বিয়ানীবাজারে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন : শিল্পকলার শিক্ষক সেলিম কারাগারে
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
বিয়ানীবাজারে গান শেখাতে গিয়ে এক ছাত্রী(১৭)কে যৌন নিপিড়ন ও কু-প্রস্তাব দেন বিয়ানীবাজার শিল্পকলা একাডেমীর গানের শিক্ষক সামছুদ্দিন সেলিম। ওই ছাত্রী কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে মারপিট করেন শিক্ষক সেলিম। সামছুদ্দিন সেলিমের (৪৮) বাড়ি লাউতা ইউনিয়নের গোলাটিকর গ্রাম।
শিক্ষকের মারপিট ও লাঞ্ছনার শিকার ওই কিশোরী আহতাবস্থায় বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি অবগত করেন।
এ ঘটনায় রোববার (১ নভেম্বর) ওই কিশোরীর ভাই বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ এর ৭/৩০ তৎসহ ৩২৩ ধারায় অপহরণ, যৌন নিপিড়ন ও মারপিট করার অভিযোগে বিয়ানীবাজার থানায় (মামলা নং১(১১)২০ ইং) দাখিল করেন। বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিল্লোল রায় তাৎক্ষণিক গানের শিক্ষক সেলিমকে গ্রেফতার করে রোববার (২ নভেম্বর) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেন। আর লাঞ্ছনার শিকার ওই ছাত্রীকে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করান বলে জানিয়েছেন পুলিশ সূত্র।
মামলা ও নির্যাতিতা কিশোরীর পরিবার সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা গ্রামের সেলিমের কাছে পৌর শহরের নিজ বাসায় গান শিখতে যান নির্যাতিতা কিশোরী (১৭)। প্রায় ২ বছর যাবত নানা ধরণের কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন গানের শিক্ষক। এতে ওই নির্যাতিতা কিশোরী রাজি হননি। আর লোক-লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলেননি। সেই সুযোগে সেলিম কৌশলে সম্পর্ক তৈরি করে নেয় ওই কিশোরীর পরিবারের সাথে। এতে করে গান শেখানোর কথা বলে পরিবারে গিয়েও ওই কিশোরীকে কু-প্রস্তাব দিত সে। গত কয়েকদিন পূর্বে সেলিম ওই কিশোরীর মোবাইল ফোন জোরপূর্বক নিয়ে কিছু ব্যক্তিগত ছবি ও ফেইসবুক আইডির পাসওয়ার্ড নেয়। এরপর থেকে কিশোরীকে কু-প্রস্তাব দিয়ে বলতে থাকে, তার কথায় রাজি না হলে ছবি এডিট করে ফেইসবুকে ভাইরাল করবে অথবা কিশোরীকে জবাই করে হত্যা করবে। গত ২৮ অক্টোবর সেলিম ওই নির্যাতিতা কিশোরীকে জোর পূর্বক বিয়ানীবাজার থেকে উঠিয়ে নিয়ে লাউতা গ্রামের তার এক পরিচিত লোকের বাড়িতে উঠায়, এ সময় ওই কিশোরী চিৎকার দিলে, তাকে মারপিট করে ফেলে যায় সেলিম। পরে আহতাবস্থায় নির্যাতিতা কিশোরী তার ভাই ও পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি অবহিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে থানায় মামলা দাখিল করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার কিশোরীর বাসায় গিয়ে গান শেখাতেন সেলিম। এক পর্যায়ে সেলিম ওই কিশোরীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিন্তু কিছুদিনপর ওই কিশোরী জানতে পারেন সেলিম বিবাহিত ও বাচ্চা আছে। এরপর ওই কিশোরী সেলিমের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং অন্য একটি ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে সেলিম ক্ষিপ্ত হয়ে ওই কিশোরীকে অপহরণ করে নিয়ে কিল, ঘুষি, লাথি ও রড দিয়ে মারপিট করেন এবং শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ওই কিশোরীকে মারপিট করে হত্যার হুমকী প্রদান করেন। এ বিষয়টি কিশোরী তার মায়ের কাছে বলেন এবং ভাইসহ থানায় গিয়ে মামলা দাখিল করেন।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, ইতিপূর্বে সেলিমের জামিনের জন্য আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আদালত জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেছেন।
লাউতা ইউনিয়নের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সেলিম ও তার আরো দুই সহযোগী মিলে গান শেখানোর কথা বলে প্রতিনিয়তই গান শিখতে আসা মেয়েদের ধর্ষন ও নানা ধরনের নির্যাতন চালিয়ে ভিডিও এবং ছবি তুলে রাখতো। অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে কিছু বলতো না। আর কেউ প্রতিবাদ ফেইসবুকে ছবি ও ভিডিও ছাড়ার হুমকি দিতো সেলিম ও তার সহযোগীরা।
সেলিমের সাথে দীর্ঘদিন থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যন্ত্রবাদক জানান, সেলিমের কু-কর্ম দেখে তিনি দুই বছর আগেই তার সঙ্গ ত্যাগ করেছেন। তাছাড়া সেলিম গান শেখানোর কথা বলে দুবছর পূর্বে এক কিশোরীর সর্বনাশ করে ভিডিও ও ছবি তুলে ছিলো। বর্তমানে ওই কিশোরীর বিয়ের প্রস্তাব কোন জায়গা থেকে গেলে সেলিম ভিডিও ও ছবি দেখিয়ে বিয়ে ভেঙে দেয়।
এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিল্লোল রায় জানান, ১৭ বছর বয়সের এক কিশোরীকে নির্যাতনের অভিযোগে সেলিমকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।