কমলগঞ্জে ভাতাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী মা-মেয়ের মানবেতর জীবন!
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে স্বামীহারা প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা বিশ্ববতী দেববর্মা (৬৫) তার প্রতিবন্ধী মেয়ে শীলা দেববর্মাকে (১৩) নিয়ে অসহায় অবস্থায় অন্যের করুণায় দীর্ঘদিন ধরে জীবনযাপন করছেন। প্রতিবন্ধিতা আর দারিদ্রতার ভারে একেবারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন তিনি।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বটতল এলাকার হিড বাংলাদেশে থাকা শারীরিক প্রতিবন্ধী ষাটোর্ধ্ব বিশ্ববতী দেববর্মা ও তার একমাত্র প্রতিবন্ধী মেয়ে শীলাকে নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো আহার যোগাড়ের জন্য হাড্ডিসার দেহ নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গ্রামে গ্রামে ছুটে যেতে হয় প্রতিনিয়ত।
বিশ্ববতীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, স্বামীকে নিয়ে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার তেলিয়াপাড়ার পাহাড়ি এলাকা গরমছড়িতে বসবাস করতেন। প্রায় ২০ বছর পূর্বে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নে অবস্থিত যক্ষা ও কুষ্ঠ রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিড বাংলাদেশে আসেন চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসার সুবিধার্থে এখানেই থেকে যান। তাদের নিজের বসবাস করার জায়গা না থাকায় হিড বাংলাদেশের দয়ায় জরাজীর্ণ একটি ছাপড়া ঘরে তারা বসবাস করেন। কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববতী তার দুই হাত-পায়ের আঙুলসহ নাক হারিয়েছেন। এমতাবস্থায় কয়েকবছর পূর্বে স্বামী মনিন্দ্র দেববর্মা মারা যান। কুষ্ঠ রোগ বিশ্ববতীকে প্রতিবন্ধী করে তুলেছে। তিনি একমাত্র সন্তান আরেক প্রতিবন্ধীকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে জীবনযাপন করে চলেছেন।
অসহায় শারীরিক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা এই নারীর প্রতিনিয়ত পথ চলতে গিয়ে কখনও কখনও থমকে দাঁড়ায় তার জীবন। অথচ এই বয়সে এসেও তিনি বা তার মেয়ে কেউই পান না কোনো সরকারি ভাতা। প্রতিবন্ধী হওয়ায় কারণে কমলগঞ্জে ভোটার তালিকা প্রণয়নকালীন সময়ে বিশ্ববতী দেববর্মার নাম ভোট তালিকায় ওঠানো হয়নি।
তিনি বলেন, ‘এখন বয়স বেড়েছে। আগের মত শরীরে শক্তি না থাকায় পঙ্গু দুই পা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভিক্ষা করাও সম্ভব হয় না। এজন্য মাঝে মাঝে না খেয়েই দিন-রাত পার করতে হয়। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে বহুবার গিয়েছি একটি ভাতার কার্ডের জন্য। কিন্তু তাও কপালে জোটেনি।’
যক্ষা ও কুষ্ঠ রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিড বাংলাদেশ এর ব্যবস্থাপক নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববতী তার দুই হাত ও পায়ের আঙুলসহ নাক হারিয়েছে। চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পর তার যাওয়ার কোনো জায়গা না থাকায় সংস্থা তাদেরকে এখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কিংবা স্থানীয় চেয়ারম্যানের একটু সুনজর হয়তো ফিরিয়ে দিতে পারে অসহায় ষাটোর্ধ্ব শারীরিক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা মা ও তার একমাত্র মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ের স্বচ্ছলতা।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রানেশ চন্দ্র বর্মা জানান, এই বৃদ্ধা ও শিশুর কথা তারা জানতেন না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।