মৌলভীবাজার যে বাড়িতে হাজারো পাখির বাস

 

বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্ক :

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের কাউয়াদীঘির বিরইমাবাদ গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম পঙ্কি মিয়া। হাওর পাড়েই তার বাড়ি। বাড়ি ভর্তি গাছগাছালি। গাছের ডালে ডালে হরেক রকমের হাজারো পাখি। ধবল বক আর কালো রঙের পানকৌড়ির সরব উপস্থিতি জানান দেয় গাছে গাছে সংসার পেতেছে তারা। চারদিকে শুধু পাখি আর পাখি। তারা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়াচ্ছে। নিশ্চিন্ত মনে করছে খুনসুঁটি।

সবুজ-শ্যামল জীববৈচিত্রে ভরা বিশাল জলাধার কাউয়াদীঘি হাওর পাড়ের পঙ্কি মিয়ার বাড়িটি হাজারো পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। হাওরের বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখানে গড়ে তুলেছে তাদের আপন ঠিকানা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির গাছে গাছে হরেক রকম পাখি। তখন সন্ধ্যা নামছিল। খাবার আহরণ শেষে আশপাশের হাওর-জলাশয় থেকে আপন ঠিকানায় ফিরছিল পাখিরা। সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে সাদা বক আর পানকৌড়ির। আছে ঘুঘু, শালিক, শামুকখোলসহ অসংখ্য পাখি।

হাওরঘেঁষা পঙ্কি মিয়ার বাড়িটি যেন এক পাখির রাজ্য। আম, জাম, কাঁঠাল, নারকেল, সুপারি গাছ আর বাঁশঝাড় জুড়ে চেনা-অচেনা হাজারো পাখির বাস সেখানে। ওই পাখিদের কলতানে মুখরিত এ বাড়িতে আসলে যে কারো মনে আসবে প্রশান্তি।

বাড়ির উঠোনে দেখা হয় গৃহকর্তা নুরুল ইসলাম পঙ্কি মিয়া ও গৃহকর্ত্রী হোসনে আরা বেগমের সঙ্গে।

তারা জানান, পাখিগুলোকে তারা তাদের পরিবারের সদস্যের মতোই ভালোবাসেন। প্রতিদিন দলবেঁধে আসা এসব পাখির ডানার শব্দ আর কলতানে তাদের ঘুম ভাঙে। পাখিরা ভোরের আলোয় উড়ে যায় খাবারের সন্ধানে। তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন এই দম্পতি। বিকেল হলেই ছোট ছোট দলে এই পাখিরা উড়ে আসতে থাকে বাড়িতে। এখন এ বাড়ির প্রতিটি সন্ধ্যা নামে সাদা বক ও কালো পানকৌড়ির কলতানে।

পঙ্কি মিয়া বলেন, ১৫ বছর আগে কয়েকটি পানকৌড়ি, শামুকখোল প্রথমে তার বাড়িতে বাসা বাঁধে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পাখির সংখ্যা। এভাবেই এখন বাড়িটিতে ঠাঁই নিয়েছে কয়েক হাজার পাখি।

তিনি বলেন, আমার বাড়িতে সারা বছরই বক, পানকৌড়ি, ঘুঘু, শালিক, শামুকখোলসহ নাম না জানা অসংখ্য পাখি থাকে। তবে পৌষের শেষে পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে যা আষাঢ় মাস পর্যন্ত চলতে থাকে। এরই মধ্যে তারা ডিম দেয়, বাচ্চা ফোটায়। বর্ষা শুরু হলে বাচ্চাসহ মা পাখিরা বাড়ি ছেড়ে হাওরে পাড়ি জমায়। তবে ঘুঘু, শালিকসহ অন্যসব পাখি বাড়িতেই থেকে যায়।

পাখির চঞ্চল ওড়াউড়ি মুগ্ধ করে যেকোনো মানুষকে। তাই তো প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পাখিপ্রেমীরা।

পাখি দেখতে আসা সারজুল আহমদ বলেন, আমাদের গ্ৰামের এই বাড়িতে ১৫ বছর ধরে পাখির বসবাস। প্রায় সময় আমরা পাখি দেখত আসি। অনেক দূর থেকে অনেক লোকজন‌ও আসেন। যান্ত্রিক কোলাহল ছেড়ে, প্রকৃতির মাঝে পাখিদের কিচিরমিচিরে অন্য এক আবহ সৃষ্টি হয়। যা মনকে প্রশান্তি দেয়, তাই এখানে আসা।

হাওড় রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমদ বলেন, হাওরাঞ্চলের বসতবাড়িতে যারা পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছেন তাদেরকে যদি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ পুরস্কৃত করেন, তবে ভবিষ্যতে যাদের বসতবাড়িতে পাখি যাবে তারাও পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে উৎসাহিত হবেন।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমি নিজেও এই বাড়িতে গিয়েছি। পাখিরা নিজেদের যেখানে নিরাপদ মনে করবে তারা সেখানেই যাবে। যারা পাখিদের ভালোবেসে নিরাপদ বসবাসের সুযোগ দিয়েছেন তারা পরিবেশ ও পাখিবান্ধব মানুষ। সেই মহৎ ব্যক্তিদের জন্য আমাদের কিছু করার আছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *