বড়লেখায় অপহরণের ৫৫ ঘণ্টা পর সতেন্দ্র দত্তের ছেলে উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্ক :
অপহরণের প্রায় ৫৫ ঘণ্টা পর মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর চা বাগান থেকে ব্যবসায়ী শশাঙ্ক কুমার দত্তকে (৫৮) উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রোববার (৬ জুন) দিবাগত রাত দেড়টায় পুলিশ, ডিবি ও র্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে বাগানের নির্জন জঙ্গল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
এসময় দুই অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে সোমবার দুপুরে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীদের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় মোট ৩জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শশাঙ্ক কুমার দত্ত বড়লেখা পৌর শহরের বারইগ্রামের বাসিন্দা সতেন্দ্র কুমার দত্তের বড় ছেলে। তিনি শহরের হাজীগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের চন্ডিনগর গ্রামের সবুজ হোসেন, ইব্রাহিম আলীর ছেলে ইসমাইল আহমদ ওরফে হারুন ও বোবারথল গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে জুলমান অাহমেদ।
গত শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তিনি নিখোঁজ হন। এরপর তার মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেছিল অপহরণকারীরা।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া তার কার্যালয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৪ জুন শুক্রবার সন্ধ্যা অনুমান ৬ ঘটিকায় শশাঙ্ক কুমার দত্ত তার নিজ বাড়ি হতে সিলেট টিলাগড়স্থ ভাড়াটিয়া বাসার উদ্দেশ্যে বড়লেখা উত্তর চৌমহুনাস্থ পোষ্ট অফিসের সামনে থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা রওয়ানা করেন। এরপর তিনি বিয়ানীবাজার থানার বারইগ্রামে সিএনজি পরিবর্তন করে সিলেট যাওয়ার উদ্দেশ্যে আরেকটি সিএনজি গাড়ীতে উঠেন। সিএনজি গাড়ী যোগে বারইগ্রাম হতে সিলেট যাওয়ার পথে সিলেট বিয়ানীবাজার থানার মোল্লাপুর রাস্তার সম্মুখে পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাস শশাঙ্কের সিএনজি গাড়ীটি গতিরোধকরে তাকে মাইক্রোবাসটিতে তুলে জোরপূর্বক অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। অপহরণকারী চক্র শশাঙ্ক দত্তকে একটি অজ্ঞাতস্থানে রেখে বিভিন্ন ভিওআইপি নাম্বার হতে ভিকটিমের ছোট ভাই সুবোধ কুমার দত্তের মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। এরপর তিনি (সুবোধ) থানায় এসে আইনগত সহায়তা চাওয়ার পরপরই থানা পুলিশের বিশেষ টিম, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষগণ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রহস্য উদঘাটনে একটানা অভিযান অব্যাহত রাখে। এরপর রোববার দিবাগত রাত ১টা ৩০ ঘটিকার সময় অভিযান চালিয়ে বাহাদুরপুর চা বাগানের গভীর জঙ্গল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, অপহরণের ৫৫ ঘণ্টার মধ্যে জেলা পুলিশ, ডিবি’র টিম এবং র্যাবের যৌথ অভিযানে শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিটি মুহূর্তের ফল স্বরূপ অপহরণকৃত ভিকটিম শশাঙ্ক কুমার দত্তকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, অভিযানকালে ভিকটিম যে ঘরে আটক ছিলেন তা কৌশলে শনাক্তপূর্বক জেলা পুলিশ, ডিবি ও র্যাবের যৌথ টিম ঘরটিকে নিরাপদ দূরত্বে ঘিরে ফেললে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ভিকটিমকে সাথে নিয়ে অপহরণকারী অনুমান ৭/৮ জন বাহাদুরপুর চা-বাগানের গভীর জঙ্গলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এমতাবস্থায় যৌথ টিমের পর্যাপ্ত সদস্য থাকায় তাৎক্ষনিক ভিকটিম উদ্ধার ও অপহরণকারী ইসমাইল আহমেদ ওরফে হারুন ও জুলমান আহমেদকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
এসময় অপরাপর অজ্ঞাত ৫/৬ জন অপহরণকারী গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই সুবোধ কুমার দত্তের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বড়লেখা থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়।
এসপি জানান, যে এলাকা থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে সে এলাকায় আমাদের একাধিক টিম অবস্থান করছিল। তাই সোমবার দুপুরে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন সবুজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়ার দিক-নির্দেশনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাউছার দস্তগীরের নেতৃত্বে বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন চন্দ্র দেবনাথসহ বড়লেখা থানার অফিসার ফোর্স এবং জেলা গোয়েন্দা টিম ও র্যাবের একটি দল অভিযানে অংশ নেয়।
সুত্র: সিলেট টুডে ২৪