লিবিয়ায় বিয়ানীবাজারের ২৪ যুবক নিখোঁজ, একজনের মৃত্যু
মুকিত মুহাম্মদঃ
বিয়ানীবাজার থেকে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ ২৪ জন যুবকের পরিবারে চলছে কান্নার মাতম। গত ৪ মাস থেকে লিবিয়ায় পাড়ি জমানো এই যুবকদের সাথে পরিবারের সদস্যদের কোন যোগাযোগ নেই। প্রায় ৮-৯ মাস পূর্ব থেকে তারা বিভিন্ন সময়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমান। তাদের প্রত্যেকের স্বপ্ন ছিল, ইউরোপে গিয়ে নতুন জীবন গড়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে এই প্রাণোচ্ছল যুবকদের। পরিবারের সবচেয়ে দূরন্ত ছেলেটির অনিশ্চিত আগামী এখন কেবল হতাশার।
বিয়ানীবাজার ও প্রতিবেশী উপজেলা থেকে লিবিয়ায় যাওয়া এই ২৪ জন যুবকের সন্ধান ও আদমপাচারকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তানহারুল ইসলাম (২৩), পিতা আমিরুল ইসলাম, গ্রাম পূর্ব লাউজারী, আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০), পিতা আতিকুর রহমান, গ্রাম পূর্ব লাউজারী, হোসেন আহমদ (৩৫), পিতা হাবীবুর রহমান, সাং খশিরবন্দ (হাতিটিলা), রাজু আহমদ (২৬), পিতা বিরাজ উদ্দিন, গ্রাম খশির কোনাপাড়া, কামরুজ্জামান রাহাত (২২), পিতা আব্দুল কাইয়ুম, গ্রাম খশিরবন্দ (হাতিটিলা), এনামুল হক (১৯), পিতা সামছুল হক, গ্রাম ঘুঙ্গাদিয়া নয়াগাঁও, আব্দুল আজিজ (৩২), পিতা হাজী শের মিয়া, গ্রাম পূর্ব লাউজারী, আব্দুল্লাহ আল জুনেদ (২৬), পিতা লিয়াকত আলী, গ্রাম পূর্ব লাউজারী, আরিফ আহমদ দুলাল (২৪), পিতা আবুল হোসেন, গ্রাম গড়রবন্দ, আব্দুল করিম (২৫), পিতা বারহাম আলী, গ্রাম ঘুঙ্গাদিয়া নয়াগাঁও, তোফায়েল আহমদ অজিত (২৪), পিতা আবুল হোসেন, গ্রাম খশিরবন্দ হাতিটিলা, মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল ইমন (২২), পিতা হাজী মো: মিন্নত আলী, গ্রাম পূর্ব লাউজারী, মোহাম্মদ আলী (২৭), পিতা বিলাল উদ্দিন, গ্রাম জলঢুপ, কয়ছর আহমদ (২৬), পিতা আরফত আলী, গ্রাম গড়রবন্দ, জাকারিয়া আহমদ (২১), পিতা ইদ্রিছ আলী, গ্রাম চারখাই, জুনেদ আহমদ (২৩), পিতা মাওলানা আছার উদ্দিন, হোসাইন আহমদ (১৯), পিতা সুরুজ আলী, গ্রাম ঘুঙ্গাদিয়া নয়াগাঁও, জুবের আহমদ (২৩), পিতা মিনাজ উদ্দিন, গ্রাম খশিরবন্দ (জয়নগর), আব্দুল হক (২২), পিতা বাহার উদ্দিন, গ্রাম সারোপার, তাদের সবার বাড়ী বিয়ানীবাজার উপজেলায়। সাহেল আহমদ (২৪), পিতা বাবুল হোসেন, গ্রাম শাহবাজপুর, জাকির হোসেন (২৪), পিতা মো. নূর উদ্দিন, গ্রাম হাকালুকি, আব্দুল হাছিব (২৬), পিতা ওয়াইছ আলী, গ্রাম শাহবাজপুর, এদের সবা বাড়ী বড়লেখা উপজেলায়। বকুল আহমদ (২৩), পিতা মইন উদ্দিন, গ্রাম লোহারমহল, আবুল কাশেম আজহার (২৫), পিতা আব্দুল কাদির, গ্রাম লোহারমহল, আব্দুর রহিম চৌধুরী (২৩), পিতা আব্দুল মতিন চৌধুরী, গ্রাম কানাইঘাট, সকলের বাড়ি জকিগঞ্জ উপজেলার যুবকরা গত প্রায় ৪ মাস থেকে নিখোঁজ। অনেক চেষ্টা করেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছেনা।
এরমধ্যে সম্প্রতি আমিনুর রহমান (২৪) নামের এক যুবক সম্প্রতি লিবিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার লাশ এখনো দেশে ফেরত আসেনি।
লিখিত বক্তব্যে নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের পক্ষে বিরাজ উদ্দিন বলেন, তাদের মন বলছে ছেলেরা এখনো জীবিত আছে। তবে তারা কোন আদমপাচারকারী চক্রের কাছে জিম্মী। নিখোঁজ যুবকদের সন্ধানের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগীতা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আতিকুর রহমান বলেন, আদম পাচারকারীচক্র তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০-১২লাখ টাকা করে আদায় করে। বর্তমানে আদমপাচারকারী চক্রের প্রধান ফরহাদ আহমদ (৪০), পিতা: কুতুব উদ্দিন কুটুল, সাং ঘাঘলাজুর (ভেউর), জাবেদ আহমদ, পিতা: কুতুব উদ্দিন কুটুল, সায়রা বেগম, স্বামী: কুতুব উদ্দিন কুটুল, হাদিয়া বেগম (২০), স্বামী: ফরহাদ হোসেন, সর্ব সাং ঘাঘলাজুর (ভেউর), থানা: জকিগঞ্জ নামীয় ব্যক্তিগণ ওই টাকা গ্রহণ করেন এবং তারাই উল্লেখিতদের লিবিয়ায় পাঠাতে সহায়তা করেন। এরা সবাই আদমপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সহযোগী।
সংবাদ সম্মেলন চলাকালে নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অচিরেই আদমপাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান নিখোঁজদের স্বজনরা।