আতশি কাচের নিচে মাহামুদুল্লাহর অধিনায়কত্ব 

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে নাইম শেখ ও মুশফিকুর রহিমের অর্ধ-শতকের উপর ভিত্তি করে ১৭২ রানের লক্ষ্য দেয় শ্রীলংকাকে।  উইকেটের যেভাবে আচরন করছিল যেই আনুযায়ী প্রথম ইংনিস শেষে বাংলাদেশের রান ১০-১৫কম  করেছিল বলে মনে হচ্ছিল। যাহোক ১৭২ রান এশিয়ান কন্ডিশনে ব্যাটসম্যানদের জন্য মোটেও সহজ টার্গেট ছিল না।

বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকা ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাহামুদুল্লাহ রিয়াদের ৫টি ভুল সিদ্ধান্ত

১। শুধুমাত্র লেফট-রাইট কম্বিনেশনর অজুহাতে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাহামুদুল্লাহ নিজে ব্যাটিং না নেমে আফিফকে ব্যাট করতে পাঠানো আপাত দৃষ্টিতে ছোট ভুল হলেও ফাইনাল স্কোরলাইনে তফাৎ গড়েছে । মাহামুদুল্লাহ নিজে নামলে হয়ত বাংলাদেশ শেষের দিকে ১০-১২ রান বেশি করতে পারত।

২। পাওয়ার প্লেতে নাসুমকে দিয়ে দুই ওভার বল করানো একটা বিশাল ঝুঁকি ছিল। কারন শারজায় একদিকের বাউন্ডারি খুবই ছোট ছিল।

৩। মুস্তাফিজুর রহমানকে পাওয়ার প্লেতে ব্যবহার না করা মাহামুদল্লাহর একটি ভুল ছিল। তাছাড়া শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজের স্পেল শেষ না করা। 

৪। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পার্টটাইম বোলার দিয়ে বোলিং করানো।মাহামুদুল্লাহ ও আফিফ দুইজন মিলে ৩ অভারে ৩৬ রান দিয়েছনে যা শ্রীলংকার কাজটা সহজ করে দেয়। 

| সাকিব ২ উইকেট নেওয়ার পরও সাকিবের স্পেল শেষ না করা। ম্যাচের পরিস্থিতী বিবেচনায় ১৬তম ওভারের ভেতর সাকিবের স্পেল শেষ করা একটি উত্তম সিধান্ত হত। যার ফলে পরবর্তীতে শ্রীলংকান ব্যাটিং অর্ডারে আরও চাপ প্রয়োগ করা যেত।

সাইলেন্ট কিলারের গুড়ায় গন্ডোগোল

রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই কুশাল পেরেরার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে শ্রীলংকা। কিন্তু অন্যদিকে আসালংকা রকেট গতিতে ইংনিসের শুরু করেন। যদিও প্রথম ওভারে উইকেট নেন তাও নাসুমকে দিয়ে বল শুরু করাটা একটা ট্যাক্টিকেলি ভুল ডিসিশন ছিল। কারন তিনি বাছাই পর্বের ম্যাচগুলোতে খেলেননি তাই তাকে পাওয়ার প্লেতে দুই ওভার দেয়া একটা মারাত্মক ঝুঁকি ছিল। নাসুমের উপর চড়াও হোন আসালংকা, ম্যাচর দিত্বীয় ওভারে ২টি ছক্কা মেরে ইংনিসের শুরুর দিকে শ্রীলংকাকে মুমেন্টাম এনে দেন। নাসুম রান দিয়ে দেওয়ার খুব স্বাভাবিকভাবে তার আত্নবিশ্বাস কমে যায়। আর হয়তাবা সেজন্যই হয়ত নাসুমের বাকি ওভারগুলোকে পুষিয়ে দেয়ার জন্য কররার জন্য নিজেই বল হাতে তুলে নেন। কিন্তু কোন দিক থেকেই এটি দলের জন্য সঠিক ছিলনা।

আসালংকা ও নিসাংকার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের উপর ভিত্তি করে খুব ভাল একটা শুরু করে শ্রীলংকা। কিন্তু এক ওভারে সাকিব পাতুম নিসাংকা ও আভিস্কা ফার্নাদোসকে আউট করে বাংলাদেশকে বেশ ভালো ভাবে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন। তখনও প্রতি ওভারে দশের কাছাকাছি রানের দরকার ছিল।তবে ম্যাচের সবচেয়ে বড় ভুল করেন মাহামুদুল্লাহ নিজেকে ও আফিফকে বোলিং এনে। মূলত তাদের বাজে বোলিংই বাংলাদেশেকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। আফিফ ও মাহামুদুল্লাহ তিন ওভার বল করে ৩৬ রান দেন। তখনও সাকিবের দুই ওভার বাকি ছিল , সাকিব তার প্রথম দুই ওভারে ৫ রানে দুই উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে হয়তবা বোলিংয়ে আনেননি দুইজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রাজাপাস্কা ও আসালংকা ক্রিজে ছিলেন। কিন্তু এটা মানতে হবে সাকিব বাংলাদেশ দলের সেরা ক্রিকেটার তাই অবশ্যই বাজিটা তাকে নিয়ে খেলা উচিৎ ছিল মাহামুদল্লাহর।   তাছাড়া সাকিব তার প্রথম দুই ওভারেই দুই উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এবং ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন। তাই  শ্রীলংকান ব্যাটসম্যানরা সাকিবের বিপক্ষে রয়ে সইয়ে খেলার মতন যথেষ্ট কারন ছিল।  যার ফলে তাদের ওভার প্রতি রান রেট বেড়ে ১০ উপরে চলে যেতে পারত , পরবর্তীতে পেসারদের কাজটা আর সহজ হতে পারত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সাকিব শেষ পর্যন্ত তার ৪ ওভারের কৌটাই শেষ করতে পারেননি।

লিটন দাসের ক্যাচ মিসে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ

ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আসালংকা ও রাজাপাস্কার দুটি  সহজ ক্যাচ ছেড়ে লিটন দাস বাংলাদেশকে জয় থেকে অনেক দূরে নিয়ে যান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচের মহা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই রকম ক্যাচ ছাড়া কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এর পর আর শ্রীলংকাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রাজাপাস্কা ও আসালংকা রীতিমত বাংলাদেশী বোলারদের শাসন করেছেন। মাঠের ছোট বাউন্ডারীগুলো খুব চতুরতার সাথে ব্যাবহার করে শ্রীলংকাকে পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের বন্দরে।

শারজাহর একদিকের বাউন্ডারি খুবই ছোট থাকার কারনে মাহামুদুল্লাহর পার্টটাইম বোলার আনার সিদ্ধান্তটি ছিল ম্যাচের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় চূড়ান্ত একটি ভুল। যার মাশুল শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ম্যাচটি হেরে দিতে হয়। নাইম শেখ আউট হওয়ার পর আফিফ হোসেনকে কেবলমাত্র রাইট-লেফট কম্বিনেশনের দোয়াই দিয়ে ব্যাটিং পাঠানো ছোট হলেও ভুল ছিল। আগের ম্যাচে মাহামুদ্দুল্লাহ চমৎকার একটি ইংসিস খেলেন , অন্যদিকে আফিফ তার সেরা ফর্মে নেই। তাই অবশ্যই নাইম আউট হওয়ার পর মাহামুদ্দুল্লাহর ব্যাটিংয়ে নামা উচিৎ ছিল। মাহামুদুল্লাহ ৫ বলে ১০ রান করেছে অপরাজিত ছিলেন। তিনি যদি আরও ৫-৬টা বল বেশি খেলতে পারতেন তাহলে হয়তবা বাংলাদেশের ঝুলিতে আরও ১০-১২টা বেশি থাকতে পারত। যা বোলারদেরকে কিছুটাও হলে বেশি স্বস্তি দিত।

অধিনায়ক মাহামুদুল্লাহর ছন্দপতন

টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তার অধিনায়কত্বেই বাংলাদেশ ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে সিরিজ হারিয়েছে। অধিনায়ক হিসাবে একটা বাজে দিন কাটালেই কেউ খারাপ অধিনায়ক হয়ে যায় না। অধিনায়ক হিসিবে মাহামুদল্লাহ আগেও বুদ্ধিদীপ্ততার প্রমান রেখেছেন।

কিন্তু এদিন অধিনায়ক হিসিবে মাহামুদল্লাহ খুবই বাজে একটি দিন কাটিয়েছেন। যেখানে তার নেয়া গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কয়েকটি সিদ্ধান্ত দলের জয়ের পথে বাধা হয়ে দাড়িয়ছে।

অধিনায়ক মাহামুদুল্লাহ ও বোর্ড প্রেসিডেন্টের মধ্যে শীতল যুদ্ধ

গত কয়েকদিন যাবত বোর্ড প্রেসিডেন্ট ও অধিনায়ক মাহাদুল্লাহর মধ্যে শীতল কথার লাড়াই চলছিল। শ্রীলংকার সাথে ম্যাচের আগের দিনও পাপন সময় টিভিতে এসে মাহামুদল্লাহকে নিয়ে সমালোচনা করেন। এটাও হতে পারে বিষয়টা তার মধ্যে অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি করেছে। যদিও বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটি একটি কমন প্র্যাক্টিসের মত। বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাঁসান পাপন বরাবরই দলের বিভিন্ন দিক নিয়ে সমালোচনা করার জন্য মিডিয়াকে বেছে নেন। যদিও অন্য কোন ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে এই ধরণের কোন তৎপরতা দেখা যায়না ।

শেষ কথা

প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ায় কার্যতভাবে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে উঠতে হলে সুপার এইটের পরবর্তী সবগুলো ম্যাচ জিততে হবে। এর মধ্যে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মত বিশবমানের দলকে হারাতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে তাদের স্বপ্নযাত্রা ঠিক কতদূর নিয়ে যেতে পারবে তার উত্তর সময়ের হাতে তুলা থাকল।

Blog post by: Shibatus Bhattacharjee

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *