বিয়ানীবাজার টু ফেঞ্চুগঞ্জ ‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত জিরো পয়েন্ট
আতাউর রহমানঃ
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার তীরবর্তী ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট। এখান থেকে সাগরের ন্যায় বিস্তৃত হাকালুকি হাওরকে এক পলকে দেখা যায়। বর্ষায় হাকালুকির উত্তাল ঢেউয়ের তরঙ্গের গর্জন যেন আরেক সমুদ্র। সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশ থেকে এখানে ছুঁটে আসেন পর্যটকরা। হাকালুকির সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ অংশেই অবস্থান করতে হয়। সেখানেই গেলাম আমরা।
এটাই সিলেটের “মিনি কক্সবাজার”। ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট থেকে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর ‘হাকালুকি’ দেখা। সেই নিরিখে আজ ২৫ আগস্ট ২০২০খ্রি. মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বিয়ানীবাজার পৌরসদর থেকে রওয়ানা দিলাম গাড়ি যোগে-বারইগ্রাম। সেখান থেকে ভাড়া করা হল ইঞ্জিন চালিত নৌযান। সেই নৌযান চড়ে ১১ জনের পর্যটন টিম। পর্যটকরা হলেন লায়ন আলাউদ্দিন, লায়ন আফছার উদ্দিন, বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি আতাউর রহমান, লায়ন আরবাব হোসেন খান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মালিক, ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হক, আব্দুল আহাদ, শাহ আলম, কামরুজ্জামান নাসির এবং স্টুরিস্ট দলের নতুন সদস্য রাফায়ত হোসেন ও বখতিয়ার হোসেন।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর ‘হাকালুকি’। এর জিরো পয়েন্টে পর্যটকদের আনাগোনা দিন দিন বাড়ছে। বৃহত্তর সিলেটের বাসিন্দাদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা আনন্দ উপভোগ করতে হাকালুকির এই জিরো পয়েন্টে ছুটে আসেন। সামর্থ ও পছন্দের নৌযান নিয়ে বিস্মৃত হাকালুকির বুকে ঘুরে বেড়ান। এখানে পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা হলো পরিবেশ টাওয়ার। হাওরের মধ্যে ৪০ ফুট দীর্ঘ পরিবেশ টাওয়ারে উঠে দিগন্তহীন বিশাল হাওরের সৌন্দর্য উপভাগ করা এবং ছবি তুলার মজাই আলাদা।
জিরো পয়েন্ট থেকে হাকালুকির সৌন্দর্য অন্যরকম মনে হয়। এ যেন সিলেটের মিনি কক্সবাজার।
অবশেষে পৌঁছলাম ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট। ফেঞ্চুগঞ্জ জিরো পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেল, পর্যটকদের জন্য সেখানে রয়েছে হাওর বিলাস নামক ছোটবড় একাধিক নৌযান। ট্রলার, ছোটবড় শতাধিক ইঞ্জিন চালিত নৌকা। শতবর্ষী বটবৃক্ষের ছায়া, বিসৃত হাওরের বিশুদ্ধ বাতাসের ঝাপটা অন্যরকম আবেশে নিয়ে যায়। পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দে মনের দুয়ার যেন খুলে যায়। জিরো পয়েন্টে আরো চোখে পড়লো নানা বয়সের পর্যটকদের পদচারণা। স্থানীয় লোকদের ভাষ্য, পর্যটকদের আনাগোনায় এলাকাটি মুখরিত থাকে। পর্যটকদের কেন্দ্র করে এখানকার হোটেল ও ফুডের দোকানের ব্যবসা হয় জমজমাট।
এবার ট্রুলারে করে ছুটলাম বিশাল জলরাশির বুকে। পড়ন্ত বিকালে হাওরের বুকে ভেসে চলা ট্রুলারে ব্লুটুথ স্পীকারে মোবাইল ভাড়ায় ভাটিয়ালি গান শুনতে শুনতে ওয়াচ টাওয়ারে পৌঁছালাম। ওয়াও! সু-উচ্চ টাওয়ার হতে চারপাশের নজরকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর লাল আভা ছড়ানো সূর্যাস্ত এক অন্যরকম উম্মাদনা সৃষ্টি করে। এখানেই ভাসমান নৌযানের ভেতরে লাঞ্চ সম্পন্ন করা হল। দিনের শেষ ভাগে আমরা। পানিপথে যেতে হবে অনেক দূর। নীড়ে ফেরা পাখির মতো আমরা ফিরছি এখন ফিরতি পথ ধরে। ফেরার পথে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দৌড় দেখে ও কলতান শুনে মুগ্ধ। ফিরতে সন্ধ্যা হবে। দোয়া চাই সকলের।
বৃহত্তর সিলেটের বাসিন্দাদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা আনন্দ উপভোগ করতে হাকালুকির জিরো পয়েন্টে ছুটে আসেন। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ফেঞ্চুগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে নানা বয়সী শতশত পর্যটক প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা জন্য উদগ্রীব। জিরো পয়েন্ট থেকে অনেকেই ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে হাওরের পরিবেশ টাওয়ারে ঘুরতে যাচ্ছেন। অনেকে পরিবার-পরিজনসহ ঘুরাঘুরি করছেন।
ঘুরতে আসা পর্যটকদের সাথে কথা হয় পঞ্চখণ্ডের লেখক-গীতিকার ও বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি আতাউর রহমানের। তার মতে, এখানকার পরিবেশ যে কারোরই মন ভুলাবে। এখানকার পরিবেশ-প্রকৃতি এবং রূপলাবণ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করার মতো। এই মুগ্ধতাই পর্যটকদের এখানে বার বার নিয়ে আসে।
হাকালুকি হাওরের তথ্য :
বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি। এর আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর। তার মধ্যে শুধু বিলের আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর। সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার ছয় উপজেলা জুড়ে হাকালুকি হাওরের অবস্থান। এর গড় আয়তনের মধ্যে ৩৮ ভাগ মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায়, দুই ভাগ জুড়িতে, ৩০ ভাগ কুলাউড়ায়, ১৫ ভাগ ফেঞ্চুগঞ্জে, ১০ ভাগ গোলাপগঞ্জে ও ৫ ভাগ বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত।
হাকালুকির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি
বর্ষায় পানি থৈথৈ আর নানা জাতের দেশি টাটকা মাছের বাহার দেখা যায়। শীতকালে পাখির কলতান আর নানা প্রকারের সবজি, ভ্রমণপিপাসুদের বিনোদনের পাশাপাশি রসনা তৃপ্তিও মেটানোর সুযোগ রয়েছে এখানে। আরও আছে সবুজে আচ্ছাদিত নানা ছন্দের টিলাসমৃদ্ধ মণিপুর, মৌরাপুর, ঢালুছড়া ও মোমিনছড়া নামক ৪টি চা বাগান। চা বাগানগুলো উঁচু নিচু ঢেউ খেলানো এবং নৈসর্গিক জগতের অপরূপ মাধুর্যের অধিকারী। এই জিরো পয়েন্টের পাশেই রয়েছে হজরত গোলাপ শাহ্ [রঃ] মাজার। চাইলে মাজার যিয়ারতও করতে পারেন।
যোগাযোগ : বাসে-ট্রেনে দুই ভাবেই সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ যাওয়া যাবে। তবে ঘোরাঘুরির জন্য সবচেয়ে ভালো হবে নিজস্ব গাড়ি/রেন্টকার নিয়ে যাওয়া। হাওরে নৌ ভ্রমণের জন্য ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট খেয়াঘাটে নানা ধরনের নৌযান রয়েছে। ভাড়া ঘণ্টা প্রতি দরদাম করে নেয়াটাই উচিত হবে।