সিলেটে কোন ধরনের সংস্কার ছাড়াই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ক্বিনব্রিজ এখন ‘ঝুঁকিমুক্ত’!
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
সুরমা নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়কে সংযু’ক্ত করা ঐতিহ্যের ক্বিনব্রিজকে ঘিরে গেল বছর নতুন এক পরিকল্পনা এঁটেছিল সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। প্রায় ৮৭ বছরের পুরনো এই ব্রিজকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ অভিহিত করে সংস্কার পরিকল্পনা করা হয়। লোহার বেষ্টনী লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেতুতে যান চলাচল। কিন্তু সিসিকের সেই পরিকল্পনার ‘পরি’ যেন উড়ে গেছে, পড়ে আছে শুধু ‘কল্পনা’।
ক্বিনব্রিজের সংস্কারকাজ তো হয়ইনি, বরঞ্চ অবাধে চলছে যানবাহন। এ যেন সংস্কার ছাড়াই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ক্বিনব্রিজ ‘ঝুঁকিমুক্ত’ হয়ে গেছে! সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্বিনব্রিজটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীনে রয়েছে। ফলে এটি সংস্কার কিংবা সংরক্ষণের এখতিয়ার তাদের।অন্যদিকে সওজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্বিনব্রিজ সংস্কারে আড়াই কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে শুরু হবে সংস্কার কাজ।
১৯৩৩ সালে ব্রিটিশদের হাতে নির্মিত ১ হাজার ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১৮ ফুট প্রস্থের ক্বিনব্রিজ চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় ১৯৩৬ সালে। ভারতের আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল ক্বিনের নামেই ক্বিনব্রিজ হিসেবে নামকরণ হয় সেতুটির। অনেকটা ধনুকের মতো বাঁকানো এই সেতুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে সিলেটের ঐতিহ্যের অন্য নামে পরিণত হয়।গেল বছরের আগস্টে ক্বিনব্রিজকে ঘিরে নতুন পরিকল্পনার কথা জানান সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ঐতিহ্যের সেতুটিকে সংরক্ষণ করতে সংস্কার কাজ করিয়ে এটি দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুসারে গত বছরের ৩১ আগস্ট মধ্য রাতে ক্বিনব্রিজের উভয় প্রবেশপথে লোহার বেষ্টনী লাগিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেতুর সামনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লিখা সাইনবোর্ড টানানো হয়। শুধুমাত্র পথচারীরা সেতুটি ব্যবহার করার সুযোগ পান। সিসিকের পরিকল্পনা ছিল, সুরমা নদী, ক্বিনব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়িকে পর্যটকদের যেহেতু আনাগোনা থাকে, সেহেতু ক্বিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে নির্মল পরিবেশ নিশ্চিত করা। নিজেদের পরিকল্পনার বিষয়টি ওই সময়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরকেও জানিয়েছিলেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সওজও তখন একমত হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান।
কিন্তু ক্বিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর দক্ষিণ সুরমায় গড়ে ওঠে আন্দোলন। সুরমার দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দারা তাদের যাতায়াত সুবিধার জন্য এ সেতু দিয়ে যান চলাচল অব্যাহত রাখার দাবি জানান। কিছুদিন পর ক্বিনব্রিজের উভয় প্রবেশপথে লাগানো লোহার বেষ্টনী ভেঙে রিকশা চলাচল শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে প্রায় পুরো বেষ্টনীই গায়েব হয়ে যায়। গেল কিছুদিন ধরে ক্বিনব্রিজ দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা তো বটেই এমনকি প্রাইভেট কারও অবাধে চলাচল করছে। ফলে পথচারীরা হেঁটে পারাপার হতে গিয়ে পড়ছেন ভোগান্তিতে। এছাড়া সেতুর উভয় পাশে যানজটও নিত্যদিনের হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতু দিয়ে যান চলাচল ঠেকানোর ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও নির্বিকার দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।
জানা গেছে, ক্বিনব্রিজ সংস্কারের বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতুটির সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে আড়াই কোটি টাকা চেয়ে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলে রেল বিভাগের মাধ্যমে সংস্কার কাজ করানো হবে।
এ প্রসঙ্গে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ক্বিনব্রিজ সড়ক ও জনপথের অধীনে। ফলে আমরা উদ্যোগ নিলেও সংস্কার কাজ সওজকেই করতে হবে। এজন্য বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সমন্বয় সভায় কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে। এখন সংস্কারের বিষয়টি সওজই ভালো বলতে পারবে।
অবাধে যান চলাচল প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, লোহার বেষ্টনী লাগিয়ে যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দারা এ নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। একপর্যায়ে কে বা কারা বেষ্টনী ভেঙে দেয়। এতে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন সেতু দিয়ে চলাচল করতে শুরু করে। ক্বিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল করতে দেওয়া হবে কী না এ বিষয়ে সংস্কার কাজ শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, ক্বিনব্রিজ সংস্কারের জন্য আম’রা আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছি। এ বরাদ্দ পাওয়ার পর কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, ক্বিনব্রিজের সংস্কার কাজ আগে রেলওয়ে বিভাগ করেছে। এবারও রেলই কাজ করবে।