করোনা আক্রান্ত হয়ে চার ঘণ্টার ব্যবধানে পিতা-পুত্রের মৃত্যু
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
করোনায় আক্রান্ত হয়ে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাবা-ছেলে। কিছুটা সুস্থ বোধ করায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বাড়ি ফেরেন বাবা ইয়াকুব আলী (৭০)। আর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় একই সময়ে ছেলে আজগর আলীকে (৫৫) নেওয়া হয় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। কিন্তু বাড়ি ফিরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ইয়াকুব আলী। এর চার ঘণ্টা পরই রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছেলে আজগর আলীও মারা যান।
আজগর আলী ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার দনগাঁওয়ের গ্রামের বাসিন্দা। তিনি হরিপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও স্থানীয় শীতলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁদের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। চার ঘণ্টার ব্যবধানে বাবা-ছেলের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইয়াকুব আলী কয়েক দিন ধরে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গত ২৫ জুন তিনি হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে যান। উপসর্গ দেখে সেখানের চিকিৎসক তাঁর করোনা পরীক্ষা করতে পরামর্শ দেন। পরে স্বজনেরা ইয়াকুব আলীকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে নমুনা পরীক্ষায় তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
এদিকে করোনা উপসর্গ দেখা দিলে গত ৩০ জুন হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক আজগর আলীর নমুনা পরীক্ষা করেন। নমুনা পরীক্ষায় তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। শনাক্তের পর সেদিনই তাঁকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার ইয়াকুব আলী দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে এসেই রাত সাড়ে ৮টার দিতে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে ভর্তি থাকা আজগর আলীর অবস্থার অবনতি হলে গতকাল রাত ৮টার দিকে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। কিন্তু রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান। তবে আজগর আলী করোনা নেগেটিভ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন, না পজিটিভ অবস্থাতেই বাড়ি ফেরেন, তা জানা যায়নি।
আজগর আলীর খালাতো ভাই হরিপুর উপজেলার চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা এভাবে একই দিনে বাবা-ছেলেকে কেড়ে নেবে, তা ভাবতে পারছি না। তাঁদের মৃত্যুতে আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীসহ পরিচিত মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’
এদিকে ঠাকুরগাঁও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা) ২৭৬টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে নতুন করে ১২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৪৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এ সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলার কেউ মারা যাননি। এ পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৫০৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৪৫ জন। মারা গেছেন ৮৩ জন।
ঠাকুরগাঁও জেলা সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, জেলায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কিছুতেই কমছে না। এ অবস্থায় সবার স্বাস্থ্যবিধি মানায় আরও সচেতন হওয়া ও সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলা ছাড়া কোনো উপায় নেই।