আফগানিস্তানে বোরকা ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো; দাম বেড়েছে কয়েক গুণ
বিয়ানীবাজারের ডাক ডেস্কঃ
আফগানিস্তানে ক্ষমতায় বসেছে তালেবান। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলছে তাদের এই উত্থান। ক্ষমতায় বসার সঙ্গে সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের প্রতিশ্রুতি দিলেও কয়েক যুগ আগে তালেবান শাসনের সময়টা ভুলতে পারছে না মানুষ। ইসলামি শাসনের নামে কঠোর আইনে দেশ পরিচালনা করেছিল তারা।
গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবানের কাবুল অভিযানের খবরেই বেড়ে গেছে বোরকা বিক্রি। কারণ, আগের তালেবান শাসনের সময় বোরকা পরা ছিল বাধ্যতামূলক। ২০০১ সালে মার্কিন অভিযানে তালেবান সরকারের পতন হয়। এরপর আফগান নারীদের বাধ্যতামূলক বোরকা পরার বিষয়টি উঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত কারণে অনেকেই বোরকা পরতেন। আবার যাঁরা চাইতেন, তাঁরা আধুনিক ও নিজের পছন্দের পোশাক পরতে পারতেন।
তবে আবার তালেবানের হাতে গেছে ক্ষমতা। আফগানিস্তান তালেবানদের দখলে যাওয়ায় অবধারিতভাবে নারীদের স্বাধীনতা হরণ হবে। আফগান নারীরা তা জানেন। আর জানেন বলেই কাবুল হু হু করে বেড়েছে বোরকার ব্যবসা। দোকানিরা দ্য গার্ডিয়ানকে জানান, এত দিন রাজধানীর আশপাশের নারীরা দলে দলে বোরকা কিনেছেন। এখন কাবুলের নারীরা বোরকা কিনছেন।
ক্রেতারা জানাচ্ছেন, যে বোরকা কিছুদিন আগেও ২০০ আফগানি মুদ্রায় বিক্রি হচ্ছিল, তা এখন ২ থেকে ৩ হাজার আফগান মুদ্রায় বিক্রি হচ্ছে।
আয়লা নামের এক নারী জানান, কাবুলে নারীদের মধ্যে ভয় যেমন বেড়েছে, রোবকার দামও তেমন বেড়েছে।
মরিয়ম নামের এক নারী জানান, তাঁর স্বামী তাঁকে বোরকা নিতে বাধ্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখন যে ধরনের পোশাক পরি, তা পরিবর্তন করতে বলেছেন আমার স্বামী। বোরকা পরা শুরু করতে বলেছেন, যাতে আমি বাইরে থাকলে তালেবান আমার প্রতি মনোযোগ না দেয়।’
নীল রঙের বোরকা দিয়ে বিশ্বে আফগান নারীদের চিহ্নিত করা হয়। কিছুটা ভারী কাপড়ে তৈরি এই বোরকা মাথা থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে। চোখের সামনে থাকে নেটের কাপড়। এখন আফগানিস্তানে বোরকার বিক্রি এতটা বেড়ে গেছে যে দোকানে যেভাবে সারি সারি বোরকা ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, সেখানে ভারী পর্দা লাগানো হয়েছে।
১৯৯৬ সালে প্রেসিডেন্ট বুরহানুদ্দিন রব্বানির সরকারকে উৎখাত করে রাজধানী কাবুল দখল করে তালেবান। ক্ষমতায় আসার পর কঠোর ইসলামি শরিয়া আইনের প্রবর্তন করে তারা। ১৯৯৮ সালের মধ্যে আফগানিস্তানের ৯০ শতাংশ এলাকা তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তালেবানের শাসনে দেশটির সাধারণ মানুষের জীবন অনেকটা সংকুচিত হয়ে পড়ে। দিন দিন নতুন নতুন বিধিনিষেধ যুক্ত হতে থাকে। মুসলিম পুরুষদের দাড়ি রাখা এবং নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। টেলিভিশন দেখা, গান শোনা ও সিনেমা দেখা নিষিদ্ধ হয়। ১০ বছর বয়সী মেয়েদের পড়ালেখা নিষিদ্ধ করে তালেবান সরকার। তালেবানের শাসনামলে অনেক নারীকে বাইরে বের হওয়া ও বোরকা না পরার জন্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, এমন অভিযোগও রয়েছে। আবার নতুন করে তালেবান সরকার ক্ষমতায় এল। এ অবস্থায় অতীতের সেই ভীতি তাড়া করছে নারীদের মনে।