বায়ুদূষণ না থাকলে ৬-৭ বছর বেশি বাঁচতো বাংলাদেশিরা: গবেষণা
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
বাংলাদেশিদের জীবন থেকে গড়ে প্রায় সাত বছর কেড়ে নিচ্ছে তীব্র বায়ুদূষণ। বাতাসের বিষাক্ত কণাগুলো সহনীয় মাত্রায় থাকলেও এ দেশের মানুষ হয়তো ৬ দশমিক ৭ বছর বেশি বাঁচতে পারতো। বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশিদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৬ বছর। শিকাগোভিত্তিক এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত সবশেষ এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স (একিউএলআই) বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা পূরণ হলে এ দেশের মানুষের গড় আয়ু আরও প্রায় সাত বছর বেড়ে যেতো।
একিউএলআই’র পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বায়ুদূষণের কারণে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ২ দশমিক ৮ বছর কমানো হয়েছিল। এরপর দেশে বায়ুদূষণ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ বাংলাদেশ।
এ দেশের প্রতিটি মানুষ এমন এলাকায় বসবাস করেন, যেখানে বার্ষিক গড় বায়ুদূষণের মাত্রা ডব্লিউএইচও নির্দেশিকা এবং বাংলাদেশের জাতীয় মানদণ্ডের চেয়েও বেশি। দেশের ৬৪ জেলার বায়ুতেই দূষণকারী বিষাক্তকণার উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকায় উল্লেখিত মাত্রার চেয়ে অন্তত চারগুণ বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসের বিষাক্ত কণা বা পিএম২.৫ (পার্টিকুলেট ম্যাটার) আসে মূলত গাড়ির ইঞ্জিন, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। এগুলো নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি শরীরে প্রবেশ করা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট ২০২০ অনুসারে, বাংলাদেশে গড়ে বার্ষিক পিএম২.৫ গ্রহণের হার ৭৭ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, যা ডব্লিউএউচও নির্ধারিত সহনসীমার চেয়ে প্রায় সাতগুণ বেশি।
এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বায়ুদূষণ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের সবচেয়ে দূষিত বিভাগ হচ্ছে ঢাকা ও খুলনা। এ দুটি অঞ্চলে বায়ুদূষণের মাত্রা ডব্লিউএইচও নির্দেশিকার তুলনায় আটগুণ বেশি এবং এর কারণে সেখানকার বাসিন্দাদের প্রত্যাশিত আয়ু কমে যাচ্ছে প্রায় আট বছর করে। এমনকি দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে তুলনামূলক ভালো অবস্থায় থাকা চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের গড় আয়ুও ৪ দশমিক ৮ বছর কমিয়ে দিচ্ছে এই বায়ুদূষণ।
এই দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনলে সবচেয়ে বেশি গড় আয়ু বৃদ্ধি পেতে পারে সাতক্ষীরায় ৮ দশমিক ১ বছর। এরপর নড়াইলে ৭ দশমিক ৯ বছর, যশোর, গোপালগঞ্জ, ঝিনাইদহে ৭ দশমিক ৮ বছর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, মাগুরা ও ফরিদপুরে ৭ দশমিক ৭ বছর করে। বায়ুদূষণ কমলে ঢাকাবাসীও ৭ দশমিক ৭ বছর করে বেশি বাঁচতে পারেন।
একিউএলআই’র সবশেষ তথ্য বলছে, বায়ুদূষণ স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বৈশ্বিক গড় আয়ু অন্তত দুই বছর বাড়ানো সম্ভব। অর্থাৎ বর্তমান বৈশ্বিক গড় আয়ু ৭২ থেকে তখন ৭৪ বছরে পৌঁছাবে। গবেষকরা এক্ষেত্রে চীনকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। দেশটিতে ২০১১ সাল থেকে বায়ুদূষণ কমছে এবং এর ফলে চীনাদের গড় আয়ু প্রায় ২ দশমিক ৬ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে।