নভেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
অল্প কিছুদিন স্থিতিশীল থাকার পর ভারতে আবারও বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। মহারাষ্ট্রসহ দেশটির পেঁয়াজ উৎপাদনে এগিয়ে থাকা বিভিন্ন রাজ্যে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত এই প্রবণতা থাকবে বলে দেশটির ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম। নভেম্বরে খরিফ মৌসুমের (বর্ষাকালীন) নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে।
বর্তমানে দেশটিতে এই নিত্যপণ্যের দামের উর্ধমুখীতার জন্য সরবরাহ স্বল্পতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নভেম্বরের শুরুর দিকে দেশটিতে পেঁয়াজের নতুন ফলন বাজারে এলে দাম আবার কমতে শুরু করবে বলে সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে অতিবৃষ্টি মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটে পেঁয়াজের মজুদ ব্যবস্থাপনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এবার রবি মৌসুমে ভারতে আগেরবারের চেয়ে ২ লাখ হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে। ২০১৮-১৯-তে রবি মৌসুমে দেশটিতে ৭.৭০ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছিল সেখানে ২০১৯-২০-তে একই মৌসুমে ৯.৯০ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের প্রাচীন জেলা শহর নাসিকের লাসালগাঁও পাইকারি বাজারের তথ্য তুলে ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, গত মার্চেও ভারতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫৫ রুপি দরে (৪৫০০-৫৫০০ রুপি পার কুইন্টাল)। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সেসময় অতিবৃষ্টির কারণে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশসহ অধিক পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্যসমূহে বাজারের আসার উপযোগী ব্যাপক পরিমাণ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। তবে, মার্চেই নতুন ফলন আবার বাজারে এলে দাম কিছুটা কমতে শুরু করে।
মার্চে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় প্রতিকেজির দাম নেমে আসে ১৫ রুপির মধ্যে। এরপর জুলাইয়ে তা নেমে আসে সাড়ে ৭ রুপিতে। আবার আগস্ট থেকে দাম বাড়তে বাড়তে সেপ্টেম্বর এসে পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম দাঁড়ায় রুপিতে।
এই দাম বৃদ্ধির জন্য যে সরবরাহ সংকটকে দায়ী করা হচ্ছে তার জন্য আবার মজুদকালীন অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন নাসিকের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। তাদের যুক্তি, আগস্টে অতিবর্ষণের কারণে আর্দ্রতা বাড়ায় মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটে সংরক্ষিত পেঁয়াজের মান নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি একই কারণে গৃহস্থ পর্যায়েও রেখে দেয়া পেঁয়াজও নষ্ট হয়ে গেছে। এসময়ে ৮০-৮৫ ভাগেরই মান নষ্ট হয়ে গেছে আর একারণেই ভালো মানের পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে বলেও বাজার বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দিয়েছেন নাসিকের কমিশন এজেন্টরা।
আগস্টের ওই ভারীবর্ষণে নাসিকসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মাঠে থাকা ফলনেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমনটা উল্লেখ করে নাসিকের লাসালগাঁও পাইকারি বাজারের চেয়ারম্যান জয়দত্ত হলকারের আশঙ্কা নতুন পেঁয়াজও প্রত্যাশা মতো বাজারে পাওয়া যাবে না। তাতে দামের এই উর্ধমুখী প্রবণতা আরও বেশকিছু দিন মেনে নিতে হবে তাদের।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্য, বৃষ্টির কারণে পশ্চিমবঙ্গেও উৎপাদন ও সরবরাহে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অন্ধ্রপ্রদেশের পাইকারি বাজারেও কেজিতে ৫ রুপি করে দাম বেড়ে গত রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ রুপিতে।
অন্ধ্রপ্রদেশের বাজার বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে কলকাতাতেও। কলকাতার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগস্টের বৃষ্টির কারণে কর্নাটকেও পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগে যেখানে প্রতি দুই দিনে এক ট্রাক করে মাল পেতেন তারা সেখানে বর্তমানে ৫ দিনেও তা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের ফলন বিপর্যয় স্বাভাবিক সরবরাহ পেতে নাসিকের এর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে বলেও জানান তারা। আর এতেও প্রভাব পড়েছে দামে।
ইকোনমিক টাইমস বলছে, দাম স্থিতিশীল রাখতে এরই মধ্যে দেশটির জাতীয় কৃষি সমবায় বিপণন ফেডারেশন পেঁয়াজ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২০ সালের চাহিদা মাথায় রেখে ফেডারেশনটি ১ লাখ টন পেঁয়াজ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে এরই মধ্যে ৩৮ হাজার টন পেঁয়াজ সংগ্রহ করেছে বলে জানানো হয়েছে। এই ফেডারেশন আগেই নাসিক থেকে ৪০ হাজার টন পেঁয়াজ সংগ্রহ করেছে।