সিলেটের আখালিয়ায় চিকিৎসকের ঘর থেকে কিশোরীর লাশ উদ্ধার; পরিবারের অভিযোগ হত্যা
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকায় গাইনি চিকিৎসক জামিলা খাতুনের বাসা থেকে কিশোরী গৃহপরিচারিকার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে আখালিয়া সুরমা আবাসিক এলাকার ৪ নং গলির ৪৩ নং বাসা থেকে পুলিশ ওই কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে।
নিহত কিশোরী জান্নাত আক্তার লিনা (১৪) সিলেট কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বতুমারা গ্রামের আবদুল মালিকের মেয়ে।
এদিকে, লিনাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করছে পরিবার। তবে ডাক্তার জামিলা বলছেন, এটি আত্মহত্যা।
জানা গেছে, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডাক্তার জামিলা খাতুনের বাসায় থাকতো জান্নাত আক্তার লিনা। প্রায় ৮ বছর ধরে সে ডাক্তার জামিলার বাসায় থেকে পড়ালেখার পাশাপাশি গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতো। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ডাক্তার জামিলা খাতুন বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সকাল সাড়ে ১০টার তাঁর মেডিকেল পড়ুয়া মেয়ে তাঁকে ফোন করে বলেন, লিনা ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে। পরে ঘরের আরও কাজের লোক ও ডা. জামিলার মেয়ে মিলে লিনার দেহ নিচে নামান।
বিষয়টি জেনে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার জামিলা খাতুন পুলিশকে খবর দেন এবং তিনিও বাসায় চলে আসেন। পরে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুপুর ১টার দিকে লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে, জান্নাত আক্তার লিনার পরিবারের অভিযোগ- লিনাকে মারধর করা হয়েছে। পরে সে মারা গেলে আত্মহত্যা বলে দাবি করছেন ডাক্তার জামিলা ও তার পরিবারের সদস্যরা।
জান্নাত আক্তার লিনার ভাই আল-আমিন বলেন, আমার বোনের গলায় আঘাতের চিহ্ন আছে। ঘরের কাজে একটু ভুল হলেই তারা আমার বোনকে মারধর করতো- এমন অভিযোগ আমার বোন আগে অনেকবার দিয়েছে। তাছাড়া ডাক্তার জামিলার ছোট ছেলে আমার বোনকে খুব বেশি অত্যাচার করতো।
আল-আমিন বলেন, আজ সকাল ১১টার দিকে তারা আমাদেরকে ফোন করে বলে আমার বোন আত্মহত্যা করেছে। আমার বোন খুব সহজ-সরল ও খুব ভালো একটা মেয়ে। সে কখনই এমন কাজ করবে না। তাকে হত্যাই করা হয়েছে। এ হত্যার বিচার চাই আমরা। আমরা মামলা দায়ের করবো।
এ বিষয়ে জানতে ডাক্তার জামিলা খাতুনকে ফোন দিলে তিনি জানান, আমি আমার সন্তানের মতোই লিনাকে স্নেহ করতাম। তার খালাও আমার বাসায় কাজ করে। সে বলতে পারবে আমার পরিবারের সবাই লিনাকে কত স্নেহ করতো।
তিনি বলেন, আমার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। আজ ফজরের নামাজ পরে ওষুধ খেয়ে ঘুমাবার পর ঘুম ভাঙতে একটু দেরি হয়ে যায়। লিনাই আমাকে ডেকে তুলে। ওই আমাকে অফিসের টিফিন রেডি করে দেয় এবং যাবার সময় বাসার গেইট খুলে দিয়ে বিদায় দেয়। অফিসের আসার পর হঠাৎ সাড়ে ১০টার দিকে আমার মেয়ে আমাকে ফোন করে বলে লিনা গলায় ফাঁস দিয়েছে। তৎক্ষণাৎ আমি পুলিশে খবর দেই। তবে পুলিশ যাওয়ার আগে আমার মেয়ে ও বাসার অন্যান্যরা লিনার দেহ নামিয়ে নেয়।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জামিলা বলেন, কী কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারে সেটি বুঝতে পারছি না।
এ বিষয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম মিয়া মিঞা বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দুপুর একটার দিকে লাশ উদ্ধার করে। ও গলার নিচ দিকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যাই। তবে ময়না তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে ওসি জানান।
এদিকে, এ রিপোর্ট লেখা (বিকাল সাড়ে ৪টা) পর্যন্ত লিনার ময়না তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে।