে থাকা হামজা মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন ম্যাচ শেষে উদ্যাপনের সময়।
দলের মুসলিম সতীর্থ ফরাসি ডিফেন্ডার ওয়েসলি ফোফানার সঙ্গে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে নিয়ে ম্যাচের পর গোটা ওয়েম্বলি প্রদক্ষিণ করেছেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটার ওপর ইসরায়েলিদের হামলার প্রতিবাদ এভাবেই জানিয়েছেন দুজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে সেই ছবি আর ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। হামজার সে ছবি এক চোখ, দুই চোখ হতে হতে পৌঁছেছে বিশ্বখ্যাত ইংলিশ রক ব্যান্ড ‘পিঙ্ক ফ্লয়েড’-এর কিংবদন্তি গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট রজার ওয়াটার্সের চোখে। হামজার ছবি পোস্ট করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি।
হামজার ছবি পোস্ট করা একজনের টুইট রি-টুইট করে ওয়াটার্স লিখেছেন, ‘হামজা চৌধুরী, আমার নায়ক তুমি। এগিয়ে যাও ফক্সেস (লেস্টারের ডাকনাম)! আগামী শনিবার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাঁটু গেড়ে বোসো। রজারের পক্ষ থেকে ভালোবাসা।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশিদের উল্লাসও ছিল চোখে পড়ার মতো। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক তারকা শাহরিয়ার নাফীসই যেমন হামজার কৃতিত্বে গর্বিত হয়ে লিখেছেন, ‘হামজা চৌধুরীকে অভিনন্দন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এফএ কাপ জেতার জন্য। লেস্টার সিটিকেও অভিনন্দন। বাংলাদেশের জন্য গর্বের একমুহূর্ত। অন্তত আমি গর্বিত।’
হামজার জন্ম ইংল্যান্ডে। তবে বাঙালি পরিবারে জন্ম হওয়ার সুবাদে বাংলার আলো-বাতাস তাঁর চেনাই বলা চলে। মা রাফিয়া বাংলাদেশি। বাংলাদেশে হবিগঞ্জের বাহুবল থানার স্নানঘাট গ্রামে তাঁর নানা বাড়ি। ছয় মাস বয়স থেকে পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে যাতায়াত শুরু। বাংলাদেশে এসেছেন প্রায় ২০ বার। সর্বশেষ এসেছিলেন প্রায় ছয় বছর আগে। এর আগে ইংল্যান্ডের জার্সিতে খেলেছেন অনূর্ধ্ব– ২১ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে।