ইভ্যালির কার্যালয় বন্ধ, হটলাইনেও সাড়া মিলছে না
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
ইভ্যালির কার্যালয়ের সামনে গ্রাহক ও পাওনাদারদের ভিড়। বিধিনিষেধ শিথিলের পর তাঁদের যোগাযোগ করতে বলা হলেও গতকাল প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ছিল। রাজধানীর ধানমন্ডিতে। ছবি: প্রথম আলো
ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সঙ্গে একে একে সম্পর্ক ছিন্ন করছে পণ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট)। গত দুই দিনে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে, ইভ্যালির দেওয়া ভাউচারে তারা আর পণ্য সরবরাহ করবে না। কারণ, তারা ইভ্যালির কাছ থেকে পণ্যের দাম পাচ্ছে না।
রঙ বাংলাদেশের পর পোশাকের ব্র্যান্ড জেন্টল পার্ক, ট্রেন্ডস, আর্টিসানসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ভাউচারে পণ্য সরবরাহ না করার কথা তাদের গ্রাহকদের জানিয়েছে। এদিকে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বকেয়া টাকার জন্য ইভ্যালির কার্যালয়ে ভিড় করছে। পাশাপাশি পণ্য ও অর্থ ফেরত না পাওয়া গ্রাহকেরাও রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইভ্যালির কার্যালয়ে ভিড় শুরু করেছেন। তবে ইভ্যালির কার্যালয়টি বন্ধ রয়েছে। হটলাইন নম্বরেও ফোন করে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকেরা।
এদিকে ইভ্যালিসহ ১৪টি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে সিআইডি। এর মধ্যে ধামাকা নামের একটি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। পর্যায়ক্রমে অন্যগুলোর বিষয়েও একধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
রাজধানীর ধানমন্ডির সোবহানবাগ এলাকায় ইভ্যালির কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়টি বন্ধ। দুটি নোটিশ ঝুলছে। অবশ্য সেগুলোতে কারও স্বাক্ষর ও তারিখ নেই। নোটিশে বলা হয়েছে, ইভ্যালির সশরীর গ্রাহকসেবা প্রদান বন্ধ থাকবে। অনলাইন গ্রাহকসেবা ও পণ্য সরবরাহ চালু থাকবে। কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকারী একজন নিরাপত্তা প্রহরী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার বিধিনিষেধ শিথিল করলেও ইভ্যালির কোনো কর্মকর্তা অফিসে আসেননি। সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক গ্রাহক টাকা ও পণ্য না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে এসে ভিড় করছেন। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে তাঁদের ফিরতে হচ্ছে নিরাশ হয়ে।
তাঁদেরই একজন মো. নাজমুল হুদা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের বিভিন্ন সময়ে এসি, মোটরসাইকেল, বৈদ্যুতিক পাখাসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার পণ্যের ক্রয়াদেশ দিয়েছিলেন। পণ্য সরবরাহের সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো একটি পণ্যও পাননি। ৪৫ কার্যদিবস পার হওয়ার পর ইভ্যালির কার্যালয়ে ষষ্ঠবারের মতো এসেছেন নাজমুল হুদা। তাঁর অভিযোগ, এরই মধ্যে ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে কয়েক হাজার টাকা খরচ করেছেন। কোনো সমাধান পাচ্ছেন না।
ইভ্যালি কার্যালয়ে আসা গ্রাহকদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, তাঁরা হটলাইনে ফোন করেও কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। এমন অভিযোগের পর ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ারে (০৯৬৩৮১১১৬৬৬) ফোন করেন এই প্রতিবেদক। ৬ মিনিট অপেক্ষার পরও কাস্টমার কেয়ারের কারও কাছে কলটি দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কার্যালয় বন্ধ নেই। কলসেন্টার খোলা সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। পণ্য সরবরাহব্যবস্থাও চালু আছে। তবে করোনার কারণে কর্মীদের একটা অংশ বাসা থেকে কাজ করছেন।’ কল সেন্টারে ফোন করে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ হয়তো একটা নির্দিষ্ট সময়ে কাউকে পাননি। আর এটাকেই সাধারণ বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা অনুচিত।
সূত্রঃ প্রথম আলো