জুলাই মাসেই শুরু হচ্ছে স্বপ্নের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাজ!
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
নানা জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখল ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন আগামী জুলাইয়ে এ প্রকল্পের দৃশ্যমান কাজ শুরু হবে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা প্রায় ১৯ হাজার ৮৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা খরচে ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্প।
মঙ্গলবার সকালে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-সচিবরা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসিতে সভায় অংশ নেন।
একনেক সভা শেষে দুপুরে এনইসিতে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা খরচে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে সরকার দেবে ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ৯০ লাখ এবং এডিবি ঋণ দেবে ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, ঢাকা-সিলেট ফোরলেন কাঙ্ক্ষিত প্রকল্প। ২০১৫ সালে এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি হয়। নানা কারণে প্রকল্পটি দেরিতে হলেও একনেক সভায় উঠছে। প্রকল্পের ঋণ আসবে এডিবি থেকে বিষয়টি একেবারেই ফাইনাল। একনেকে অনুমোদনের পরেই এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি হবে।
মূল সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য আলাদা সার্ভিস লেন নির্মিত হবে। বাঁক সরলীকরণসহ অধিকমাত্রার ট্রাফিক বিবেচনায় এনে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগ নিশ্চিত করা হবে। শিল্প ও বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে এশিয়া হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের জোট ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) করিডোর, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) করিডোরসহ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে চারলেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
প্রকল্পের আওতায় আলাদা সার্ভিস লেনসহ সড়ক নির্মাণে অতিরিক্ত ৯৮৬ দশমিক ৪৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর জন্য মোট ব্যয় হবে চার হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণে কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ইউটিলিটিও স্থানান্তর করা হবে, নির্মাণ করা হবে ৩২১টি আরসিসি কালভার্ট। কালভার্টগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় এক হাজার ৩৮১ মিটার। ছোট-বড় ৭০টি ব্রিজসহ থাকবে। থাকবে পাঁচটি রেলওয়ে ওভারপাস।
উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ বিশেষ করে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান এবং চীনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
লেনবিশিষ্ট মহাসড়কের উভয়পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত করাসহ প্রকল্পের আওতায় ৬৬টি সেতু , ৩০৫টি কালভার্ট, ৭টি ফ্লাইওভার/ওভারপাস, ৬টি রেলওয়ে ওভারপাস থাকবে।
ঢাকা (কাঁচপুর) থেকে সিলেটের মোট দূরত্ব ২২৩ দশমিক ১২৮ কিমি। এর মধ্যে ১১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত। এর উন্নয়ন এলওসির আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং ২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ভৈরব ব্রিজ বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রস্তাবিত সড়কের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ২০৯ দশমিক ৩২৮ কিমি।