শুধু ধর্ষণ নয়, কাটাছেঁড়া মৃতদেহের সঙ্গে সেলফি তুলতো মুন্না
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে থাকা মৃত নারীদের ধর্ষণের জঘন্যতম অপরাধের অভিযোগ উঠেছে মুন্না ভগত (২০) নামে এক ডোম সহকারীর বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে ওই যুবককে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে মুন্নার কুকীর্তির নাটকীয় সব ঘটনা।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ডোম রজত কুমার লালের ভাগনে মুন্না ভগত। তিনি মামার সঙ্গেই ওই হাসপাতালের মর্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করত। দুই-তিন বছর ধরে মুন্না মর্গে থাকা মৃত নারীদের ধর্ষণ করে আসছিল। এ অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) তাকে আটক করে সিআইডি।
যেভাবে অনুসন্ধানের শুরু
১০ নভেম্বর সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের বিশ্লেষকরা নড়েচড়ে বসেন। ‘কোডেক্স’ নামের যে সফটওয়্যারে ডাটা বিশ্লেষণ করা হয় সেটি সংকেত দেয় যে ৫টি মৃতদেহে এক ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। পাঁচ ভিক্টিমই কিশোরী। তাদের বয়স যথাক্রমে- ১১, ১৩, ১৪, ১৬ এবং ১৭ বছর। সবগুলাোই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা। ৫টি আত্মহত্যার ৪টি মিরপুর এবং ১টি ঘটেছে মোহাম্মদপুর এলাকায়। ২টি ঘটেছে ২০১৯ সালের মার্চ ও অক্টোবর মাসে। বাকি তিনটির একটি এ বছরের মার্চ ও ২টি আগস্ট মাসে ঘটেছে। সময়, এলাকা, বয়স ও লিঙ্গ একই ধরনের হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে সিআইডির ধারণা হয় ভিক্টিমরা কোনও সিরিয়াল কিলারের শিকার।
হাইকোর্টের ঐতিহাসিক নির্দেশনা
২০১৫ সালে হাইকোর্ট এক উপজাতি নারীর অপমৃত্যু মামলার রায়ে এক ঐতিহাসিক নির্দেশ দেন। তাতে বলা হয়, কোনও নারীর অপমৃত্যু হলে, তাদের যৌনাঙ্গ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করতে হবে। দেখতে হবে অপমৃত্যুর আগে কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কিনা। তারপর থেকে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব আদালতের নির্দেশ মেনে আসছে।
সিরিয়াল কিলারের খোঁজে
সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, শিগগির ওই সিরিয়াল কিলার আরও হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে এমন আশঙ্কা নিয়ে তদন্তে নামেন তারা। তারা মোহোম্মদপুর ও কাফরুল থানায় হওয়া ৫টি অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। তাতে তারা জানতে পারেন, ৫টি মামলার ভিক্টিমের সুরতহালে কোনও ধরনের জোরজবরদস্তির আলামত পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তে প্রতিটি ঘটনাকে আত্মহত্যা বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেক ভিক্টিম দরজা লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ৩টি ঘটনায় স্বজনদের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। সব মিলিয়ে সিআইডির কর্মকর্তারা সিদ্ধান্তে আসেন তাদের প্রাথমিক ধারণা ভুল।
সন্দেহ লাশকাটা ঘরকে ঘিরে
সিআইডির ওই কর্মকর্তা জানান, আবারো বিশ্লেষণের একপর্যায়ে তারা দেখেন ৫ কিশোরীরই ময়নাতদন্ত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে। এরপর তাদের সন্দেহ দানা বাধে মর্গকে ঘিরে। তাদের মনে হয় ময়নাতদন্তের কোনও একসময়ে ওই কিশোরীরা বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়েছেন।
মুন্নাকে ধরতে সিআইডির অভিনয়
অনুসন্ধানে নেমে সিআইডি জানতে পারে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গের মূল ডোম রজত কুমার। তাকে সহায়তা করে আরও ৫-৬ জন। তার মধ্যে রজতের ভাগনে মুন্না ভগত রাতে মর্গের পাশেই একটি কক্ষে থাকে। মুন্নাকেই সন্দেহ হয় সিআইডির। গুমের শিকার হওয়া এক যুবকের স্বজন সেজে মুন্নার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন সিআইডির দুই কর্মকর্তা। তাদের একজন জানান, বেশ কয়েক দিন লাগাতার তারা মুন্নাকে ফলো করতে থাকেন। রাতে মুন্নাই থাকে এটি নিশ্চিত হতে তারা রাত ১টা বা ২টায়ও মর্গে যান। ছবি দেখিয়ে জানতে চেয়েছেন এই চেহারার কোনও লাশ মর্গে এসেছে কিনা। সম্পর্ক গাঢ় হলে, কৌশলে মুন্নার পান করা সিগারেটের ফিল্টার সংগ্রহ করেন তারা। ফিল্টার থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএর সঙ্গে মিলে যায় ওই পাঁচ কিশোরীর দেহে পাওয়া ডিএনএর।
রাত জেগে প্রেমিকার সঙ্গে ফোনালাপের পর ধর্ষণ
সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, এক আত্মীয় তরুণীর সঙ্গে মুন্নার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। ওই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক চলছে গেল দু’বছর ধরে। মৃত নারীদের সঙ্গে কেন মুন্না বিকৃত যৌন কাজে লিপ্ত হতো এমন প্রশ্নের উত্তরে সে জানিয়েছে, রাতে প্রেমিকার সঙ্গে প্রেমালাপের পর সে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না।
কাটাছেঁড়া করা নারী ও শিশু মৃতদেহের সঙ্গে সেলফি
মুন্না ভগত সোহরায়ার্দী হাসপাতালে নিয়োগ পাওয়া কোনও ডোম নয়। মামা রজত কুমারের সহকারী হিসেবে সে সেখানে কাজ করত। সিআইডির কর্মকর্তাদের মুন্না জানিয়েছে, গত চার বছরে ৩ হাজার মৃতদেহ কাঁটাছেড়া করেছে সে। তার মোবাইল ঘেটে মানসিক বিকৃতির আর প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। এক কর্মকর্তা জানান, মুন্না মৃতদেহের সঙ্গে সেলফি তুলত। এক্ষেত্রে তার পছন্দের তালিকার শুরুতে ছিল তরুণীদের লাশ। এ ছাড়া সে নির্ধারিত সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের মৃতদেহ তুলে ধরেও সেলফি তুলত। বুক চেড়া, পেট ফাঁড়া মৃতদেহের ভিডিও করত সে।
মুন্নার কাছে ভালো লাশ খারাপ লাশ
সাধারণ মানুষ যে কোনও মৃত দেহকেই সম্মান করে। তবে মুন্না সব মৃতদেহ সমান নজরে দেখতেন না। সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, মুন্নার কাছে কম বয়সী তরুণীদের মৃতদেহ হলো ‘ভালো’ লাশ। আর বয়স্ক নারী ও পুরুষদের লাশ হলো ‘খারাপ’ লাশ।