আবারও শ্রমিকদের লন্ডনে আসার সুযোগ প্রসারিত হচ্ছে

মুকিত মুহাম্মদঃ

ব্রিটেনের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকার বিশ্ব থেকে সবচেয়ে দক্ষ এবং যোগ্য অভিবাসীদেরকে আকর্ষণ করতে চায়। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদরা, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাদের জন্য যুক্তরাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক সুবিধা প্রদান করছে সরকার।

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা কর্মীদের এখানে আসা সহজতর করার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পও চালু করছে। মিস প্যাটেল বলেন, নতুন আইন করোনভাইরাস সঙ্কটের সময়ে চাকরি হারিয়েছে এমন লোকদের আবারও কাজে আনতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, মহামারী থেকে দেশটি মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে সরকার তার নিজস্ব অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে সক্ষম হবে।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন,নতুন পয়েন্ট-ভিত্তিক সিস্টেমটি ইইউ ছাড়ার “অন্যতম সুবিধা”বলে সরকার মনে করে।দক্ষতা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্বের যে কোন দেশ থেকে ব্রিটেনে আসার সুযোগ প্রসারিত করা হচ্ছে,”।

বেশ কয়েকটি সেক্টরে ব্রিটেনে বিদেশী শ্রমিকরা বেশী কাজ করে থাকেন এর মধ্যে কৃষি বা এগ্রিকালচার, নির্মান শ্রমিক, হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট শ্রমিক বেশী প্রাধান্য পেয়ে থাকে।

১০ টি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমজীবী সেক্টর:-

 ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমজীবী সেক্টর:-
সুপার মার্কেটে
হাসপাতালে বা স্বাস্হ্য সেবায়
চ্যারিটি ওয়ার্কার
জেনারেল এডুকেশন স্কুল শিক্ষক সহ স্কুলে অন্যান্য শ্রমিক।
টেমপোরারি বা পার্টটাইম শ্রমিক
সেল্স এ্যান্ড মার্কেটিং
নির্মান ও কৃষি শ্রমিক
হোটেল ও রেস্টুরেন্ট
ম্যানেজমেন্ট এবং কন্সালটেশন ও
ইউনিভার্সিটি শিক্ষকতা

সহ অন্যন্য কাজের জন্য প্রশিক্ষন প্রাপ্ত শ্রমিক বা দক্ষ লোকরাই আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী অতি সহজে ব্রিটেনে আসতে পারবেন।

সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প দক্ষ বা লো-স্কিল মাইগ্রেশন রুধে নিয়োগকর্তারা হুঁশিয়ারি করে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, বিদেশী শ্রমিকদেরকে জন্য নূন্যতম মজুরির দ্বারা বা তার কাছাকাছি বেতনে নিয়োগ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।যোগ্য শ্রমিকের নির্ধারিত বেতন দেওয়া হবে।

নিয়োগকর্তাদেরকে যুক্তরাজ্যের কর্মীদের, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সঙ্কটে আক্রান্তদের প্রশিক্ষণ এবং বিনিয়োগের দিকে মনোনিবেশ করার জন্যউৎসাহিত করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছিলেন: “আমাদের নতুন ইমিগ্রেশন সিস্টেমটি আমাদের অর্থনীতি বৃদ্ধিতে, ব্যবসার উন্নয়নে সহায়তা এবং কর্মীদেরকে কাজে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কৌশলগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হবে।”

ইউরোপ থেকে আসা ‘সস্তা শ্রমিক’ এর ওপর নির্ভর না করে কর্মী ধরে রাখা এবং অটোমেশন প্রযুক্তি উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র অধিদপ্তর জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও এর বাইরের যেসব নাগরিক যুক্তরাজ্যে আসতে চায়, তাদের ৩১শে ডিসেম্বর ইউকে-ইইউ ফ্রি মুভমেন্ট বন্ধ হওয়ার পর থেকে একই মাপকাঠিতে যাচাই করা হচ্ছে।এখন সারা বিশ্বের সকল শ্রমিকই সমান তবে যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিতি প্যাটেল বলেছেন যে এই নতুন ব্যবস্থার কারণে “সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও শ্রেষ্ঠরাই যুক্তরাজ্যে আসার সুযোগ পাবেন।অদক্ষ এবং অল্প দক্ষ শ্রমিকদের চেয়ে দক্ষ শ্রমিক আনার পক্ষে সরকার।

সরকার বলছে তারা সার্বিকভাবে যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের আগমন কমানোর চেষ্টা করছে। পয়েন্টভিত্তিক’ অভিবাসন ব্যবস্থা তৈরি করতে সরকার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

যেসব বিদেশী কর্মী যুক্তরাজ্যে আসতে চায় তাদের ইংরেজি বলতে পারতে হবে এবং ‘অনুমোদিত স্পন্সরের’ অধীনে দক্ষতা সম্পন্ন কোনো চাকরিতে নিয়োগ পেতে হবে। তা নিশ্চিত করতে পারলে তারা ৫০ পয়েন্ট পাবে।

ভিসায় আসতে হলে ৭০ পয়েন্ট অর্জন করতে হবে।
৭০ পয়েন্ট যেভাবে পয়েন্ট গুলি পাবেন।-
যেমন:
১/ ৫০ পয়েন্ট,স্পন্সর প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তি পত্র বা কাজের নিস্চয়তা বা আমন্ত্রণ পত্র।

২/ ১০ পয়েন্ট পাবেন যোগ্যতা সক্ষমতার সার্টিফিকেট।

৩/ ১০ পয়েন্ট পাবেন ইংরেজী টেস্ট পাশ করে।

যুক্তরাজ্যে কাজ করার অনুমতি পেতে হলে সব মিলিয়ে অভিবাসীদের ৭০ পয়েন্ট নিশ্চিত করতে হবে, যার মধ্যে যোগ্যতা, বেতন ও যেই খাতে কর্মীর অভাব রয়েছে এমন কোনো খাতে কাজ করলেও পয়েন্ট পাওয়া যাবে।

ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাধাহীন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টির সাথে ‘খাপ খাইয়ে ও সমন্বয়’ করে নেয়।

নিয়োগ কর্তারা যুক্তরাজ্যের অভিবাসন পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল না থেকে যেন কর্মী ধরে রাখা, উৎপাদনশীলতা ও প্রযুক্তির উন্নয়নে বিনিয়োগ করে তা গুরুত্বপূর্ন করে তুলে।

সরকার মনে করে নতুন কর্মী না বাড়িয়ে যেই ৩২ লাখ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নাগরিক যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি চেয়েছে তাদের দিয়ে শ্রমজাবারের চাহিদা মেটানো যেতে পারে।

পাশাপাশি, কৃষিখাতে মৌসুমি শ্রমিক আসার অনুমোদিত পরিমাণ চারগুণ পরিমানে বাড়িয়ে ১০ হাজার করতে যাচ্ছে সরকার।

এছাড়া ‘ইয়ুথ মোবিলিটি অ্যাগ্রিমেন্ট’ এর অধীনে প্রতিবছর ২০ হাজার তরুণ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।

ব্রেক্সিট–পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবেব্রিটেন সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ অনেক শিথিল করেছে। প্রতিবছর ছয় লাখ শিক্ষার্থী সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এ মুহূর্তে কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করেনি সরকার। সে জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রিটেনের দরজা আপাতত অবারিত।

গত বছরের অক্টোবর থেকেই ব্রিটেন স্টুডেন্ট আসার প্রকৃয়া শুরু হয়েছে। এবছরেও ব্যাপকতার বেড়েছে। করোনাভাইরস মহামারিতে কিছুটা বাঁধা গ্রস্থ্য হলেও আবার ব্যাপকতা বাড়বে।

ব্রিটেনে বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ এবং যোগ্যতাসম্পূর্ন শ্রমিকদের বেশী অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এখন সারা বিশ্ব থেকেই যে যে বিষয়ে দক্ষ সেই সেক্টরে আবেদন করে অতি সহজেই ব্রিটেন আসতে পারেন। ব্রিটেনে দাঁড় সবার জন্য উন্মুক্ত।

শেয়ার করুন

One thought on “আবারও শ্রমিকদের লন্ডনে আসার সুযোগ প্রসারিত হচ্ছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *