সিলেটে নতুন ফল্ট লাইন সক্রিয়, বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশংকা!
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
ভৌগোলিকভাবে সিলেটের অবস্থান এমন এক স্থানে, যার কাছাকাছি এলাকায় ভূগর্ভে রয়েছে ভয়ংকর বিপদের আভাস। বাংলাদেশে ভূমিকম্পের সবচেয়ে বিপজ্জনক দুটি উৎসের অন্যতম ‘ডাউকি ফল্টের’ কাছেই পড়েছে সিলেট।
সক্রিয় থাকা এ ফল্টের কারণে প্রায়ই কেঁপে ওঠে সিলেটের মাটি। সম্প্রতি যে হারে একের পর এক ভূমিকম্প হচ্ছে এখানে, তাতে বড় বিপদের শঙ্কা বেড়েছে কয়েক গুণ। এর মধ্যে নতুন বিপদ হতে পারে সিলেট শহর ও আশপাশ এলাকায় নতুন কোনো ফল্ট লাইনের সক্রিয় হয়ে ওঠা। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সিলেটে নিষ্ক্রিয় থাকা কোনো ফল্ট লাইনের সক্রিয় হওয়ার আভাস মিলতে পারে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ভূমিকম্প নিয়ে যৌথভাবে কাজ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত আর্থ অবজারভেটরি। এ আর্থ অবজারভেটরির তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে ‘বিপজ্জনক ভূকম্পনের’ দুটি প্রধান উৎস আছে। এর একটি ‘ডাউকি ফল্ট’। অন্যটি টেকনাফ-পার্বত্য পাহাড়ি অঞ্চল সাবডাকশন জোন। ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাউকি ফল্ট ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং হয়ে বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্তঘেঁষে ভুটান পর্যন্ত বিস্তৃত। ডাউকি ফল্টে ভূগর্ভের বিচ্যুতিতে বিপুল পরিমাণ শক্তি জমা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। ফলে যেকোনো সময় হতে পারে বড় আকারের ভূমিকম্প।
সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ মে একই দিনে সিলেটে পাঁচবার ভূমিকম্প হয়। ৩০ মে সকালেও কেঁপে ওঠে সিলেট। এসব ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ডাউকি ফল্টের কাছাকাছি থাকা জৈন্তাপুর উপজেলায়। কিন্তু গত সোমবার (৭ জুন) সন্ধ্যায় মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানে সিলেটে দুই দফায় যে ভূমিকম্প হয়েছে, সেগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল মহানগরীর দক্ষিণ সুরমার জালালপুর ইউনিয়নে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেটে ভূমিকম্প হলে উৎপত্তিস্থল সাধারণত ডাউকি ফল্টের আশপাশই হয়। কিন্তু এবার নতুন এক উৎপত্তিস্থল নতুন বিপদের শঙ্কায় ফেলছে। তাদের মতে, সিলেটে দীর্ঘকাল ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা কোনো ফল্ট লাইন এখন সক্রিয় হয়ে ওঠার শঙ্কা আছে। সেরকম কিছু হলে ভূমিকম্প সিলেটের জন্য আরও ভয়াবহ হয়ে ধরা দিতে পারে। তবে নতুন ফল্ট লাইনের সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে এর আগে কখনোই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল না দক্ষিণ সুরমা। মূলত ডাউকি ফল্টের কাছাকাছি এলাকাই উৎপত্তিস্থল থাকে। এবার নতুন উৎপত্তিস্থলের বিষয়টি নিয়ে বিশদ গবেষণা প্রয়োজন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, ‘ছোট ছোট ফল্ট অনেক জায়গায় থাকতে পারে, অনেক ফল্ট তো আবিষ্কারই হয়নি। ফেনীতে একটা ফল্ট লাইন দীর্ঘ সময় নিষ্ক্রিয় ছিল। কিন্তু বছর তিন-চার আগে পরীক্ষায় ধরা পড়ে, ওই ফল্ট লাইন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সিলেটেও সেরকম হতে পারে। নিষ্ক্রিয় থাকা কোনো ফল্ট লাইন সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিনা, তা পরীক্ষা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘নিশ্চিত না হলেও বড় শঙ্কা আছে, সিলেটে এখন এমন কিছু ফল্ট লাইন পাওয়া যাবে, যেগুলো আগে নিষ্ক্রিয় ছিল, কিন্তু এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে।’ হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠা ফল্ট লাইনের ‘ক্র্যাক’ যদি বাড়তে থাকে, তবে তা আতঙ্কের বিষয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।