১৯৬২ সালের বকেয়া বেতন পরিশোধ প্রাক্তন স্কুলছাত্রের
১৯৬২ সালে তরুণ সোহরাব হোসেন ফুলহরি হাইস্কুলে ছয় মাস পড়াশোনা করেছিলেন; ওই সময় প্রতি মাসে ৪ টাকা হিসাবে তার ২৪ টাকা বকেয়া ছিল।
দীর্ঘ ৬১ বছর পর বিদ্যালয়ের মাসিক বেতনের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ ওই স্কুলের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সোহরাব হোসেন বিশ্বাস গত সোমবার বিদ্যালয়ে হাজির হয়ে এই টাকা পরিশোধ করেন।
বিদ্যালয়টির বর্তমান প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মণ প্রসাদ সাহা জানান, ৮০ বছর বয়সি সোহরাব হোসেনের কাছে বকেয়া বেতন হিসাবে বিদ্যালয়টির পাওনা ছিল ২৪ টাকা। ৬১ বছর পর তিনি পরিশোধ করেন ৩০০ টাকা।
প্রধান শিক্ষক বলেন, “ওই দিন আমি স্কুলে ছিলাম না। উপস্থিত অন্য শিক্ষকদের কাছে শুনেছি, সোমবার দুপুরের দিকে একজন বয়ষ্ক ব্যক্তি স্কুলে উপস্থিত হয়ে নিজেকে প্রাক্তন ছাত্র পরিচয় দেন। তারপর তার অভিপ্রায়ের কথা বলেন। অফিস রুমে গিয়ে ৩০০ টাকা জমা দেন।”
বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী হাদিকুর রহমান বলেন, “সোহরাব হোসেনের কথায় আমরা সবাই বিস্মিত হয়ে যাই! পরে তার ইচ্ছামতো ৩০০ টাকা জমা নিই।”
সোবরাব হোসেন বিশ্বাস জানান, ১৯৬২ সালে তার বয়স ছিল ১৯ বছর। সবে বিয়ে করেছেন। ইচ্ছে হলো পড়াশোনা করার। এর আগে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছিলেন। তখন বাড়ির কাছে হাইস্কুল ছিল না। ৫/৬ মাইল দূরের ফুলহরি হাইস্কুলে গিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। তখন ষষ্ঠ শ্রেণির মাসিক বেতন ছিল ৪ টাকা। তিনি ৬ মাস ওই বিদ্যালয়ে পড়েন। অর্থাভাবে এর মধ্যে চার মাসের বেতন বাকি পড়ে যায়। বেতন বাকির জন্য পরীক্ষা দিতে পারেননি। পড়াশোনা ছেড়ে তামাক-সুপারির ব্যবসা শুরু করেন।
ওই বৃদ্ধ আরও জানান, এখন তার বয়স ৮০ বছর। জীবন সায়হ্নে তার ইচ্ছা মৃত্যুর আগে সব ধার-দেনা পরিশোধ করবেন। সবার বকেয়াই পরিশোধ করেছেন। এক পর্যায়ে তার মনে পড়ে, ফুলহরি হাইস্কুলের তার চার মাসের ২৪ টাকা বেতন বকেয়া ছিল।
তার ভাষ্য, ৬১ বছর পর বকেয়া ২৪ টাকা জায়গায় ৩০০ টাকা পরিশোধ করে দেনামুক্ত হয়েছেন।