এসআইর স্ত্রী এএসপি, প্রশংসায় ভাসছেন নব-দম্পতি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পুলিশ কর্মকর্তা দম্পতির ছবি ভাইরাল হয়েছে। এখন তাদেরকে নিয়ে প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ। একটি ছবিতে সাধুবাদ জানিয়ে শত শত মন্তব্য করেছেন বহুজন। বৃহস্পতিবার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) উজ্জ্বল ঘোষ জিতু ও তার স্ত্রী পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) উর্মী দেবের ছবি নিজেদের ফেসবুকে পোস্ট দেন।
পোস্টে উজ্জ্বল ঘোষ জিতু লিখেছেন, ‘পুলিশিং পেশার ব্যাপারে যাদের একটু ধারণা আছে তারা বলতে পারবেন অবস্থানগত দিক থেকে আমার সহধর্মিনীর অবস্থান আমার থেকে কতটা উপরে। না, আমাদের বিয়ের পর আমাদের কারও চাকরি হয়নি। আমার আর আমার সহধর্মিনীর অবস্থানের এই আকাশ পাতাল পার্থক্যের তোয়াক্কা না করে এই দেবীতুল্য মানুষটা আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন।’
যখন অহরহ পোস্ট দেখি মেয়েরা লোভী হয়, মেয়েরা বিসিএস স্বামী খুঁজে পেলে সব ছাড়তে পারে, মেয়েরা টাকা আর অবস্থান ছাড়া আর কিছু বোঝে না, আমার তখন খুব হাসি পায়। মায়ের জাত নিয়ে কী আমাদের চিন্তাধারা তা ভেবে।’ ‘একজন বিসিএস কর্মকর্তা যে কিনা আমার মতো একজন সামান্য মানুষকে এতটা আপন করে নিয়েছেন তিনিও তো একজন মেয়ে।’
এসআই উজ্জ্বল ঘোষ জিতু ও তার স্ত্রী পুলিশের এএসপি উর্মী দেব দম্পতির বিয়ে হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। আগে থেকে নিজেদের মধ্যে জানাশোনা থাকলেও তাদের বিয়ে হয়েছে পারিবারিকভাবে।
এই বিষয়ে জিতু জানান, তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। বাবা ছিলেন পরিবহন ব্যবসায়ী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জিতুই বড়। উপ-পরিদর্শক পদে যোগ দিতে তিনি ট্রেনিং শুরু করেন ২০১৮ সালে ২৭ জানুয়ারিতে। পুলিশের ট্রেনিং শেষ করেন ২০১৯ সালে। এর আগে থেকেই পরিচয় ছিল উর্মী দেবের সঙ্গে।
২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি এসআই পদে উজ্জ্বল ঘোষের চাকরি হয়। এরই মধ্যে দুইজনের মাঝেমধ্যে আলাপ আলোচনা হয়। একপর্যায়ে একে অপরকে পছন্দ করেন। বিষয়টি যার যার পরিবারকে জানানো হয়। এক পর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা আলাপের পর ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়।
জিতু বলেন, ‘অন্যান্য পোস্টের মতো ফেসবুকে পোস্টটি দিয়েছিলাম। পোস্টটি এভাবে ভাইরাল হবে আমি বুঝতে পারিনি। তবে বিষয়টি মানুষ পজিটিভলি নিয়েছে। আমরা ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সুখী। আমার স্ত্রীও খুব ভালো মানুষ। তার সততার কোনো কমতি নেই। আমার মতো একজন নগন্য মানুষকে বিয়ে করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি আসলেই কতটা নির্লোভ ও নিরহংকার।’
এই বিষয়ে উজ্জ্বল ঘোষের নববধূ আখাউড়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) উর্মি দেব বলেন, ‘আমার বাবার বাড়ি চট্রগামে। আমার বাবা একজন আইনজীবী। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমিই বড়। বিসিএসের পর এএসপি পদে চাকরি জীবনের প্রথম পোস্টিং আখাউড়া সার্কেলেই। ছবিটি সে (স্বামী) আমার অফিসে এসে তুলেছিল। ছবির বিষয়ে আমার আত্মীয় স্বজন ও সহকর্মীরা ফোন করে জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর সঙ্গে চাকরিতে যোগদান করার পর পরিচয়। কর্মজীবন আর ব্যক্তিগত জীবন আলাদাভাবে চালাতে হয়৷ যেন একটির কারণে আরেকটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। একই পেশায় দুইজন থাকলে ভালো হয়, একজন আরেকজনেরটা সহজে বুঝতে পারেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে উর্মি দেব বলেন, আমরা যখন বিয়ে করি তখন দুজনই চাকরিজীবী। আমরা বুঝে শুনেই বিয়েতে সম্মত হয়েছি। তাই আমাদের কোনো সমস্যা হবে না বলে প্রত্যাশা করছি। তারপরও প্রতিটি দম্পতির ব্যক্তিগত কিছু সমস্যা হতে পারে। তখন দুজন আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করার চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
এএসপি উর্মি দেব বলেন, ‘কোনো একটি সম্পর্ক যখন পরিণতি পায়, তাহলে অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। আমাদের জীবন একটি, সব কিছু হিসাব-নিকাশ করে করা যায় না। বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র বিষয়গুলো পরিহার করতে হয়। শিক্ষিত মানুষ হয়ে দৃষ্টিভঙ্গি যদি না পাল্টাই, তাহলে কে পাল্টাবে? সবার আগে নিজের মনমানসিকতা বদল করতে হবে।’