করোনা আমাদের কতটা অমানুবিকতা শেখাল
বিয়ানীবাজারের ডাক:
চারিদিকে শুধু মৃত্যুর মিছিল। গত কয়েক মাস ধরে বিশ্বের কোন দেশ থেকে শান্তির কোন বার্তা বয়ে আসেনি। জন্মগতভাবে আমাদের মাঝে যে মানবিক গুনাবলি ছিল সেটা যেন দিনে দিনে লোভ পেয়েছে। করোনা ভাইরাস যেন আমাদেরকে বেশি নিষ্ঠুরতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। অসুস্থ মানুষের প্রতি আমাদের নিষ্ঠুরতা বেড়ে গেছে। কেউ অসুস্থ হলে তার কাছে যাওয়াও যেন পাপ। লকডাউন শব্দটি আমাদের আরো বেশি আত্নকেন্দ্রীক করে দিয়েছে। এই তো কিছুদিন আগে কেউ মারা গেলে সেখানে যেতে না পারলে নিজেকে অপরাধী মনে হতো। আর এখন মৃত্যু বাড়ি গেলেই যেন অপরাধী। কতটা বদলে গেছি আমরা।
কোন পারিবারে কেউ মারা গেলে প্রতিবেশিরা তাদের শাস্তনা দিত, পাশে থাকতো, দুর-দূরন্ত থেকে আগত অতিথি দের খবর নিত। জানাজা, দাফন-কাফনের দায়িত্ব ছিল প্রতিবেশিদের।
আর বর্তমানে করোনা কালে কেউ মারা গেলে তার কাছে যাওয়া যাবে না, ছোয়াঁ যাবে না, আক্রান্ত পরিবারটি যেন মহাপাপী। তাদের কে সান্তনা দেওয়ার মতো কেউ নেই। মারা গেলে তাকে জানাজা, দাফন-কাফন করার মতো মানুষ নেই।
শোকাহত পরিবারটির উপর লকডাউন শব্দটি জুড়ে দিয়ে তাকে সামাজিক ভাবে এক ঘরে করে রাখা হয়। আমি লকডাউনের বিপক্ষে নয়, তবে লকডাউনের নামে সামাজিক নিষ্ঠুরতার আচরণের বিপক্ষে।
যে ছেলেটি বাবার গলা জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসে না সেই বাবাকে ফেলে দিয়েছে সন্তান। করোনার ভয়ে স্ত্রী ছেড়ে গেছে স্বামীকে। অনেক স্বামীও ছেড়ে দিয়েছে স্ত্রীকে। অনেক সন্তান মাকে ফেলে দিয়েছে রাস্তা বা বনের ধারে। প্রশাসনের লোকজন তাদেরকে উদ্ধারও করেছে।
করোনার আমাদের কি শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে সে খুজতে হয়তো আমাদের অনেক সময় লেগে যাবে। কিন্তু করোনার কাছ থেকে আমারা কি শিক্ষা নিলাম সেটা নিতান্তই আমাদের নিজেদের ব্যাপার। এই মহামারী করোনা আমাদের যেমন অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে তেমনি নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। আমাদেরকে সামাজিক মুল্যেবোধও লোভ পেয়েছে অনেক খানি।