কামরানকে ‘স্মরণীয়’ করবেন আরিফ, তবে…
হঠাৎ করেই ঝড় ওঠলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। সিলেট সিটি করপোরেশন তথা নগর ভবনের সামনের পয়েন্টকে ‘কামরান চত্বর’ করার ‘ঘোষণা দিয়েছেন আরিফ’। এজন্য তাঁকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা। ফেসবুকের দেয়াল ভরে ওঠলো এরকম পোস্টে।
তবে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলছেন, তিনিও প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে ‘স্মরণীয় করে রাখতে চান’। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তাঁকে স্মরণীয় করে রাখা হবে, সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সকল কাউন্সিলরদের সাথে নিয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ৬৭ বছর বয়সে গেল রবিবার দিবাগত রাতে মারা যান। করোনাক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। পরদিন সোমবার তার মরদেহ সিলেটে এনে মানিক পীর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাহী সদস্য পদে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আর সিলেট সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচনে তিনি মেয়র হয়েছিলেন। পরের দফায়ও একই পদে কারাগার থেকে নির্বাচিত হন কামরান। নিজের জীবনের প্রায় দুই ভাগ সময়ই (৪১ বছর) তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাটিয়েছেন।
জানা গেছে, সিলেটে ব্যাপক জনপ্রিয় কামরানের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার বিষয়ে জোরালো দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। রাজনীতিবিদরা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও সেই দাবিতে সামিল হন। সবার দাবির সাথে দ্বিমত করেননি বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কামরানের স্মৃতি ধরে রাখতে ‘কিছু একটা করা হবে’ বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা যায়, কামরানের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েই তাঁর ছড়ারপাড়স্থ বাসায় ছুটে গিয়েছিলেন আরিফ। তিনি পরিবারের সদস্যদের সান্ত¦না প্রদান করেন। একইসাথে সাবেক মেয়র হিসেবে কামরানের মরদেহ সামান্য সময়ের জন্য হলেও নগর ভবনে নিয়ে সম্মান প্রদর্শনের দাবিও জানান আরিফ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সেখানে নেওয়া হয়নি কামরানের মরদেহ। পরে কামরানের জন্য স্মরণীয় কিছু করার ঘোষণা দেন আরিফ।
আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য। তা স্বত্ত্বেও রাজনৈতিক দ্বিমুখী আদর্শকে দূরে রেখে আওয়ামী লীগ নেতা কামরানের জন্য যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, তাতে সবার প্রশংসায় সিক্ত হন আরিফ।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কাল থেকে আরিফকে অভিনন্দন জানিয়ে ‘কামরান চত্বরের’ তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করেন অনেকেই। আরিফ নাকি সিটি করপোরেশনের সামনের পয়েন্টকে ‘কামরান চত্বর’ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এ বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘সিটি পয়েন্টকে কামরান চত্বর করার ঘোষণা আমি দেইনি।’
কামরানকে স্মরণীয় করে রাখা প্রসঙ্গে আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, ‘বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আজীবন জনসেবক ছিলেন। সিলেট নগরীর উন্নয়নে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কেউ দাবি জানানোর আগেই আমি কামরান ভাইয়ের স্মরণে কিছু একটা করার ঘোষণা দিয়েছি। সিটি করপোরেরশনের সভায় সকল কাউন্সিলরদের নিয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’
শুধু কামরানই নন, সিলেট পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আ ফ ম কামাল, দেওয়ান ফরিদ গাজী, সাইফুর রহমানের নামেও নগরীতে ‘কিছু একটা’ করা উচিত বলে মন্তব্য আরিফের। এ বিষয়ে সিসিক পরিষদের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন করতে চান তিনি।
এদিকে, সিটি পয়েন্টকে ‘কামরান চত্বর’ ঘোষণার নাগরিক দাবি প্রসঙ্গে মেয়র আরিফ বলেন, ‘জিন্দাবাজার থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্ত ও ডিভাইডারের কাজ চলছে। এই কাজ সম্পন্নের পর সিটি পয়েন্টের অস্তিত্ব থাকবে কিনা, এটা নিশ্চিত নয়। তাই এখনই এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দেয়া সম্ভব নয়।’
প্রসঙ্গত, ১৯৫৩ সালে জন্ম নেয়া বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯৭২ সালে তৎকালীন সিলেট পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। এরপর কমিশনার থেকে হন পৌরসভার চেয়ারম্যান। পৌর চেয়ারম্যান থেকে দু’বারের সিটি মেয়র।
২০১৩ সালে সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন তিনি। পরের নির্বাচনেও জয়ী হন আরিফ।
সূত্রঃ সিলেটভিউ২৪ডটকম