সেই প্রবাসী নারীর কাছে ক্ষমা চাইলেন সিলেট বিমানবন্দরের প্রতিনিধি দল
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা এখন ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’।
গত ২৮ জুলাই সিলেট থেকে লন্ডন সরাসরি ফ্লাটের বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০১ এর যাত্রী ছিলেন ভুক্তভোগী প্রবাসী জামিলা চৌধুরী। কিন্তু তিনি ওইদিন যুক্তরাজ্য যেতে পারেননি ওসমানী বিমানবন্দরের কতিপয় কর্মকর্তার অসৌজন্যমূলক ও অন্যায় আচরণের জন্য।
তবে এ ঘটনার ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে তখন টনক নড়ে ওসমানী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। শুক্রবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় জামিলা চৌধুরীর বাসায় যান একটি প্রতিনিধি দল। বাসায় গিয়ে তাকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সান্তনা দেন এবং আগামী ৪ আগস্ট যুক্তরাজ্য যাওয়ার জন্য টিকেটের ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। সেই সঙ্গে তদন্তসাপেক্ষে দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেয় প্রতিনিধি দল।
জানা যায়, বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে লন্ডনে সন্তানদের রেখে দেশে এসেছিলেন জামিলা চৌধুরী। গত বুধবার বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০১ এ তার যুক্তরাজ্য ফেরার কথা। সেখানে কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেলও বুকিং করা ছিল। ২৮ জুলাই (বুধবার) জামিলা চৌধুরী নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ বিমানের কাউন্টারে পৌঁছালে দায়িত্বরত কর্মকর্তা তার কাছে লোকেটর ফর্ম চান। তখন নিজ মোবাইলে লোকেটর ফর্মটি দেখালেও প্রিন্ট কপি চান এক কর্মকর্তা। এখান থেকেই মূলত ঘটনার শুরু। জামিলা চৌধুরীর ভাষ্যমতে- বারকোডযুক্ত লোকেটর ফর্মের প্রিন্ট কপি বাধ্যতামূলক হতে পারে না যেখানে সবকিছুই বর্তমানে ডিজিটালি চলছে। তবে বিমান কর্মকর্তা সেটি মানেননি। খানিকক্ষণ বাক-বিতন্ডার পর জামিলা চৌধুরী বিমানবন্দরের নির্ধারিত কাউন্টারে লোকেটর ফর্ম প্রিন্ট করার জন্য যান। কিন্তু সেখানে দীর্ঘ লাইন থাকায় তা প্রিন্ট করাতে পারেন নি। এখানে দুই দফায় বেশ খানিকটা সময় চলে যায় বলে জানান জামিলা চৌধুরী।
জামিলা চৌধুরী বলেন, ‘এরপর আমার লাগেজে অতিরিক্ত মালামালের কারণে আমার কাছে অনৈতিকভাবে টাকা দাবি করেন সেই কর্মকর্তা। আমি তা দিতে অপারগতা জানাই এবং বলি অতিরিক্ত ওজনের লাগেজ ফিরিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র একটি লাগেজ নিয়ে আমাকে বোর্ডিং পাস দেবার জন্য। কিন্তু সেই কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে আমার উপর পাসপোর্ট ছুঁড়ে মারেন এবং অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। আমাকে বোর্ডিং পাস না দিয়েই লাইন থেকে বের করে দেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি উপস্থিত অন্যন্য কর্মকর্তাকেও অনেক অনুরোধ করি, কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্য করেনি।’ এসময় জামিলা চৌধুরী বিমানবন্দরে নিজের অভিযোগ জানাতে চাইলেও তার অভিযোগ কেউ গ্রহণ করেনি।
বিমানবন্দরে থাকা অবস্থায় নিজের মোবাইলে কয়েকটি ভিডিও করেন মিসেস চৌধুরী। একটি ভিডিওতে দেখা যায় কর্তব্যরত বিমান কর্মকর্তা বলছেন ‘আমাদের মধ্যে হিউমিনিটি (মানবতাবোধ) নেই। আপনি ম্যানেজারের কাছে যান, আমরা আপনাকে কোনো সাহায্য করতে পারবো না।’ আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়- সাহায্য চাইতে গেলে এক কর্মকর্তা লাগেজ বেল্টের উপর দিয়ে লাফিয়ে পালাচ্ছেন।
তবে বিমান কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ফ্লাইট ধরতে না পারার কারণ হিসেবে বলছেন- অতিরিক্ত ওজনের লাগেজের কথা।
সিলেট বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার চৌধুরী মো. ওমর হায়াত বলেন, ওই যাত্রীর সাথে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ৪৪ কেজি মালামাল বেশি ছিল। প্রতি কেজি ২ হাজার ৬১১ টাকা হিসেবে এক লাখ টাকার উপরে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু তিনি প্রথমে ওভার ওয়েটের মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হননি। পরে যখন তিনি অতিরিক্ত লাগেজ ছেড়ে যেতে রাজি হন তখন কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে।
বিমান বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রতি কেজি অতিরিক্ত ওজনের জন্য ১০ পাউন্ড ফি উল্লেখ থাকার কথা বললে তিনি বলেন, ‘ওয়েবসাইটে কি আছে জানি না, তবে আমাদের এটাই ধার্য্য করা আছে এবং তা নিয়মমাফিকই নেয়া হচ্ছে।’
ওমর হায়াত আরো বলেন, নির্ধারিত সময়ের একঘন্টা আগে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের কাউন্টার বন্ধ করতে হয়। কিন্তু ওই যাত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার লাগেজের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তাই তাকে রেখেই বিমান ছাড়তে হয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় জামিলা চৌধুরীর বাসায় সিলেট বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার চৌধুরী মো. ওমর হায়াতের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল উপস্থিত হন। বাসায় পৌঁছে তারা জামিলাকে সান্তনা দেন এবং আন্তরিকভাবে দু:খ প্রকাশ করেন। এসময় তারা আগামী ৪ আগস্ট জামিলাকে যুক্তরাজ্য যাওয়ার টিকেট কনফার্ম করেন এবং সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এছাড়াও তদন্তসাপেক্ষে ওই দিনের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার আশ্বাসও দেন তারা।