পুত্রবধূর ছুরিকাঘাতে আহত শাশুড়ির মৃত্যু
চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
সাতকানিয়ায় পুত্রবধূর ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক শাশুড়ির মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম রোকেয়া বেগম (৫৪)। গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার মৈশামুড়াস্থ নিজ বাড়িতে ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা যান। শাশুড়িকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুত্রবধূ নাছমিন আকতারকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মৈশামুড়া মুন্দার পাড়ার মো. ইলিয়াছ চৌধুরীর পুত্র মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তিন বছর পূর্বে রাঙ্গুনিয়ার রাজনগর ইউনিয়নের সাতগরিয়া পাড়ার কবির আহমদের মেয়ে নাছমিন আকতারের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক সন্তান রয়েছে। এদিকে, নাছমিন আকতার বিয়ের পর থেকে তার খেয়াল খুশি মতো চলতেন। আর এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করলে শাশুড়ি ও পুত্রবধূর মধ্যে ঝগড়া হতো। এ বিষয়ে নাছমিনের বাবা-মাকে একাধিক বার বলা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তারা এসে মেয়েকে শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর কথা মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে যেতেন। শাশুড়ি এবং পুত্রবধূর মধ্যে সম্প্রতি পুনরায় ঝগড়া হলে বিষয়টি নাছমিনের বাবা-মাকে জাননো হয়। এরপর তারা এসে গত ১০ জুন নাছমিনকে তার বাবার বাড়িতে নিয়ে যান।
এদিকে, গত সোমবার সন্ধ্যায় পুত্রবধূ নাছমিন সবার অজান্তে রাঙ্গুনিয়া থেকে শ্বশুর বাড়িতে এসে শাশুড়িকে একা পেয়ে প্রথমে ঘরের গেইট ও দরজা বন্ধ করে দেন। এরপর বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দিয়ে নামাজরত অবস্থায় শাশুড়িকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ। একপর্যায়ে শাশুড়িকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এলাকার লোকজন নাছমিনকে আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে সাতকানিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নাছমিন আকতারকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান।
উপস্থিত লোকজন গুরুত্বর আহত রোকেয়া বেগমকে উদ্ধার করে প্রথমে কেরানীহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। চমেক হাসপাতাল থেকে গত বুধবার তাকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।
নিহতের পুত্র ও নাছমিনের স্বামী মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার স্ত্রী খুব বেশি উগ্র মেজাজের ছিল। সবসময় নিজের ইচ্ছামতো চলতো। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে আমার মায়ের সাথে ঝগড়ায় লেগে যেতো। ঘটনার দিন কাউকে কিছু না বলে আমার স্ত্রী তার বাবার বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে আসে। ওই সময় ঘরে আমরা কেউ ছিলাম না। সেই সুযোগে আমার স্ত্রী প্রথমে ঘরের গেইট ও দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে ঘরের বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দিয়ে নামাজরত অবস্থায় আমার মাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। তার ছুরিকাঘাতে আমার মায়ের মাথা, পেট, হাত ও পা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৩০-৩৫টি স্থানে ছুরিকাঘাত করে। একপর্যায়ে আমার মারা গেছে ভেবে ফেলে রেখে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে এলাকাবাসী তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। শুনেছি তার সাথে দুইজন পুরুষ লোক এসেছিল। তারা আমাদের ঘরে যায়নি, বাইরে ছিল। নাছমিনকে আটক করার পর তারা হয়তো পালিয়ে গেছে।’
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পুত্রবধূর ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাশুড়ির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এরই মধ্যে মামলা হায়েছে। ঘটনায় জড়িত পুত্রবধূকে এলাকার লোকজনের সহায়তায় পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছে। সেই এখন কারাগারে রয়েছে। তাকে আমরা ৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছি। রবিবার রিমান্ডের শুনানি হবে। আর দায়েরকৃত মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে।’