রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা বিয়ানীবাজারের “নির্বাচিত নয় গুনীজন”
মোঃ নাজিম উদ্দিন
পঞ্চখন্ড তথা বিয়ানীবাজারের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সর্বজন বিদিত। এই ভুখন্ডে কালের পরিক্রমায় অসংখ্য জ্ঞানী-গুনীর জন্ম হয়েছে যারা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপি সমাদৃত হয়েছেন এবং আমাদেরকে করেছেন গৌরবান্বিত।বিয়ানীবাজারের যেসব গুনী ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক, শিক্ষা, চিকিৎসা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অবদান রেখেছেন সেইসব গুনীদের মধ্য থেকে আমার বাছাই করা নয় জনকে নিয়ে আজকের আয়োজন “নির্বাচিত নয় গুনীজন”। যারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অবদান রেখে নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
তারা হলেনঃ
১/ ডঃ জিসি দেব
বিয়ানীবাজারের কৃতি সন্তান গোবিন্দ চন্দ্র দেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনবিদ্যার একজন অধ্যাপক ছিলেন। তিনি জিসি দেব নামেই সমধিক পরিচিত। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে ধবংস করার একটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাকিস্তানী সৈন্যরা ক্ষণজন্মা মনিষী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দার্শনিক ড গোবিন্দ চন্দ্র দেবকে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে হত্যা করেছিল।
২/ শহীদ মনু মিয়া
স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম শহীদ বিয়ানীবাজারের কৃতি সন্তান ফখরুদ দৌলা খান মনু মিয়া। ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনের সময় তিনি ঢাকার রাজপথে তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খার পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। উল্লেখ্য তিনি দেশের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম শহীদ। ক্ষণজন্মা এই বীর পুরুষের আত্মত্যাগের কথা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।
৩/ নুরুল ইসলাম নাহিদ
বিয়ানীবাজারের কৃতি সন্তান জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ কসবা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিয়ানীবাজার পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ হাইস্কুল, সিলেট এমসি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত একাধারে ১০ বছর বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি পরপর দুই মেয়াদে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের সংসদ সদস্য।
৪/ সিএম শফি সামি
বিয়ানীবাজারের এক গর্বিত পুরুষ সিএম শফি সামি। তিনি প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি রাষ্টদুত হয়ে পরবর্তীতে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি ২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একজন সফল কুটনৈতিক হিসাবে তার সুনাম রয়েছে বিশ্বব্যাপি।
৫/ প্রফেসর(এমিরেটাস) ডাঃ সুফিয়া রহমান
বিয়ানীবাজারের বড়দেশ গ্রামের কৃতি সন্তান এবং দেশসেরা হ্নদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ সুফিয়া রহমান যাকে পুরো দেশ এক নামে চিনেন। তিনি ২০০৮ সালে তৎকালিন তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং তখনকার অন্তবর্তীকালিন সরকারের স্বাস্হ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।এছাড়াও তিনি একজন দেশসেরা হ্নদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে দেশে-বিদেশে সমানভাবে সমাদৃত।
৬/ তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী
বিয়ানীবাজারের কৃতি সন্তান জনাব তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীর বিক্রম খেতাব অর্জন করেছিলেন। তিনি জেলা প্রশাসক থেকে পর্যায়ক্রমে পদন্নোতি পেয়ে সচিব পদে উন্নীত হয়ে অবসর নেন।বর্তমানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
৭/ ডঃ আইয়ুবুর রহমান
বিয়ানীবাজারের পাতন গ্রামের আরেক কৃতি সন্তান ডঃ আইয়ুবুর রহমান। তিনি বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসাবে অত্যন্ত সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে অবসর গ্রহন করেন। অবসরের পর তিনি জাতিসংঘের এশিয়া অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নের উচ্চপদস্হ কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ৯৮-৯৯ সালে ঢাকাস্হ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
৮/ শাকুর মজিদ
বিয়ানীবাজারের আরেক গুনী ব্যক্তি মাথিউরা গ্রামের জনাব শাকুর মজিদ।তিনি পেশায় বরেন্য স্হপতি, নেশায় লেখক-নাট্যকার-আলোকচিত্রী-চলচিত্র নির্মাতা। নাটকের সকল বিভাগে রয়েছে উনার অবাধ বিচরন। তিনি অসংখ্য নাটক ও টেলিফিল্মের রচয়িতা। এছাড়াও তিনি দেশ-বিদেশের ভ্রমন চিত্র নিয়ে প্রায় তিন শতাধিক প্রামান্যচিত্র নির্মান করেছেন।তাছাড়া তার ভ্রমনকাহিনী, আত্নজীবনী ও স্মৃতিচারন মুলক ৩২ টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
৯/ প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ মস্তাবুর রহমান
বিয়ানীবাজার ফেনগ্রামের কৃতি সন্তান প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ মস্তাবুর রহমান।শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান। তিনি ২০০৫ সালে জাপানের সাগা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি এবং ২০১০ সালে ইতালির তুরিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। এছাড়াও এই বরেন্য শিক্ষাবিধ ২০১৩ সালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ফোরাম সিন্ডিকেটের নির্বাচিত সদস্য। এছাড়াও ছাত্রজীবনে অসামান্য ফলাফল অর্জন করায় সম্প্রতি তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতি কতৃক স্বর্নপদক পেয়েছেন। উনার হাত ধরে দেশের হাজার হাজার ছাত্র শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েছেন এবং হচ্ছেন।