সিলেটে আদম পাচার মামলায় বাপ-ছেলে আটক
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
বিশ্বনাথে এক যুবককে বিদেশে পাঠানোর নামে ভারতে আটকে রেখে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে পিতা-পুত্রকে আটক করেছে থানা পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- বিমানবন্দর থানার আম্বরখানাস্থ পীর মহল্লার বাসিন্দা মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে আব্দুস সালাম (৪৮) ও আব্দুস সালামের পুত্র নাইমুর রহমান সাকিব (২৪)।
সোমবার (১৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্বনাথ থানার এসআই দেবাশীষ শর্মার নেতৃত্বে আসামিদের নিজ বাসা থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ আইন ২০১৩ এর ৬ (২) ৭/৮ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিশ্বনাথ থানার (মামলা নং-০২, তারিখ ০১/০৪/২০২০ইং)।
মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন, আব্দুস সালামের স্ত্রী আমিরুন বেগম (৪০) ও দক্ষিণ সুরমা থানার মামরখপুর গ্রামের মৃত তেরা মিয়ার পুত্র সিরাজুল ইসলাম। তারা বর্তমানে পলাতক রয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। মামলাটি দায়ের করেছেন ভারতে আটক থাকা ব্যক্তি বিশ্বনাথ উপজেলার টেংরা গ্রামের মৃত আব্দুল খালিকের পুত্র আব্দুল হক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলার আসামিরা ভয়ংকর দালাল চক্র। তারা ২০১৯ সালের পহেলা আগস্ট মাসে বাদী আব্দুল হককে আয়ারল্যান্ড পাঠানোর নামে ১৩ লক্ষ টাকার চুক্তিনামা করে এডভান্স ১ লক্ষ টাকা ও পাসপোর্ট নেয়। চুক্তির ৫দিন পর অর্থাৎ (৫ আগস্ট) ভিসা তোলার জন্য ভারতের দিল্লীতে যেতে হবে বলে উক্ত দালালরা আব্দুল হকের কাছ থেকে আরও দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে তাকে ভারতের নয়া দিল্লীতে পাঠিয়ে দেয়। ভারতের বিমান বন্দর থেকে সেখানকার ২ জন এজেন্টরা তাকে একটি বাসায় নিয়ে প্রায় ১ মাস ১০ দিন আটকে রাখে।
ভিসার ব্যাপারে আব্দুল হক জানতে চাইলে ভারতের দালালরা তাকে এম্বেসিতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অন্যত্র একটি বাসায় নিয়ে তালাবন্ধ করে রাখে এবং ভিসা হয়ে গেছে জানিয়ে বাকি ১০ লক্ষ টাকা দেশ থেকে এনে দেয়ার জন্য তাকে চাপ সৃষ্টি করে। আব্দুল হক তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় তাকে টানা ৩ সপ্তাহ আটকে রেখে নানাভাবে অমানবিক নির্যাতন করে। একপর্যায়ে আব্দুল হককে মেরে ফেলার প্রস্তুতি নেয় ভারতীয় দালালরা। তখন আব্দুল হক ভয়ে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং দেশে তার বড় ভাই আব্দুর রবকে ভিসা হয়ে গেছে এমন সংবাদ জানিয়ে টাকা দেয়ার কথা বলেন।
তার বড় ভাই ৩ কিস্তিতে দেশে থাকা দালাল চক্র আব্দুস সালামের বাসায় বাকি ১০ লক্ষ টাকা পৌঁছে দেয়া হয়। টাকা দেয়ার ৩দিন পর ভারতীয় দালালরা আব্দুল হককে নয়া দিল্লির অন্য একটি শহরে রাতে নির্জন স্থানে নিয়ে ছেড়ে দেয়। পরে সে দেশের পুলিশের সহযোগিতার আব্দুল হক বাংলাদেশে ফিরে আসে এবং গত ০১/০৪/২০২০ইং তারিখে সিলেটের মানব পাচার প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।
মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ ২ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।