আবু জায়েদ রাহি ’দি আনলাকি ম্যান’
ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পরও আবু জায়েদ রাহী দলে ব্রাত্য
গত ৫ টেস্ট বাংলাদেশের হয়ে দেশ এবং দেশের বাইরে সবচেয়ে ধারাবাহিক বোলার ছিলেন আবু জায়েদ রাহি। টেস্টে তার বোলিং গড় ৩২.৪৬, যা দলে পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। এমনকি স্পিনাদের মধ্যে একমাত্র সাকিব ছাড়া অন্যান্যদের থেকে তার গড় ভালো। তাই শুধুমাত্র স্পিনিং উইকেটের দোয়াই দিয়ে ওয়েস্টইন্ডিজের বিপক্ষে ১ম টেস্টে একাদশে না রাখাটা কতটুকু যুক্তিসংগত সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান এবং ভারতের মত ভিন্ন কন্ডিশনে মানিয়ে নিয়ে সফলতা পেয়েছেন।ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পরও তাকে দল থেকে বাদ দেয়া তার আত্নবিশ্বাসের সাথে খেলা ছাড়া আর কিছু নয়।
দুই দিকে সুয়িং করানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বোলারা বরাবরই অপটু। কিন্তু আবু জায়েদ রাহি এই ব্যাপারে অন্যদের চেয়ে অনেকটাই ব্যাতিক্রম। তার বলে গতি অপেক্ষাকৃত কম থাকলেও দুইদিকে সুয়িং করাতে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে তার জুড়ি মেলা ভার। ঘরের মাটিতে বাংলাদেশ সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট খেলে এবং সেই সিরিজেও তিনি বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন। যদিও বাংলাদেশের পিচগুলো সবসময়ই স্পিনারদের পক্ষে কথা বলে থাকে।
নাইম হাসানকে বাদ দিয়ে তাকেই নেয়াটাই বরং বুদ্ধিমানের কাজ ছিল। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে উইকেট নিতে পারলে বোলারদের পেস সহায়ক কন্ডিশনে কাজ সহজ হয়ে যেত। কিন্তু না টিম ম্যানেজমেন্ট তো উলটা পথে হাটতেই বেশি অভ্যস্ত। দলে তিনজন নিয়মিত স্পিনার (সাকিব,মিরাজ ও তাইজুল) থাকা সত্তেও নাইম হাসানের অন্তর্ভুক্তি টিম ম্যানেজমেন্ট চিন্তাধারা কে প্রশ্নবিদ্ধ করে বৈকি। নিউজিল্যান্ড বা সাউথ আফ্রিকার মত বিরুদ্ধ কন্ডিশনে ভালো করার জন্য কার্যকরী পেস লাইনআপের বিকল্প নেই। পেসারদের একাদশে নিয়মিত না খেলালে হুট করে তাদের কাছ থেকে ভাল বোলিং প্রত্যাশা করা নেহাত বোকামি ছাড়া কিছুই না।
এব্যাপারে আকরাম খানকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে যে যুক্তিটা দিয়েছেন তা হজম করা কঠিন। তার ভাষ্য মতে আবু জায়েদ রাহি কে না নিয়ে মুস্তাফিজকে নেওয়ার কারন স্পিনিং উইকেট তার কাটার কার্যকর হবে এই যুক্তি। তার মানে দাড়াল নির্বাচকরা পেস বোলার নির্বাচন করছেন স্পিনের মানদন্ড দিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটে কাটার যে ততটাও পরীক্ষিত হাতিয়ার না তা কারোই অজানা না। লাইন, ল্যান্থ এবং সুয়িংই বরং টেস্ট ক্রিকেটে বোলারদের সফলতার প্রধান অস্ত্র।
আবু জায়েদ রাহি বরাবরই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে আসছেন, সেটা ওয়ানডে বা টেস্ট ক্রিকেট যেটাই হোক না কেন। ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে পাঁচ উইকেট পাওয়ার পরেও দলে আর ঠিক কি কারনে কোন জায়গা হয়নি এটি রহস্যই থেকে গেল। পাঁচ উইকেট পাওয়ার পর পরবর্তীতে দলে আর সুযোগ পাওয়ার নজির খুব কমই আছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
দুই দিকে বল সুয়িং করানোর সারথ্য থাকার কারনে তিনি ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বোলার হতে পারতেন। তা সত্তেও তাকে ওয়ানডে ক্রিকেটে পর্যাপ্ত সুযোগ না দেয়ার পেছনের যুক্তিটা ঠিক কি তা বলা মুশকিল।
দেশের বাইরে ভাল করতে হলে পেসারদের নিয়মিত করার বিকল্প নেই। এই মুহুর্তে দেশের মাটিতে তাদেরকে খেলিয়ে অভ্যস্ত করাটাই সরভাপেক্ষা যুক্তিযুক্ত কাজ হবে।