সিলেট বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নায়কের বিদায়, জুয়াড়ীর আগমন!
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। রায়হান হত্যা ঘটনার মধ্যে দিয়ে এ ফাঁড়ি নিয়ে এখন তোলপাড় দুনিয়া জুড়ে। মহানগর পুলিশের কতোয়ালী মডেল থানার অর্ন্তগত ফাঁড়িটি। এছাড়া বলা যায়, হার্ট অব ফাঁড়িও। এখানে বসার জন্য যথেষ্ট লবিং তদবিরের প্রয়োজনও হয়। জনশ্রুতি রয়েছে, এ ফাঁড়ির চেয়ার নিলামে উঠে। যেই চেয়ার পায়, তার কপালে জুটে আলাদ্দীনের চেরাগ। চেয়ারে বসলেই কেল্লাফতে।
বলতে গেলে টাকা বানানো এক আজব মেশিন এ ফাঁড়িটি। অপরাধ দমন নয়, অপরাধের চাষ করেই দু’হাতে কামানো যায় টাকা। বিষয়টি গোপনীয় নয়, সংশ্লিষ্টরাও অবগত। কিন্তু সবই হচ্ছে আইনের নামে বৈআইনে। কথা বলবে কে ? কার এতো বুকের ফাঁটা। বরং একান্ত বাগবাটোয়ারাই শরিক হয়ে ভাগ্যের দরজা সু:প্রসন্ন করেন অনেকে। তবে থানা এলাকার খুবই কাছাকাছি হওয়ায় এ ফাঁড়ির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এখন। রায়হান হত্যা ঘটনায় এ ফাঁড়ি নিয়ে প্রতিটি মানুষের মধ্যে ভিন্ন রকম নেতিবাচক মানসিকতার সৃষ্টি হয়েছে। আস্থা, নির্ভরতা এখন তলানীতে। সেবার বদলে জুলুম নির্যাতনের প্রতীক হয়ে উঠেছে এ ফাঁড়িটি। রায়হান হত্যা ঘটনায় বরখাস্ত হয়েছে ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। সেই সাথে আরো ৩জন। প্রত্যাহার হয়েছেন ৩ পুলিশ সদস্য।
এরপর বেরিয়ে আসছে আকবরের নানা কুর্কীতি। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় একাধিক নাটকে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করে পেয়েছিলেন ব্যাপক পরিচিতিও তিনি। কিন্তু রায়হান হত্যা ঘটনায় এখন খলনায়ক কেবল আকবর। সিলেটে মাঠি মানুষের অন্তরে অভিশপ্ত মানুষে পরিনত হয়েছেন তিনি। এ মাঠির প্রতিটি অনু কনাও অভিশাপ করছে তাকে। অঢেল অর্থ বিত্ত, পরিচয় পরিচিত এখন ধূলিসাৎ। ক্ষোব্ধ মানুষ প্রতিদিনই বন্দর বাজার ফাঁড়ি ঘেরাও করে জ¦ালিয়ে তুলছে ঘৃণা ধিক্কারের অগ্নিশিখা। কিন্তু এরপরও এ গুরুত্বপূর্ণ ফাঁড়িতে নতুন করে দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন আরেক বির্তকিত পুলিশ কর্মকর্তা এস আই মো: শাহিন মিয়া। তার প্রোপাইলও আকবরের মতো কনেস্টবল টু এস আই। শাহিন মিয়া নিয়ে বির্তকের শেষ নয়। জুয়া মাস্টার হিসেবে পরিচিত তিনি।
জুয়ার আসরের রাজা তিনি। হার নেই তার জীবনে। ২০১৮ সালের শেষের দিকে একটি অনলাইন পোর্টালে শাহিন মিয়াকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। ‘‘নগরীর অপরাধ দমনকারী যখন অপরাধীদের রক্ষা কবচ..” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে জুয়ার আসরের ছবি প্রকাশ হয় শাহিন মিয়ার। তখন লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ছিলেন তিনি। তার জুয়া নেটওয়ার্কের সাতকাহন ছিল সেই সংবাদে। তারপর কর্তৃপক্ষ তাকে ক্লোজ করে নেন কতোয়ালী মডেল থানায়। অর্থ ও কানেকশনের জোরে পুনরায় এসএমপির দক্ষিণ সুরমা থানার কদমতলী বাস টার্মিনাল ফাঁড়িতে বদলি নেন শাহিন। সেখানেই নগদ টাকার উর্বরতা। দু’হাতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামিয়ে কুমির বনে গেছেন তিনি। গাড়ি, বাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স সবই আছে তার। সেকারনে ফাঁড়ি থেকে ফাঁড়িতেই রাজত্ব করছেন অনায়াসে।
সেখানেও দীর্ঘ ১ বছর দায়িত্ব পালন শেষে বদলি হন শাহপরান (র.) থানায়। দায়িত্ব নেন উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির। থানার ওসির সাথে বনিবনা না হওয়ায় পুনরায় বদলি হয়ে যান এসএমপির মোগলাবাজার থানাতে। সেখান্ওে ঘুরে ফিরে দায়িত্বে নেন আলমপুর পুলিশ ফাঁড়ির। এরমধ্যেই বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে উঠে সুনামীর ঢেউ। সেই ঢেউয়ে হারিয়ে যান এস আই আকবর। ঝোঁপ বুঝে কূপ মেরে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে জায়গা করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন তিনি। অব্যর্থ মিশনে ১৪ অক্টোবর থেকে বন্দর বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ হয়ে গেছেন এস আই শাহিন মিয়া। আগুনের স্তুপে দাঁড়িয়ে হাসছেন এখন অট্রহাসি। কারন এই সময়েও সফল তিনি। সময়ের চরম বৈরী পরিবেশ তাকে চিনতে পারেনি কেউ !
এসআই শাহিন মিয়া বলেন, বুধবার থেকে বন্দর বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ হয়েছেন তিনি। দায়িত্ব্ও পালন করেছন।
মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ (তদন্ত) ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, মাত্র ৫/৬ দিন আলমপুর ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালন করতে না করতেই বন্দর বাজার ফাঁড়ির দায়িত্ব নিয়ে বদলি হয়েছেন এস আই শাহিন মিয়া।
এদিকে, মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের (মিডিয়া) বলেন, প্রসেসিং চলছে। ফাঁড়ি ইনচার্জ হিসেব এখনও ঘোষনা দেয়া হয়নি।