রোমানীয়া পাঠানোর নামে প্রতারনাকারী সেই আমিন গ্রেপ্তার
রোমানিয়া পাঠানোর নামে প্রায় ৩০০ জনের কাছ থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ায় অভিযোগে সিলেটের আমিন রহমান ট্র্যাভেলসের সত্ত্বাধিকারী আমিন রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের দক্ষিন সুরমা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে কতোয়ালি থানা পুলিশ। সুনামগঞ্জের ছাতকের বাসিন্দা আমিন নগরের উপশহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, বিদেশ গমনেচ্ছুদের টাকা আত্মসাত করে আমিন দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা আগে থেকেই সব বিমানবন্দরকে সতর্ক করে দেই। ফলে তিনি পালাতে না পেরে আজ ঢাকা থেকে সিলেটে ফিরে আসছিলেন। এসময় দক্ষিম সুরমা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এর আগে গত রোববার আমিন রহমান ও তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মানবপ্রাচার আইনে মামলা করেন ফখরুল ইসলাম নামের এক ভূক্তভোগি।
জানা যায়, সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ হক সুপার মার্কেটে অবস্থিত ‘আমিন রহমান ট্রাভেলস’ নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক আমিন রহমান রোমানিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে লোকজনের কাছ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়ে যান।
ভূক্তভোগীরা জানান, ৯০ দিনের মধ্যে রোমানিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় ‘আমিন রহমান ট্রাভেলস’। ওই বিজ্ঞাপন দেখে তারা হক সুপার মার্কেটস্থ ট্রাভেলসে যোগাযোগ করেন। তখন ট্রাভেলসের মালিক আমিনুর রহমান জানান, রোমানিয়ায় যেতে হলে ৬ লাখ টাকা লাগবে। প্রথমে বুকিং মানি হিসেবে ৫০ হাজার টাকা ও ওয়ার্কপারমিট আসার পর দিতে হবে আরও ৫০ হাজার টাকা। বাকি ৫ লাখ দিতে হবে ভিসা হওয়ার পর। আমিনের কথামতো রোমানিয়ায় যেতে আগ্রহীরা তার সাথে স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি করে টাকা দেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রোমানিয়ায় ফ্লাইট দেয়া শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন বিকেল ৪টা থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেন তিনি। পরে অনেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের পাসপোর্টে লাগানো ভিসাও ছিল জাল। এছাড়া অনেককে ভিসা হওয়ার কথা বললেও তাদেরকে পাসপোর্ট ফেরত দেননি আমিন।
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গোটারগ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন জানান, চুক্তি অনুযায়ী ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা তিনি আমিনের হাতে তুলে দেন। তাকে ওয়ার্কপারমিটের কাগজ দেখিয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তিও করেন আমিন। আগামী ৩ মার্চ তার ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তার পরিচিত একজনের মাধ্যমে ভারতের রোমানিয়া এম্বেসিতে ভিসার কপি পাঠান। তখন এম্বেসি থেকে জানানো হয়- ওই ভিসা নকল।
রুহুল আমিন আরও জানান, এ ব্যাপারে আমিনের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে নল২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আমিনের মোবাইল বন্ধ পাচ্ছেন।
মৌলভীবাজারের রাজনগরের মাহবুবুর রহমান মঞ্জু নামের এক প্রতারিত যুবক জানান, ঢাকা থেকে তার ফ্লাইট ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি। এজন্য তিনি আগের দিন ঢাকায় যান। কিন্তু বিকেল ৪টা থেকে আমিনের মোবাইল বন্ধ পান। তখন তিনি বুঝতে পারেন টাকা নিয়ে আমিন পালিয়ে গেছে। পরে হতাশ হয়ে সিলেট ফিরে আসেন।
মঞ্জু জানান, তিনি বাড়ির জায়গা বিক্রি করে আমিনকে টাকা দিয়েছেন রোমানিয়া যাওয়ার জন্য।
গত শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আমিন রহমান ট্রাভেলসের সামনে বিক্ষোভ করেন প্রতারিতরা। এরপর রোববার থেকে বন্ধ রয়েছে আমিন রহমান ট্র্যাভেলস।