হবিগঞ্জে চুরি হওয়ার ৬ ঘণ্টা পর নবজাতক উদ্ধার
হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের নবজাতক স্পেশাল কেয়ার ইউনিট থেকে চুরি যাওয়ার ৬ ঘন্টা পর এক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নবজাতক চুরির এই ঘটনাটি ঘটে। নবজাতক চুরির ঘটনা জানাজানি হলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ। এসময় নবজাতকের স্বজনেরা হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় ঘিরে রাখেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এদিকে প্রায় ছয় ঘণ্টা পর ওই নবজাতককে পাওয়া যায় একই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের অপর এক প্রসূতির কাছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, নবজাতক নিখোঁজ কিংবা চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি। স্পেশাল কেয়ার ইউনিটে শিশু বদল হয়েছিল। শিশুটি কীভাবে অন্য প্রসূতির কাছে গেল, ছয় ঘণ্টা তাকে কোথায় রাখা হয়েছিল, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের দেলোয়ার মিয়ার স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার (২৪) আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় হাসপাতালে এক পুত্রসন্তান প্রসব করেন। জন্মের পরই নবজাতকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে নবজাতককে স্পেশাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একব্যক্তি নিজেকে নবজাতকের বাবা পরিচয় দিয়ে মায়ের দুধ পানের কথা বলে তাকে সেখান থেকে নিয়ে যান। দায়িত্বরত নার্স সাম্মি আখতার যাচাই-বাছাই ছাড়াই শিশুটিকে ওই লোকের কাছে দিয়ে দেন।
এদিকে ঘণ্টাখানেক পর শিশুটির বাবা দেলোয়ার মিয়া স্পেশাল ওয়ার্ডে গিয়ে শিশুটিকে দেখতে চান। তখন নার্স জানান, শিশুটিকে তার বাবা দুধ খাওয়াতে মায়ের কাছে নিয়ে গেছেন। এ সময় দেলোয়ার তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে দেখেন শিশুটি পাশে নেই। পুনরায় তিনি নার্সের কাছে নবজাতককে কোথায় রাখা হয়েছে জানতে চান। এ নিয়ে নার্স ও শিশুটির অভিভাবকদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। পরে সবাই বুঝতে পারেন অন্য কেউ শিশুর বাবার পরিচয়ে শিশুটিকে নিয়ে গেছেন। পরে হইচই শুরু হয় পুরো হাসপাতালে। সময় যত বাড়তে থাকে হারানো নবজাতকের আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা জড়ো হতে থাকেন হাসপাতালে। সবাই রাগে-ক্ষোভে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
খবর পেয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকার ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা ঘটনাস্থলে আসেন।
এদিকে বেলা তিনটায় একই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের অপর এক প্রসূতির কাছে শিশুটিকে খুঁজে পান হাসপাতালের লোকজন।
এ সময় আকিকা বেগম নামের ওই নারী বলেন, তিনি একই দিন, একই সময় এক কন্যাশিশুর জন্ম দিয়েছেন। তার শিশুটিও ছিল স্পেশাল কেয়ার ইউনিটে। তার আত্মীয়স্বজন সেখান থেকে শিশুটিকে আনার সময় ভুলে ছেলেশিশুটি নিয়ে আসেন। পরে নিখোঁজ ছেলে শিশুটিকে তার মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুক আলী বলেন, ‘শিশুটি কী করে অপর মায়ের কাছে গেল, ছয় ঘণ্টা কোথায় ছিল, তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।’
তিনি জানান, যে নারীর কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকার বলেন, ‘শিশুটি চুরি হয়নি। ভুলে বদল হয়েছিল। পরে শিশু ওয়ার্ডের অপর এক মায়ের কাছে শিশুটিকে পাওয়া যায়। শিশুটিকে নিয়ে কোনো লুকোচুরির চেষ্টা হয়েছে কি না, তা তদন্তের দায়িত্ব পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।’