সিলেটে অস্ত্রোপচারে জোড়া লাগল বিচ্ছিন্ন হাত
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
সেদিন বেলা আনুমানিক ২টা। পারিবারিক বিরোধের জেরে নিজের বড় ভাইয়ের শ্যালকের দায়ের কোপে ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সদ্য এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী দেলওয়ার হোসেন (১৮) এর। তাতে অঙ্গহানির গ্লানি নেমে আসে দেলওয়ারের জীবনে। সেই সাথে অঝোর ধারায় রক্ত। অতঃপর সকল কিছুকে পরাজিত করে সফল হলো চিকিৎসা বিজ্ঞান। দীর্ঘ ৮ ঘন্টার সফল অস্ত্রোপচারে জোড়া লাগে হাত। নতুন জীবন ফিরে পায় এ তরুণ।
শুক্রবার (৯ জুলাই) রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত দেলওয়ারের অস্ত্রোপচার হয় সিলেট নগরীর মিরবক্সটুলা মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে। সকাল ৬ টায় অস্ত্রোপচার শেষে তাকে রাখা হয় পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন। নাড়াতে পারছেন বিচ্ছিন্ন হাতের আঙুল।
দেলওয়ার হোসেন সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের টেকনাগুল এলাকার আব্দুল মন্নানের তৃতীয় ছেলে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) রাত ৮ টায় মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের ৬০২ নম্বর ক্যাবিনে গেলে কথা হয় ভাগ্যবান দেলওয়ারের চাচাত ভাই মো. রমিজ আলী শান্তর সাথে। আলাপচারিতায় তিনি সিলেট ভয়েসকে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন।
জানান, ‘শুক্রবার দুপুরে মারামারি হয়। তখন আমার চাচাত ভাইয়ের ডান হাতের কবজি কেটে ফেলা হয়। এরপর আমরা তাৎক্ষণিক হাতের বিচ্ছিন্ন অংশ সাথে নিয়ে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে তারা হাত জোড়া লাগাতে পারবেন না বলে জানান। পরে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় ডা. মান্নান সাহেবের সাথে। তিনি আশ্বাস দিলে আমরা মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে নিয়ে আসি। এরপর রাত ৯ টায় অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হলে সকাল ৬ টায় শেষ হয় অপারেশন। এরপর থেকে ভাইকে পোস্ট অপারেটিভে রাখা হয়েছে। এখন উনার অবস্থা ভালো। হাতের আঙুল নাড়াতে পারছেন। আঙুল ৯০ শতাংশ সচল আছে এখন।’
কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৯ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে। তবে অপারেশন বাবদ আড়াই লক্ষ টাকা লেগেছে।
এদিকে মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে- অভাবনীয় এ অস্ত্রোপচারের তত্ত্বাবধান করেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান। জটিল এ অস্ত্রপচারে তার সাথে ছিলেন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. মো. তওফিক আলম সিদ্দীকী, ডা. এন এ শোভন (অ্যানেস্থেসিয়া), ডা. পল্লব, ডা. মাসুদ হোসাইন।
অপরদিকে জটিল এ কাজটি করতে পেরে সন্তুষ্ট অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে বিচ্ছিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপন অনেকটাই সহজ এবং আলাদা দল থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে যন্ত্রপাতিসহ নানা সংকট রয়েছে। তাছাড়া এরকম অস্ত্রোপচার অনেক সময় ১৪-১৫ ঘন্টাও হয়। কিন্তু এসব অঙ্গ অনেক সময় সঠিকভাবে নিয়ে আসার অভাবে জোড়া লাগানো যায় না। যদি কেউ ৬ ঘন্টার ভিতর সঠিকভাবে বিচ্ছিন্ন অংশ ভালোভাবে নিয়ে আসতে পারে এবং ফ্রিজিং করতে পারে তাহলে জোড়া লাগানো সম্ভব। আমরা আশাবাদী এই হাত আবার কাজ করবে এবং সে তার স্বাভাবিক সুস্থ জীবন পাবে।’
তিনি অতীতে আরও দুইটি অস্ত্রোপচারে সফল হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘এর আগে এরকম একটি হাত এবং একজনের হাতের আঙুল জোড়া লাগাতে পেরেছিলাম। সেগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারের অস্ত্রোপচার আরও ভালোভাবে করতে পেরেছি।’