সুন্দর ও সুস্থ একটি পৃথিবী আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্ক:
দেশের অন্যতম দর্শকপ্রিয় তারকা অভিনেতা জাহিদ হাসান। শুধু অভিনয় নয়, পরিচালনা ও প্রযোজনা ক্ষেত্রেও তার রয়েছে সমান অংশীদারিত্ব। তুমুল ব্যস্ত এ মানুষটি আজ ঘরবন্দি সময় কাটাচ্ছেন।
করোনাকালে ঘরবন্দি জীবনযাপন, কাজকর্মের অবস্থা, ভিন্ন জীবনের অভিজ্ঞতাসহ সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে আজকের ‘হ্যালো…’ বিভাগে কথা বলেছেন তিনি
* লকডাউনে ঘরবন্দি সময়গুলো কেমন কাটছে?
** এটা তো বুঝিনি বাসার মধ্যে এত কাজ। বাসার কাজে যারা সহযোগিতা করে তারা তো আর নেই। এখন চা বানানো থেকে রান্নাবান্না সব কাজ আমরাই করি। আগে তো শুটিংয়ের কারণে অনেক সময় নিয়মিত নামাজ পড়া হতো না। লকডাউনে থেকে নিয়মিত নামাজ পড়ার সুযোগ হয়েছে। ছবি দেখি, লুডু খেলি, পলাপলি খেলি বাচ্চাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে। এভাবেই সময় কেটে যায়।
* এমন পরিস্থিতির জন্য কখনও প্রস্তুত ছিলেন, যার জন্য নিজেকে ঘরবন্দি করতে হবে?
** কখনও কল্পনাতেও ছিল না এমন একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। ছোটবেলায় অনেক উপন্যাস, প্রবন্ধ, গল্পে পড়েছি প্লেগ এসেছিল, মহামারী হয়েছিল। সেটা দেখে মনে হতো প্লেগ, ডায়রিয়া আর এমন কী, ওষুধ খেলেই তো হতো। এখনকার যে মহামারীর ওষুধ যখন আবিষ্কার হবে তখন মনে হবে এ আর এমন কী, টিকাটা দিলেই তো হয়ে যেত। আমাদের পরের প্রজন্ম বা ১০০ বছর পরের পৃথিবীর মানুষ ভাববে, এ আর এমন কী ছিল। ঘরের মধ্যে থাকলেই তো কোনো সংক্রমণ হতো না, মানুষ মরত না।
* আরও দীর্ঘ সময় ঘরে থাকতে হলে আপনার দৈনন্দিন জীবনে কেমন পরিবর্তন আসতে পারে?
** সময় যেটা যায় সেটা তো চলেই যায়। সময় ও স্রোত কখনও কারও জন্য থেমে থাকে না। এভাবেই সময় চলে যাবে। তবে এ পৃথিবীতে আরও কয়েকবার এমন মহামারী এসেছে। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, এই অসুস্থ পৃথিবীটাকে ভালো করার জন্যই এ ভাইরাস নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসেছে। পৃথিবীর আরও ভালোর জন্য এটা হয়েছে। আমরা মানবজাতি কতটা শৃঙ্খল সেটা প্রমাণের একটা বড় সুযোগ বলা যেতে পারে। সামনে আমাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ আছে, ইনশাআল্লাহ।
* আশপাশের মানুষদের নিয়ে কী ভাবছেন?
** নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাই এখন সবার জন্য কিছু না কিছু করছেন। আমার বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধের সময়, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যেভাবে মানুষ মানুষের জন্য কাজ করেছিল, এখনও করছেন। আমরা যেহেতু সৃষ্টির সেরা জীব, মানবতা আমাদের ভেতর আছে। যে যার মতো করছেন। দুই একজন দেখানোর জন্য করেন, কেউবা অগোচরে। কিন্তু একটু ঝামেলা সবারই হচ্ছে। হোক তিনি নিুবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্ত। যে যার অবস্থান থেকে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। আমি বা আমরা যেটা করছি সেটা বলতে চাইছি না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে কিছু না কিছু করছি। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত আছে।
* লকডাউনের আগে সর্বশেষ কী কাজ ছিল?
** লকডাউনের আগে ১৮ ও ১৯ মার্চ আমার ‘জরুরি ডিভোর্স’ নাটকের শুটিং ছিল। ‘জরুরি বিবাহ’ নাটকের সিকুয়াল এটি। ১৮ মার্চ অনেকখানি কাজ করে ফেলেছিলাম। ১৯ মার্চ দুপুর পর্যন্ত কাজ করে পুরো টিম নিয়ে ফিরে আসতে হয় আমাদের। ওটাই আমার শেষ কাজ ছিল। লকডাউন না হলে ঈদের আগে আমার অনেক কাজ ছিল। প্রতিদিন শুটিংয়ের শিডিউল নির্ধারিত ছিল। আমার নিজেরও অনেক কাজ ছিল, যেগুলো করতে পারিনি। যেহেতু সময় চলে গেছে, কাজগুলো করতে পারিনি, তাই এখন নতুন করে আবারও ভাবতে হচ্ছে। পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুনভাবে কাজের কথা ভাবতে হচ্ছে। চলে যাওয়া সময়গুলো তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। এখন আগামী দিনের কাজ নিয়ে ভাবতে হবে।
* করোনাভাইরাসের কারণে বিনোদন দুনিয়া কতটা সংকটে আছে বলে মনে করেন?
** বিনোদন তো দুনিয়ার একটা পার্ট। সারা পৃথিবী সংকটে আছে, বিনোদন তো স্বাভাবিক ব্যাপার। বর্তমানে প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসেবা সংকটে আছে। বিনোদন অনেক পরের বিষয়।
* আপনি তো একজন স্কাউটসও। এমন পরিস্থিতিতে স্কাউটস সদস্যরা কীভাবে কাজ করতে পারে?
** স্কাউট আন্দোলনে প্রবর্তক লর্ড ব্যাডেন পাওয়েলের একটা থিওরি হল- মানুষের উপকার করা, অন্য মানুষকে সহযোগিতা করা। মানুষ হিসেবে মানুষকে সহযোগিতা করার মানসিকতা সবসময় থাকবে এবং বর্তমান পরিস্থিতি সবাই সবার জায়গা থেকে করছেনও তাই। এ মুহূর্তে সবাই সবার জায়গা থেকে আর্তমানবতার সেবায় হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। ভাবনা চিন্তা বা পরিকল্পনার কিছু নেই। সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে, মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতে হবে। অনেক সুন্দর ও সুস্থ একটি পৃথিবী আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এটার কোনো দিনক্ষণ ঠিক নেই। সেই সুন্দর দিনের প্রত্যাশায় আমাদের সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।