যেসব তারকা রাজনীতিক করোনায় আক্রান্ত
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্ক:
মহামারী করোনাভাইরসে বিপর্যস্ত দুনিয়া।বাংলাদেশেও এই মহামারী শক্ত থাবা বসিয়েছে।রোজ আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।এ পর্যন্ত মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিয়েছেন আটশ’রও বেশি মানুষ।প্রাণঘাতি এই সংক্রমণে ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন।রাজনৈতিক দলের নেতারাও বাদ পড়ছেন না।
ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের শিকার হয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম।বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যসহ তারকা রাজনীতিবিদ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
তাদের কেউ লাশ দাফন করতে গিয়ে,কেউবা ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন।আক্রান্ত নেতাদের বেশিরভাগই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কয়েকজন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি আছেন।আবার ইতিমধ্যে কয়েকজন সুস্থও হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।মোহাম্মদ নাসিমের করোনার পাশাপাশি মস্তিস্কে রক্তক্ষরণও হয়েছে।আজ তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বুধবার তার দ্বিতীয় করোনা টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও রাজনৈতিক প্লাটফর্ম জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ডা. জাফরুল্লাহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী।তার শারীরিক অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছে।গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই প্রতিষ্ঠান নিজের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালেই সেবা নিচ্ছেন।
বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৬ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে।তাদের কেউ ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে আবার কেউ লোকজনের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হলেন-শহীদুজ্জামান সরকার (নওগাঁ-২),এবাদুল করিম (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫),এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী (চট্টগ্রাম -৬) , ফরিদুল হক খান দুলাল (জামালপুর-২)এবং চট্টগ্রামের বাঁশাখালী আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
শহীদুজ্জামান সরকার ও ফজলে করিম চৌধুরী এরইমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
বাঁশাখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী পরিবারের ছয় সদস্যসহ করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।
এই সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল জানান,তারা চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদ রহমান নগর এলাকার বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল তারা মঙ্গলবার জানতে পেরেছেন।
রাসেল গণমাধ্যমকে বলেন, মোস্তাফিজুর, তার স্ত্রী, তিন মেয়ে, এক নাতনি ও এক জামাতা, তিন গৃহ পরিচারিকা ও তার নিজের করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান। তিনি বলেন,ইসলামপুরবাসীকে করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য যে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে কাজ করেছি, দুঃখের সঙ্গ বলতে হচ্ছে—আমিসহ আমার প্রায় সব মূল নেতার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। আমার সব নেতাকর্মীই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইসলামপুরের নিরীহ সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে অবিরাম কাজ করেছেন। আজ তারা সবাই রিপোর্ট পেয়ে ঘরবন্দি।
এদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপির বেশ কয়েকজন তারকা রাজনীতিবিদও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান ও তার স্ত্রী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জের সিটি কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামা হক চৌধুরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, আবদুর রেজ্জাক খান ও তার স্ত্রী শারীরিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের সিটি কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ শুরু থেকে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ দাফন করে ব্যাপক আলোচনা আসেন। সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি করোনায় মারা যাওয়া ৪৯ জনের লাশ দাফন করেন। বর্তমানে মাকসুদুল আলম খন্দকার ও তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি)ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা.সাজেদুল হক রুবেল, তার মা এবং মেয়ে করোনায় আক্রান্ত। এছাড়া সারা দেশে দলটির ৩৬ জন নেতাকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি)সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মনজু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি জানান, তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। তবে শরীর এখনও দুর্বল। বর্তমানে বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পর প্রথম মৃত্যু হয় করোনায়। মহামারী আকার ধারণ করা করোনায় শুক্রবার পর্যন্ত ৮১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্ত ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে।
২৫ মার্চ প্রথমবারের মত জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানায়, বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে।