কনের ইচ্ছায় মাত্র এক টাকা দেনমোহরে বিয়ের দৃষ্টান্ত!
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
এটি কোনো চলচ্চিত্রের ঘটনা নয়। ফরিদপুরে একটি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে এক টাকা দেনমোহরে। আজ শুক্রবার দুপুরে শহরের ঝিলটুলী মহল্লার মেজবান পার্টি সেন্টারে কনের দাবির মুখে এবং কনের পরিবারের প্রস্তাবে এক টাকার দেনমোহরে কাবিন সম্পন্ন হয়। এরপর সেখানে আয়োজিত হয় বিয়ে–পরবর্তী ভোজের।
কনে বিপাশা আজিজ (২৫) মাদারীপুরের সাহেবের চর মহল্লার বাসিন্দা আজিজুল হক ও নাসরিন সুলতানার একমাত্র মেয়ে। তবে পরিবারটি ফরিদপুর শহরের আলীপুর মহল্লায় বসবাস করে। বিপাশা ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা পদে কর্মরত। বর আশীকুজ্জামান চৌধুরী (৩০) ব্যবসা করেন। ফরিদপুর শহরের কুঠিবাড়ি কমলাপুর মহল্লার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান চৌধুরী ও তাহমিনা চৌধুরীর ছেলে তিনি।
এ বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কনে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন, তিনি যেহেতু আর্থিকভাবে সচ্ছল, তাই তাঁর বিয়ের কাবিনে দেনমোহর ধরা হবে এক টাকা। কিন্তু ওই বিয়ের অনুষ্ঠানের কাজি দেনমোহরের জায়গায় দুই লাখ টাকা লেখেন। এ ঘটনা জানার পর মেয়ের মা তাঁর মেয়ের সিদ্ধান্ত জানিয়ে এক টাকা দেনমোহর লেখান।
সাধারণত দেখা যায় কনেপক্ষই দর-কষাকষি করে কাবিনের সময় দেনমোহর বাড়িয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে এটি একটি ব্যতিক্রম ঘটনা। পাশাপাশি আর্থিকভাবে সচ্ছল এক নারীর আত্মমর্যাদা রক্ষার দৃষ্টান্তও বটে।
বিয়েতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের সামাজিক ফোরাম নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, সাধারণত দেখা যায় কনেপক্ষই দর-কষাকষি করে কাবিনের সময় দেনমোহর বাড়িয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে এটি একটি ব্যতিক্রম ঘটনা। পাশাপাশি আর্থিকভাবে সচ্ছল এক নারীর আত্মমর্যাদা রক্ষার দৃষ্টান্তও বটে।
আবেগের বশে মোহরানায় এক টাকা লেখা যেতে পারে। কিন্তু এটি মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। কেননা, নারী বর্তমানে সচ্ছল হতে পারেন, কিন্তু ভবিষ্যতে তিনি সচ্ছল না–ও থাকতে পারেন।
তবে এক টাকার দেনমোহরের দৃষ্টান্তকে সাধুবাদ জানাতে পারেননি নারী নেত্রী বেসরকারি আইনি সহায়তা প্রদান প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ফরিদপুরের সমন্বয়কারী শিপ্রা গোস্বামী। তিনি বলেন, মুসলিম বিয়ে একটি চুক্তি। মোহরানা নারীর হক। স্বামীর আর্থিক সংগতি ও নারীর সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে দেনমোহর নির্ধারিত হয়ে থাকে।
শিপ্রা গোস্বামী বলেন, মোহরানার ব্যাপারে আবেগের কোনো স্থান নেই। আবেগের বশে মোহরানায় এক টাকা লেখা যেতে পারে। কিন্তু এটি মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। কেননা, নারী বর্তমানে সচ্ছল হতে পারেন, কিন্তু ভবিষ্যতে তিনি সচ্ছল না–ও থাকতে পারেন।