স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিং করলে সবাই ফিরবেন
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্ক:
টেলিভিশন নাটক ও সিনেমায় যাঁরা মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন, তাঁদের আমরা নায়ক বলে ডাকি। এই নায়কেরা কেবল পর্দার নায়ক নন, ব্যক্তিজীবনে তাঁদের নানা ভূমিকা নানা সময় মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। করোনাকালেও তাঁদের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবীদের মতো তাঁরাও এই করোনার সম্মুখযোদ্ধা হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু তাঁদের নিরাপত্তা কি দেওয়া হচ্ছে ঠিকমতো? বেশির ভাগ শিল্পী জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমতো মেনে করলে তাঁরা শুটিংয়ে ফিরবেন।
ঘরবন্দী মানুষকে ঘরে ভালো রাখতে দরকার টেলিভিশনে কিছু নতুন অনুষ্ঠান। এ ছাড়া পূর্ণোদ্যমে শুটিং শুরু করলে নিশ্চিত হবে মেকআপশিল্পী, লাইট, প্রযোজনা সহকারীদের মতো কর্মীদের রুটিরুজি। এসব বিবেচনায় শিল্পীদের আর ঘরে বসে থাকা ঠিক হচ্ছে না বলে মনে করেন অনেকে। যাঁদের ছাড়া টিভি নাটক প্রায় অচল, অভিনয়ের জন্য যাঁরা নেন সর্বোচ্চ সম্মানী, এই সময়ে কেন তাঁরা ঘরে বসে আছেন? ইতিমধ্যে চাহিদাসম্পন্ন একদল অভিনয়শিল্পীকে চিঠি দিয়ে কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে একটি টিভি চ্যানেল। সেই তালিকায় আছেন মোশাররফ করিম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, চঞ্চল চৌধুরী, অপূর্ব, আফরান নিশো, তাহসান খান, মেহ্জাবীন চৌধুরী, তৌসিফ মাহবুব, তানজিন তিসা, সাফা কবির প্রমুখ। কাজে ফেরার ব্যাপারে কী ভাবছেন তাঁরা?
নুসরাত ইমরোজ তিশা জানান, পরিবার ও শুটিং ইউনিটের সবার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই শুটিংয়ে যাচ্ছেন না তিনি। তবে বেশি দিন ঘরে আটকে থাকতে চান না। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে যদি শুটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে শুটিংয়ে ফিরবেন তিনি। তিনি বলেন, ‘একজন শিল্পী হিসেবে কাজ না করে ঘরে বসে থাকাটা আমার জন্য কষ্টকর। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিংয়ের আয়োজন করলে হয়তো অল্প কিছু কাজ করতে পারব। অনেক নির্মাতাই নিশ্চিত করছেন যে তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিং করবেন। কিন্তু বাস্তবতাও পর্যবেক্ষণ করতে চাই।’
সাফা কবির বলেন, ‘আমার নিজের জন্যই শুটিংয়ে যাওয়া জরুরি। তবে শুটিং শুরু করা কয়েক সহকর্মীর কাছ থেকে জেনেছি, প্রোডাকশন ইউনিটগুলো এখনো যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে পারেনি। অনেকের কথা জানি, তাঁরা শুটিংয়ে যাচ্ছেন বলে আলাদা বাড়িতে থাকছেন। আমার সেই সুযোগ নেই। আমার বাসায় মা আছেন, যথেষ্ট বয়স ওনার। বাইরে গিয়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আসা কোনো কাজের কথা নয়।’ সাফা মনে করেন, ইউনিটে বাইরের লোককে ঢুকতে না দেওয়া, বাড়ি থেকে আনা খাবার খাওয়া, শিল্পীদের জন্য সার্বক্ষণিক একজন স্প্রে-বয় রাখলে তিনি শুটিংয়ে যাওয়ার চিন্তা করবেন।
সম্প্রতি শুটিং শুরু করা পরিচালক আদিবাসী মিজান জানান, শুটিং হাউসে ঘর কম থাকায় দূরে অবকাশযাপন কেন্দ্র ভাড়া নিয়ে শুটিং করছেন তিনি। সেখানে হাত ধোয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থাসহ নানা রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার ইউনিট খুবই ছোট। শুটিংয়ে আমরা একসঙ্গে খেতেও বসি না। তাতে অবশ্য সময় বেশি ব্যয় হয়। তবু সাধ্যমতো সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েই আমরা শুটিং করছি।’
আরটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান দেওয়ান শামসুর রকিব বলেন, ‘আমরা সব শিল্পীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছি। জাহিদ হাসানসহ অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছেন। যিনি কনফিডেনস পাবেন, তিনি কাজ করবেন, না পেলে করবেন না। এ নিয়ে জোর করার কিছু নেই।’
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে সতর্কতার সঙ্গে শুটিং শুরু হয়েছে ভারতে। হলিউডেও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে কাজ। সেখানকার কর্মজীবীদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড অব আমেরিকা, এসএজি-এএফটিআরএ, আইএটিএসই ও দ্য টিমস্টার যৌথভাবে ‘দ্য সেফ ওয়ে ফরওয়ার্ড’ নামে একটি শুটিং নীতিমালা তৈরি করেছে। সেখানে ঘেরাটোপে শুটিং করা, শুটিংয়ের সর্বোচ্চ সময় ১০ ঘণ্টা নির্ধারণ, সেটে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, দুটি জোনে ভাগ হয়ে সামাজিক দূরত্ব রাখা, সুরক্ষাসামগ্রী পরা, ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের ক্ষেত্রে মোটা কাচ ব্যবহারসহ নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেখানে।