বাজেটের কপি ছেঁড়া সংসদের প্রতি চরম অবমাননা: ওবায়দুল কাদের
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্ক:
সংসদ ভবনের সামনে বাজেটের কপি ছিঁড়ে ফেলা সংসদের প্রতি চরম অবমাননা বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এটি মহান সংসদের প্রতি চরম অবমাননা। এটি তাদের (বিএনপির সংসদ সদস্যদের) শপথ ভঙ্গেরও শামিল। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
বৃহস্পতিবার বিকালে সংসদ ভবন এলাকার সরকারি বাসভবন থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট অনুমোদন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কদের বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই মহামারীর সময়ই আমাদের বাজেট প্রণয়ন করতে হয়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের আর্থিক বছরের গণনা আমাদের চেয়ে ভিন্ন হওয়ায় (যেমন জানুয়ারি টু ডিসেম্বর, এপ্রিল টু মার্চ, অক্টোবর টু সেপ্টেম্বর) তাদের এই সময়ে বাজেট করতে হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ এবং দক্ষিণ গোলার্ধের কিছু দেশে আমাদের মতো জুলাই থেকে জুন আর্থিক বছর ধরা হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ এই সময়ে যেসব দেশ বাজেট প্রণয়ন করেছে, তাদের অধিকাংশই করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে সংকোচন করেছে। কোনও কোনও দেশ বাজেট দিতে ব্যর্থ হয়ে বিশেষ আইনের সহায়তায় বাজেট প্রণয়ন স্থগিত করেছে। এই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দুই একটি দেশসহ (যেমন পাকিস্তান) পৃথিবীর অনেক দেশে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশের স্বাস্থ্যখাতে যে সাময়িক প্রয়োজন উদ্ভূত হয়েছে তা মেটানো এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়-ক্ষতি সৃষ্টি হবে তা পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে এই বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭তম এবং বর্তমান মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট। এ বাজেটে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জীবন ও জীবিকা রক্ষার উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসৃজন ও সামাজিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জনের প্রয়াস আরও জোরদার করা হবে। আমাদের সরকার দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১) অনুমোদন করেছে। এ পরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের স্মরণ রাখা প্রয়োজন, গত এক দশকেরও অধিক সময় ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যদি দেশের এই অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন না করলে এই পেনডেমিক পরিস্থিতিতে দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হতো। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী যদি ২০০৯ এর পর দেশে ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর উৎপাদন বৃদ্ধি না করতেন, তাহলে এই পেনডেমিকে এদেশের মানুষ বিদ্যুৎবিহীন দুঃসহ পরিস্থিতি কীভাবে সহ্য করতো আর হাসপাতালগুলো কীভাবে চলতো, সেটি আমরা চিন্তাও করতে পারছি না।
এই বাজেটে কৃষি খাত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জানিয়ে তিনি বলেন, কৃষিতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে আমরা চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। করোনাত্তোর কৃষিখাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উৎপাদন, বাজারজাতকরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করার মাধ্যমে খাদ্য সঙ্কট যাতে তৈরি না হয় সেদিকে নজর দেওয়াই আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কোনভাবেই যাতে খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টি না হয় সে জন্য এক ইঞ্চি আবাদি জমিও ফেলে না রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে আমি কৃষি মন্ত্রণালয় ও তার সকল সহযোগী সংস্থাগুলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন।
এসময় বাঙালির সব অর্জনের পেছনে আওয়ামী লীগের অবদান রয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতাই এনে দেয়নি, এই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যা যা করা প্রয়োজন ছিল তার সবকিছুই করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়।
তিনি আরও বলেন, মোটা দাগে বলতে গেলে, বাঙালি জাতি হিসেবে এ পর্যন্ত যা কিছু পেয়েছে, তার সবকিছুই দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ; দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং দূরদর্শী ও বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের সব অর্জন শেখ হাসিনার কারণেই। পিতার মতো তিনি দেশের মানুষকে ভালোবেসে পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন। শেখ হাসিনা নিজের দর্শন-চিন্তা-কর্মপ্রচেষ্টা দিয়ে সমুজ্জ্বল হয়ে আছেন বাঙালির হৃদয়ে।