সিলেটে পড়তে এসেছেন লন্ডন-আমেরিকার শিক্ষার্থীরা
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
সিলেটের ছয়টি মেডিকেল কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা সহস্র ছুঁইছুঁই। বেশির ভাগই নেপালের বাসিন্দা। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলেমিশে তাঁরা উপভোগ করছেন ক্যাম্পাসজীবন।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিলেটের মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়াশোনার মান ভালো। অবকাঠামো, বসবাসসহ আনুষঙ্গিক পরিবেশও চমৎকার। এটি বিবেচনায় নিয়ে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী এখন মেডিকেলে পড়াশোনার ক্ষেত্রে সিলেটকে বেছে নিচ্ছেন।
সিলেটের সরকারি মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে বর্তমানে ১০০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। তাঁরা পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া, নেপাল ও ভুটানের নাগরিক। বিদেশি শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি সিলেটের প্রথম বেসরকারি কলেজ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে।
এখানে ২৬৬ জন বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৭৪ জন নেপালের, ৯১ জন ভারতের এবং ১ জন যুক্তরাষ্ট্রের। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত কলেজটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৪১। এর মধ্যে ছেলে ৫৫৮ জন এবং মেয়ে ১৮৩ জন।
কলেজের প্রশাসনিক শাখা জানিয়েছে, এসব বিদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫১৮ জন নেপালের, ১১৭ জন ভারতের, ৫ জন যুক্তরাষ্ট্রের এবং ১ জন যুক্তরাজ্যের নাগরিক। ৬৪১ জন ভর্তি হলেও এখন পর্যন্ত এখান থেকে ৩৭২ জন বিদেশি শিক্ষার্থী এমবিবিএস পাস করেছেন। পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেপালের ২৫০ জন, ভারতের ১৩ জন, যুক্তরাজ্যের ৪ জন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১ জন রয়েছেন। সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজে ২৫০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। সমানসংখ্যক শিক্ষার্থী নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজে।
২৫০ জনের মধ্যে ৬ জন ভারতের ও ২৪৪ জন নেপালের। নতুন হওয়ায় পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী তুলনামূলক কম। এখানে ৫৮ জন বিদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে নেপালের ৪৯ জন ও ভারতের ৯ জন। হবিগঞ্জে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে এখন পর্যন্ত কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হননি।
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে রয়েছেন নেপালের সোনিতা লামা। তিনি বলেন, ‘একটি কনসালটেনসি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমি এই মেডিকেল কলেজের সুনাম শুনেছি। তখন জানতে পেরেছি, বেসরকারি কলেজের মধ্যে এটিই নাকি সেরা প্রতিষ্ঠান। পরে এখানে পড়াশোনার সুবাদে বুঝতে পারলাম, প্রতিষ্ঠানটি বিদেশিদের জন্য একেবারেই নিরাপদ ও বন্ধুত্বপরায়ণ।
শিক্ষা ক্ষেত্রে ওদের মান ভালো বলেই দেশে আমাদের গ্রহণযোগ্যতাও বেশি হবে।’ এ কলেজে অধ্যয়নরত দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের দুজন নেপালি শিক্ষার্থী জানান, তাঁরা নিজেদের বড় ভাইদের সুবাদে এই কলেজের নাম শুনেছেন। সিলেটে এমন একটি ভালোমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, এটা এখানে এসেই বুঝতে পেরেছেন।
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের নেপালের শিক্ষার্থী প্রত্যাশা তাপা বলেন, ‘আমাদের দেশের কয়েকজনের কাছে এই কলেজের সুনাম শুনেছি। এরপরই এখানে ভর্তি হতে আগ্রহী হয়েছি। দেশে ফিরে চিকিৎসাসেবায় মনোনিবেশ করতে চাই।’ পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজে ভারতীয় শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ফারুকি ও ইকরামুল হোসাইন জানান, এজেন্টদের মাধ্যমে তাঁরা এখানে ভর্তি হয়েছেন। নতুন হলেও এরই মধ্যে এখানকার পড়াশোনার মান নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট।
বিদেশি শিক্ষার্থীরা সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে গিয়ে বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানাশোনার সুযোগ পাচ্ছেন। সেবামূলক সংগঠন, যেমন বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা, রক্তদান প্রভৃতি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তৎপরতায় সম্পৃক্ত থাকায় বাংলাদেশের প্রতি বিশেষ টানও অনুভব করেন তাঁরা।
২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় হতাহতের তালিকায় ছিলেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের নেপালি শিক্ষার্থীরাও। সেই দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে দুজন শিক্ষার্থী জানালেন, তখন সমান শোককাতরতা বাংলাদেশি সহপাঠীদেরও ছুঁয়ে গেছে। এ জন্য তাঁদের ভালো বন্ধুর তালিকায় বেশি বাংলাদেশের শিক্ষার্থী।