বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের টিকা নিতে হলে যেভাবে নিবন্ধন করতে হবে
কোভিড-১৯ এর টিকা নিতে নিবন্ধনের জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল আজ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে বাংলাদেশ সরকার।
সোমবার দুপুরে ‘সুরক্ষা’ নামের এই ওয়েবসাইটটি তৈরির পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে প্রযুক্তিটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে, তা তুলে ধরেছেন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, আইসিটি বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই অ্যাপলিকেশনটি তৈরি করেছে।
যারা ভ্যাক্সিন নিতে ইচ্ছুক তাদেরকে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। মোবাইলের মাধ্যমে যাতে সহজে এর ব্যবহার করা যায় তাই অ্যাপ তৈরির কাজো চলছে।
যেভাবে ওয়েবসাইটে নাম নিবন্ধন করবেন
https://www.surokkha.gov.bd/ নামের ওয়েবসাইটে টিকা নিতে ইচ্ছুকদের নাম নিবন্ধন করতে হবে।
সেখানে প্রথমে নিজের ব্যাক্তিগত তথ্য যেমন পেশা, পেশা বাছাই করার পরে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ দিতে হবে।বলা বাহাল্য বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগের প্রোগ্রামাররা এই ডাটাবেজটি তৈরি করেছেন।
বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ”এটি একটি ওয়েব অ্যাপলিকেশন। দেশের ন্যাশনাল ডাটা সেন্টারে এটি হোস্ট করা হয়েছে। ফলে যত মানুষ এটায় নিবন্ধন করতে আগ্রহী হবেন, সেই অনুপাতে ভবিষ্যতে এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাবে।”
তিনি জানিয়েছেন, এরপর মোবাইল ভার্সনটি প্রস্তুত করে রাখা হবে।যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাইবে, তখনি তাদের দেয়া হবে।
বাংলা ও ইংরেজি, উভয় ভাষায় এই ওয়েবসাইটে তথ্য পূরণ করা যাবে। ওয়েব অ্যাপলিকেশনে নিবন্ধন করতে হলে তাদের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে। নিবন্ধন করার সময় তার নাম, বয়স, পেশা, এনআইডি নম্বর, ঠিকানা (সিটি করপোরেশন/পৌরসভার ওয়ার্ড), যে কেন্দ্রে টিকা নিতে আগ্রহী – সেই কেন্দ্র নির্ধারণ করে দিতে হবে।
একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দেশের জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে এই ওয়েবসাইট যুক্ত থাকবে। ফলে যখন কেউ তার এনআইডির নম্বর প্রবেশ করবেন, সঙ্গে সঙ্গে তার নাম, পরিচয়, বয়স ইত্যাদি ডাটাবেজে চলে আসবে।তবে এজন্য কোনো স্ক্যান করা কপি বা ছবি দিতে হবে না। নিবন্ধনের জন্য কোনো খরচ বা ফি নেই।একটি এনআইডি নম্বর থেকে একবারই নিবন্ধন করা যাবে। যেকোনো ব্যক্তি তার কম্পিউটার ব্যবহার করে এই নিবন্ধন করতে পারবেন।
নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর একটি ভ্যাকসিন কার্ড আসবে। সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। টিকা নেয়ার সময় এই কার্ডটি দরকার হবে। মোবাইল নম্বরে যাবে এসএমএস নাম নিবন্ধন করার সময় একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে। নম্বরটি যাচাই করার জন্য একটি ওভার দ্য ফোন বা ওটিপি নম্বর আসবে। সেটা ওয়েবসাইটে দেয়ার পর নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এই মোবাইল নম্বরেই এসএমএস পাঠিয়ে টিকা দেয়ার সময় ও স্থান জানিয়ে দেয়া হবে। সেই নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়ে টিকা নিতে হবে। সে সময় নিবন্ধনের কার্ডটি দরকার হবে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি ফোন নম্বর ব্যবহার করে পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচ জন সদস্যের জন্য নিবন্ধন করা যাবে।
কীভাবে অগ্রাধিকার তালিকা নির্ধারণ করা হবে?
নিবন্ধন করার সময় পেশা নির্বাচনের একটি ঘর আসবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পেশা নির্বাচন করতে হবে।তবে অ্যাপলিকেশন নির্মাণের সঙ্গে সংযুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইত্যাদি সম্মুখ সারিতে কর্মরত ব্যক্তিদের তালিকা আলাদাভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই তালিকায় তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরও থাকছে।সেটাও ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।ফলে যখন কেউ নাম নিবন্ধন করবেন, সেই তালিকার সঙ্গে মিলে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকা নেয়ার অগ্রাধিকার তালিকায় চলে আসবেন। পাশাপাশি ওই ব্যক্তির ডায়াবেটিস, ক্যানসার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ বা হৃদরোগের মতো অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা আছে কি না, সেটা জানানোর একটি অপশন আসবে, যেখানে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ চিহ্নিত করে দিতে হবে।
কবে থেকে টিকা দেয়া শুরু হবে
স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, ২৭ জানুয়ারি বুধবার থেকে বাংলাদেশে টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথমে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালের কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেয়ার মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হবে। তবে সারা দেশে টিকার কার্যক্রম শুরু হবে আটই ফেব্রুয়ারি থেকে।
টিকা নেয়ার সার্টিফিকেট কিভাবে পাবেন?
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলছেন, এই সুরক্ষা অ্যাপলিকেশনের মাধ্যমে প্রত্যেকে টিকা সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পারবেন। সেই সঙ্গে টিকার দুটি ডোজ নেয়ার পর তিনি টিকা নেয়ার একটি সনদ এই ওয়েবসাইট থেকেই ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, অনলাইনে এভাবে নিবন্ধন করার মাধ্যমে বাংলাদেশে কতজন মানুষ টিকা পেয়েছেন, কোন শ্রেণি-পেশার মানুষ পাচ্ছেন, সকল তথ্য পাওয়া যাবে।