বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি কাপে নুতুনদের দাপট
বাংলাদেশ জাতীয় টিম টি-২০ ক্রিকেটে শুরু থেকেই সহজাত খেলা উপহার দিতে পারছেনা। যার অন্যতম প্রধান কারন পর্যাপ্ত আক্রমণাত্মক ক্রিকেটাদের অভাব।
যাহোক বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি কাপ বাংলাদেশের আশার পালে হাওয়া লাগিয়েছে বলা যায়। তৌহিদ হৃদয় , শরীফুলের মত তরুণ তুর্কিরা অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটের গণ্ডী পেরিয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার সাথে পাল্লা দিয়ে ভালো করার প্রত্যয় দেখাচ্ছেন।
নাজমুল হোসেন শান্তঃ
(৮ ম্যাচে ৩০১ রান , গড়ঃ ৩৭.৬২, স্ট্রাইক রেটঃ ১৫৬.৭৭)
নাজমুল হোসেন শান্তকে মনে করা হয় বাংলাদেশের ভবিষ্যত ক্রিকেটার। এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে এই ধারনার যথার্থতা প্রমান করেছেন। ৮ ম্যাচে ৩৭.৬২ গড়ে ১৫৬.৭৭ স্ট্রাইক রেটে ৩০১ রান করেছেন। যার মধ্যে একটি শতক ও দুইটি অর্ধ-শতক রয়েছে। যদিও তার দল সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি তারপরও তার ব্যক্তিগত নৈপুণ্য ছিল চোখে পড়ার মত।
মোহাম্মদ নাইম
(৮ ম্যাচে ২৪৩ রান , গড়ঃ ৩০.৩৭, স্ট্রাইক রেটঃ ১৩৪.০৫)
মোহাম্মদ নাইম আগেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে টি-টুয়েন্টিতে ৮১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে । যদিও মিডিল অর্ডারের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচটি জিততে পারেনি।
এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু টি-২০ টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে ৮ ম্যাচে ৩০.৩৭ গড়ে ২৪৩ রান করেছেন।যার মধ্যে বরিশালের বিপক্ষে নজরকাড়া একটি শতকও রয়েছে। ৭টি ছক্কা ও ৮ বাউন্ডারিতে সাজানো এই ইনিংসে তিনি তার সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছেন। উইকেটের সবদিকে শট খেলার সামর্থ্যের জন্য তিনি ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুস্থিত টি-২০ বিশ্বকাপ দলের বিবেচনায় বেশ ভালভাবে থাকবেন।
পারভেজ হোসেন ইমনঃ
(৮ ম্যাচে ২৩৩ রান , গড়ঃ ৩৩.২৮, স্ট্রাইক রেটঃ ১৩১.৬৩)
বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি কাপে পারভেজ হোসেনের ইমনের উত্থান অনেকটা নাটকীয়ভাবে হলেও তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে টি-২০তে শতক করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
তার এই অনবদ্য শতকের উপর ভিত্তি করে ফরচুন বরিশাল ২২১ রানের পাহাড়ের মত লক্ষ্য মাত্র ১৮.১ ওভারে অনায়াসে অতিক্রম করে। এই ইনিংসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে তার চার এবং ছয় মারার সক্ষমতা। ১০০ রানের এই ইনিংস তার স্ট্রাইক রেট ছিল ২৩৮.১০। তার এই ইংনিসটি ছিল সাতটি ছয় আর ৯টি চারে সাজানো। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ৫৩ রানে সাজ ঘরে ফিরে যাওয়ার পর আরেক তরুণ ব্যাটসম্যান আফিফ হাসানকে সাথে নিয়ে খুবই দক্ষতার সহিত দলকে পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের বন্দরে।
শহিদুল হোসেন
(৭ ম্যাচে ১৩ উইকেট , গড়ঃ ১৩.২৩, ইকোনমিঃ ৭.৫৩)
বঙ্গবন্ধু টি-২০ টুর্নামেন্ট এখন পর্যন্ত শহিদুল ইসলাম ৭ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে এখন সর্বোচ্চ উইকেটে সংগ্রাহকদের তালিকায় তিন নম্বরে আছেন। ডেথ অভারে বল করা সত্তেও তিনি পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে বেশ ভালো ইকোনমি মেইন্টেইন(৭.৫৩) করেছেন।ইনিংসের শেষের দিকে ইয়র্কার করায় বেশ ভালো দক্ষতা দেখিয়েছেন।
শরিফুল ইসলাম
(৭ ম্যাচে ১২ উইকেট , গড়ঃ ১৭.২৫, ইকোনমিঃ ৭.৯৬)
শরিফুল সর্বপ্রথম নজর কেড়ে ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশকাপে নজরকাড়া পারফরম্যান্স করে। ফলসরূপ বাংলাদেশ প্রথমবারের মত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতার গৌরব অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি কাপে এখন পর্যন্ত তিনি তার নামের প্রতি বেশ ভালভাবেই সুবিচার করতে পেরেছেন। ৭ ম্যাচ খেলে তিনি ১৩.২৩ গড়ে ১৩ উইকেট নিয়েছেন এবং ওভার প্রতি রান খরচ করেছেন ৭.৯৬। উপরন্তু নুতুন বলে উইকেট নেওয়ার সক্ষমতা তার বোলিংয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের জন্য নুতুন বলে বেশ ভালো একটি বিকল্প হতে পারেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইনিংসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের দুর্বলতা বেশ চোখে পড়ার মত।
এছাড়া তৌহিদ হৃদয়, আকবর আলী,সাইফ হাসান দলের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জ্বলে উঠেছেন। যদিও তাদের অনেক দূর পথ পাড়ি দিতে হবে তবুও বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে ।