করোনায় অস্বাভাবিক বিয়ানীবাজার!
শরিফুল হক মনজুঃ
সাংবাদিক বন্ধু হাসানুল হক উজ্জল ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে না চেয়ে বিয়ানীবাজারে শক্ত লকডাউন নিশ্চিত করুন। আরো একজন সহযোদ্ধা সাংবাদিক মুকিত মুহাম্মদ স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতার প্রশ্ন তুলে ফেসবুকে লিখেছেন, বিয়ানীবাজারে যখন কারো করোনা ছিলোনা তখন সবকিছু বন্ধ ছিল। এখন আক্রান্ত ৮৩ জন কিন্তু সবই খোলা! বলুনতো কারনটা কি? মাঠের সাংবাদিক হিসেবে তাদের পর্যবেক্ষণ সঠিক। কোমল হৃদয়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তারা করোনার হিংস্র থাবায় অস্বাভাবিক মরণ যন্ত্রণার আর্তনাদ অনুধাবন করেতে পেরেছেন। তাই অগণিত মানুষের জীবন রক্ষায়, করোনা মহামারির করুণ সংক্রমন থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখার কথাই অকপটে বলেছেন। মানুষ বাঁচানোর তাগিদ দিয়ে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করেছেন। কারণ, এখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করণীয় নির্দেশনা ও সরকারের স্বাস্থ্যবিধি সঠিক ভাবে অনুসরণ বা প্রতিপালিত হচ্ছেনা। তারা বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করতে পেরে, জাতির বিবেক হিসেবে বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্যের সাথে আমিও ব্যক্তিগত ভাবে একমত পোষন করে, করোনা ক্রন্তিকালের চলমান সঙ্কট ও কিছু ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে।
যিনি নিজের সন্তান সংসারের ক্ষেত্রে চরমভাবে উদাসীন কিনা জানিনা। তবে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি ও আইন না মেনে নিজের সন্তানকে যিনি বিপদের মুখে ঠেলে দিতে দ্বিধা করেন না। অভিভাবক হিসেবে খামখেয়ালিপনায় শিশু সন্তান যেখানে করোনাক্রান্ত হয়, সেখানে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠতেই পারে তারা কতটুকু দায়িত্বশীল। কতোটা স্বাস্থ্য সচেতন যত্নবান পরিবার। এমন কর্মকর্তার কাছে অন্তত এখানকার মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির নিরাপত্তা অাশা করতে পারেন না। এই কারণে হয়তো, সরকারের দিকে না চেয়ে শক্তহাতে লকডাউনের দাবী তোলতে সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন সাংবাদিক হাসানুল হক উজ্জল। স্বাস্থ্য বিধি লঙ্গন নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাকে ঘিরে বাজারে অনেক গুঞ্জন রয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতন পর্যবেক্ষক মহলের অভিযোগ, কর্মকর্তা কর্মচারীরা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্গন করাতে, সাধারণ মানুষও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্গনে উৎসাহিত হয়েছেন। এই ক্ষোভ থেকে সাংবাদিক মুকিত মোহাম্মদ এর প্রশ্ন তোলাটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, যখন করোনা ছিলোনা, বিয়ানীবাজার এর প্রশাসন তখন শক্তহাতে সবকিছু বন্ধ করে দেয়। তবুও মানুষ প্রশাসনের ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে হাঁসিমুখে মেনে নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছে। কিন্তু যখন আক্রান্ত তিরাশিজন। এখন সবকিছু খোলা! কি আশ্চর্য! প্রশাসনিক এমন উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা ও সমন্বয়হীনতা তিন লাখ মানুষের জীবনকে অদৃশ্য ঘাতক করোনা সংক্রামনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। করোনা বিশ্বে বিয়ানীবাজার যেনো ব্যতিক্রমী বিস্ময় কিনা।
করোনা ক্রান্তিকালে সচেতন মহল, বিবেকবান দায়িত্ববোধসম্পন্ন নানান মানুষের পক্ষথেকে এমন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমন কথা ও প্রশ্নের যুক্তি উত্তর আছে। প্রশাসন কার বা কাদের স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধির প্রয়োগ করছেনা। কেনো মানুষের জীবনকে করোনা সংক্রামন সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। মানুষের জীবনকে মুত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার অধিকার রাষ্ট্র প্রশাসন বা সরকার কারো নেই। তবে কেনো এতো খামখেয়ালিপনা? মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে পেশাদারিত্ব ও মানবিক হৃদয় নিয়ে, দক্ষতার সাথে সঙ্কট মোকাবেলায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। মানুষকে বাঁচাতে সাহায্য করুন। স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারের নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে, স্বাস্থ্যবিধির কঠোর প্রয়োগ। প্রশাসনের দায়িত্বশীল কার্যকর আইনের প্রয়োগই- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিধান নিশ্চিত করতে পারে। অযোগ্য নেতৃত্ব ও সুবিধাবাদীদের কথা না শুনে সাধারণ মানুষের বিবেকের অার্তনাদ শুনুন। মানুষ এখন স্বাস্থ্যবিধির প্রয়োগ চায়। চায় কঠোর লকডাউন।
করোনা ছড়িয়ে পড়ার অাশঙ্কার প্রথম ধাপে প্রবাসীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা যেভাবে খবরদারি, বাড়াবাড়ি ও প্রশাসনিক দৌরাত্ম্যের কঠোরতা দেখিয়ে ছিলেন। মারাত্মক মহামারির দিকে দেশ যখন গভীর সঙ্কটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ঠিক সেই সময় এই জনপদের উপজেলা সদর ও পৌরশহরে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্গনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। লকডাউন অাংশিক শীতিল করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মানার ক্ষেত্রে সরকার কোন আদেশ জারী করেনি। যেহেতু এক জেলা থেকে আরেক জেলা, এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় যাতায়াত ও সকল গণ পরিবহণ চলাচলের ওপর সরকারি আদেশ জারী রয়েছে। সরকার মার্কেট খোলার অমুমতি দিয়ে, ঈদ কালে বিকল্প পন্থায় কৌশলে মার্কেট, শপিংমল গুলো বন্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছে।
বাস্তবতার নিরিখে সমাজ ও স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির পর্যবেক্ষনে বলছে স্থানীয় প্রশাসনের খামখেয়ালিপনা, গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতা গোটা উপজেলাকে করোনা ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ত্রান, সাহায্য সহায়তা ও উপহার বিতরনকালে, প্রদানকারিরা করোনা মহামারী স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বেমালুম লঙ্গন করে চলছেন। যে কারণে সাহায্য করছেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে মানবিক সাহায্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। নিজেদের অসচেতনতা ও বেগাফিল গাফিলতির কারনে মহৎ উদ্দেশ্যটিই এখন ব্যাহত হচ্ছে। বরং করোনা মহামারী মানুষের মধ্যে আরো সংক্রামিত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরীর সুযোগ করে দিচ্ছেন। অথচ সমগ্র বাংলাদেশকে করোনা সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সামাজিক মাধ্যমের ওপর গভীর পর্যবেক্ষণ ও নানান মহলের সমালোচনা, বিভিন্ন স্থিরচিত্র, ভিডিও চিত্রে বর্তমান অসঙ্গতির অনেক কিছুই দৃশ্যামন ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। যা শাক দিয়ে লুকানোর কোন সুযোগ নেই। রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক অহর্নিশ গলাগলি জড়াজড়িতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম পালনের কোন তোয়াক্কা নেই। যেখানে ত্রান বিতরন সাহায্য কার্যক্রম হচ্ছে সেখানেই সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে গা ঘেঁষে অনেক রাজনৈতিক সামাজিক কার্যক্রম চলতে দেখা গেছে।
উপজেলা সদরে, প্রতিনিয়ত কারণে, অকারণে অকাজে অজস্র মানুষের অাসা- যাওয়া, ছুটাছুটি ও লোকসমাগম ঠেকাতে প্রশাসনের আরো কঠোর নজরদারী যেখানে বাড়ানো দরকার ছিলো। তার পরিবর্তে এখানে তার উল্টোটা ঘটেছে! ব্যবসায়ীমহল চারটি মার্কেট মে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের ঢিলেঢালা কর্মকাণ্ড উপজেলা সদরে ঢালাও জনসমাগম বা লোকসমাগম নিরোধ করতে না পারায় ব্যবসায়ীমহল ঘোষনার নির্দৃষ্ট সময়ের আগে দোকানপাট ও মার্কেটগুলো খুলেছেন। অনেকে বলছেন, প্রশাসন যদি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা লোকসমাগম ঠেকাতে উপজেলা সদরে কঠোর প্দক্ষেপ গ্রহন করতেন। তখন হয়তো ব্যবসায়ীরা দোকানপাট, মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ রাখতেন। মার্কেট খোলার অস্বাভাবিক যুক্তি দেখিয়ে ব্যবসায়ীমহল বলছেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁরা মার্কেট বন্ধ রেখেছিলেন সেই উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়েছে। লোকজন অবাদে শহরে আসছেন। লোকসমাগম হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব কেউ যখন মানছেন না। তখন দোকানপাট বন্ধ রেখে লাভ কি?
লেখক: সাংবাদিক ও সমাজ অনুশীলক।