শিল্প-কারখানা খোলা রেখে লকডাউনের সিদ্ধান্ত, হতাশায় বিয়ানীবাজারের নিম্ন আয়ের মানুষ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
দেশে তৃতীয় দফায় বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। এমন অবস্থায় এক সপ্তাহের লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে শুরু হবে এ লকডাউন। কিন্তু গেলো লকডাউনের ঘাটতি কাটিয়ে উঠার আগে ফের লকডাউনের সিদ্ধান্তে অনেকটা অন্ধকার দেখছেন বিয়ানীবাজারের নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। লকডাউনের খবরেই তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। করোনার ভয় থাকলেও পরিবার পরিজনের খাবার জোগান নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। এ যেন মড়ার উপর খাড়ার ঘা।
শনিবার সকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর লকডাউনের আগাম খবর জানানোর পর উপজেলার নিম্ন ও মধ্যম আয়ের কয়েকজনের সাথে কথা হলে মেলে হতাশার বাণী।
বিয়ানীবাজার-বারইগ্রাম সড়কের পাশে বিকাল হলে পান সিগারেটের দোকান নিয়ে বসেন তজমুল নামের একজন। বাড়ি তার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নে। গত লকডাউনের পর থেকে তিনি পান সিগারেটের ভাসমান দোকান নিয়ে বসেন ফুটপাতে। এর আগে অন্য পেশা থাকলেও গত লকডাউনের পর বেছে নেন পান সিগারেটের ফুটপাতের ব্যবসা। এতোদিন কোনরকম তার দিনাতিপাত হলেও এবার লকডাউনের খবরে মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। বললেন, ‘লকডাউন না, আমাদের মরার রাস্তা। একদিকেতো বের হলে করোনায় মরবো আর ঘরে থাকলে না খেয়ে মরবো।’
অপরদিকে মধ্যম আয়ের মানুষের মাঝে বিরাজ করছে না বলা হতাশা। ইলেকট্রিকের কাজ করেন খাসাড়ীপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইমরান আহমদ। লকডাউনের খবর জানিয়ে কি করবেন ভাবছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুই বুঝতে পারছি না। গত লকডাউনের ঋণ এখনো শেষ করতে পারিনি। এর মাঝে আবার লকডাউন। গেলো লকডাউনে বিভিন্ন দিক থেকে মাঝেমধ্যে সহায়তা মিলেছে। কিন্তু এবার তাও মিলবে না। মানুষ কতো দিবে?
তবে চিন্তার ভাঁজ রিকশাচালক আব্দুল খালেকের কপালেও। তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন পৌরশহরের দাসগ্রাম এলাকায়। কিন্তু লকডাউনে জনসাধারণ চলাচল সীমিত থাকার খবরে এখনই অন্ধকার দেখছেন। আব্দুল খালেক বলেন, লকডাউনে গরীবের যত সমস্যা। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। রাস্তায় বের না হলে আমাদের পেটে ভাত পড়ে না। লকডাউনে রিকশা চালানো বন্ধ হয়ে গেলে কিভাবে খাব, কোথায় যাব আল্লাই জানেন। আর রিকশা নিয়ে বের হলেও মানুষ মিলে না।
একই ভাবনা কসবা খাসা এলাকার বাসিন্দা রফিক উদ্দিনের। তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানীর খণ্ডকালীন প্রজেক্টে কাজ করেন। গত বছর লকডাউন শুরু হলে তার প্রজেক্টটি বন্ধ হয়ে চাকরিটা চলে যায়। এসময় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়া রফিক বাসা ভাড়া দিতে না পাড়ায় সবাইকে নিয়ে গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হন। কিছুদিন হলো আবারো চাকরী পেয়েছেন। আসছে লকডাউনে গতবছরের মতো যেকোনো সময়ই চাকরী চলে যাওয়ার টেনশনে থাকা রফিক কোন মন্তব্যই করতে পারলেন না।
জামানপ্লাজার কসমেটিকস ব্যবসায়ী জাকারিয়া আহমেদ গত এক বছর ধরেই ব্যবসায় খুব খারাপ অবস্থা। এখন লকডাউনের খবরে বুঝতেছি না কিভাবে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিনাতিপাত করবো।
এদিকে করোনা মহামারি শুরুর দিকে সারা দেশে চলা লকডাউনে বিয়ানীবাজারে ব্যাপক ভাবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রবাসীরা। এমনকি ব্যক্তি উদ্যোগেও বিতরণ করা হয় খাদ্যসামগ্রী। সেই সাথে থাকে সরকারী তহবিলের ত্রাণসামগ্রী। কিন্তু এবার এসব সাহায্যসামগ্রী কতটা পাওয়া যাবে তা নিয়েও আছে সংশয়।