পাখির মাংসে সিলেট সিটির পাঁচ কাউন্সিলরের নৈশভোজ!
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরে অবাধে বন্যপাখি বিক্রি চলছে, চলছে পাখির মাংস দিয়ে রাতের খাবারও। শীত আসার পর থেকেই বন্যপাখি দিয়ে রাতের খাবার খেতে হরিপুরে ছুটছেন মানুষ। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরপরই দলবেঁধে পাখির মাংস খাওয়ার জন্য হরিপুরে যাচ্ছেন সিলেটের মানুষ।
বন্যপাখি শিকার বন্ধে পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের পরও জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজার সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে অবস্থিত তারু মিয়া হোটেল, পুরাতন ড্রাইভার হোটেল, বিসমিল্লাহ হোটেলসহ বেশ কয়টি রেস্টুরেন্টে অবাধে বিক্রি হয় বন্য ও অতিথি পাখি। অথচ এখানে নীরব বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।
সেখানে শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পাঁচ কাউন্সিলর জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরের একটি রেস্টুরেন্টে নৈশভোজে বন্যপাখির মাংস খেয়ে তার ভিডিও-স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। এরপরই ছবিগুলো ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সিটি কর্পোরেশনের পাঁচ কাউন্সিলর।
শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ১১টা ১০ মিনিটে আপলোডকৃত ২ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, তারা সবাই ডাহুক পাখির মাংস খেয়েছেন। সিলেট সিটির প্যানেল মেয়র ও ২৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস, ১১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রকিবুল ইসলাম ঝলক, ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান, ১৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল মুহিত জাবেদ ও ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজের সঙ্গে পারভেজ মাহমুদ অপু নামে সিলেটের এক ব্যবসায়ী এবং ভিডিও আপলোডকারী ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রায়হান আহমদ নৈশভোজে অংশ নেন।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী, কোনো পাখি বা পরিযায়ী পাখি বা মাংস ক্রয়-বিক্রয় অপরাধ। আইনে ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। আইনের তফসিল অনুযায়ী, দেশের স্থানীয় বন্যপাখি ধলাবুক ডাহুক নিষিদ্ধের তালিকায়।
এদিকে ভিডিওতে পাখি খাওয়ার দৃশ্য পরিষ্কার দেখা গেলেও পাঁচ কাউন্সিলর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে তাদের কাছে জানতে চাইলে দুইজন হাঁসের মাংস, একজন রাজহাঁসের মাংস, একজন খাসির মাংস, একজন মাছ এবং আরেকজন মুরগির মাংস খাওয়ার কথা জানান।
এদের মধ্যে কাউন্সিলর তারেক জানান, তারা হরিপুরের পুরান ড্রাইভার রেস্টুরেন্টে খেয়েছেন এবং সেখানে পাখি বিক্রি হতে দেখেছেন। তবে পাখির মাংস তারা খাননি।
রায়হান আহমদের কাছে মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন এবং পরে আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি মুছে ফেলেন। তবে একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে ভিডিওটির কপি এবং ফেসবুকে আপলোড করার স্ক্রিনশট সংরক্ষিত রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কেন হরিপুরের রেস্টুরেন্টগুলোতে পাখি বিক্রি বন্ধ হয় না তার উত্তর এই ভিডিওতেই খুঁজে পাওয়া যায়। যারা আইনের সঙ্গে জড়িত তারাই যদি এদের নিয়মিত ক্রেতা হন, তাহলে রেস্টুরেন্ট মালিকদের সচেতনতা কোনো কাজে দেবে না।
তিনি বলেন, এটি কেবল আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা না, বরং অসংবেদনশীলতা। বন বিভাগের উচিত এই ভিডিওর ওপর ভিত্তি করে অনতিবিলম্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া। আর কাউন্সিলরদের উচিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ক্ষমা চাওয়া, যেন অন্য কেউ আর সেখানে যেতে উদ্বুদ্ধ না হন।
বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করি। হরিপুরে পাখি বিক্রির বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, কাউন্সিলররা জনপ্রতিনিধি, তাদের অবশ্যই আইন মেনে চলা উচিত। তবে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। তারা যদি আইন অমান্য করে থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রঃ সময় নিউজ