ইতালিতে ঢুকতে বসনিয়ার জঙ্গলে একদল বাংলাদেশি
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
মাথার উপরে নেই ছাদ, প্রচণ্ড শীত কাঁপনও ধরাচ্ছে শরীরে; এর মধ্যেই বসনিয়ার জঙ্গলে বসে আছেন কয়েকশ ব্যক্তি, তার মধ্যে অনেক বাংলাদেশিও রয়েছেন; যাদের উদ্দেশ্য ইউরোপের ইতালির মতো দেশগুলোতে ঢোকা।
মানব পাচারের শিকার হয়ে এই সপ্তাহে স্লোভেনিয়ায় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির আটকের খবরের মধ্যে বুধবার বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় বাংলাদেশিসহ কয়েকশ মানুষের অবস্থানের তথ্য দিয়েছে রয়টার্স।
ইউরোপে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে অভিবাসী হতে বিপুল সংখ্যক মানুষের চেষ্টা এবং ভূমধ্য সাগরে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচিত।
ইদানিং বসনিয়া-হার্জেগোভিনা হয়ে ক্রোয়েশিয়া অতিক্রম করে স্লোভেনিয়াও হয়ে উঠেছে ইউরোপে ঢোকার রুট। মধ্য ইউরোপের এই তিনটি দেশ পাশাপাশি এই দেশগুলো থেকে অড্রিয়াটিক সাগর পাড়ি দিলেই ইতালি।
বসনিয়ার জঙ্গলে যাদের অবস্থানের খবর রয়টার্স দিয়েছে, তাদের পরবর্তী গন্তব্য ক্রোয়েশিয়া বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে ভেলিকা ক্লাদুসা শহর সংলগ্ন বনে একটি পরিত্যক্ত কারখানা ভবনে তারা আশ্রয় নিয়ে আছে।
এই মানুষগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও পাকিস্তান, মরক্কো, আলজেরিয়ার নাগরিকরা রয়েছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
বুধবার সকালে রয়টার্সের সাংবাদিক অনেককে দেখেছেন আগুন ধরিয়ে শীত পোহাতে। সেই আগুনে রান্নার কাজও চলছিল।
“এখানে অনেক সমস্যা। পানি নাই, টয়লেট নাই, কোনো চিকিৎসার বন্দোবস্তও নাই,” বলেন বাংলাদেশি মোহাম্মদ আবুল।
তিন দশক আগে যুদ্ধের পর অভিবাসীদের স্বাগতই জানাচ্ছিল বসনিয়া; কিন্তু এখন তাদের বোঝা মনে করছে।
ইইউ তাদের অভিবাসন সংক্রান্ত নীতিমালা পরিবর্তন করে আরও কঠোর করছে বলে তাড়াহুড়ো করে ঢুকতে চাইছে অভিবাসন প্রত্যাশীরা।
অন্য দেশ থেকেও অভিবাসীরা বসনিয়া হয়ে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে ঢুকতে আসছে।
বসনিয়ার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তা আজুর স্লিভিচ রয়টার্সকে বলেন, “সার্বিয়া হয়ে দ্রিনা নদী পেরিয়ে এই অভিবাসীরা আসছে।”
এর বিপদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই নদীটির যখন-তখন উত্তাল হয়ে ওঠে। ফলে অনেক সময় নৌকা ডুবে যায়। অনেকে মারাও যায়।”
বসনিয়ার জঙ্গলে পরিত্যক্ত একটি ভবনে অবস্থান নিয়ে আছেন ইইউতে অভিবাসন প্রত্যাশীরা, তাদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশিও রয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
তারপরও অভিবাসন প্রত্যাশী কমে না, যা ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে ভিড় দেখলেই বোঝা যায়।
বসনিয়া সীমান্তের পরিত্যক্ত ভবনের সেই ভিড় থেকে ৫০ জন গত মঙ্গলবার রাতে ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে ঢুকতে রওনা হয়েছিল।
কীসের স্বপ্নে তারা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চলছেন, তা তাদের একজনের কথায়ই স্পষ্ট করে দেয়।
“ইতালি… শিগগিরই আসছি তোমার কাছে,” হর্ষধ্বনি দিয়ে বলছিলেন তিনি।